শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪
প্রেমের জ্বালা (ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে লোকগল্প)- ড. মোঃ জাহিদুজ্জামান
Home Page » এক্সক্লুসিভ » প্রেমের জ্বালা (ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে লোকগল্প)- ড. মোঃ জাহিদুজ্জামানপ্রেমের টানে টানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সেকালেও যেমন ছিল একালেও তার খুব বেশী ব্যাতিক্রম হয়নি। পিটুইটারী গ্রন্থীর তাড়নায় অনেক যুবক-যুবতীরা বয়:সন্ধিকালে এ ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকে। প্রেমের উত্তাল সাগরে তখন তারা হয়ে পড়ে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়া উইপোকার মত। এমনি একটি প্রেমের গল্প ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার নাগিরহাট গ্রামের কানাইলালের কাছ থেকে সংগৃহীত হয়েছে। গল্প কথকের ভাষায় গল্পটি ছিল নিম্নরূপ :
এক ছাওয়াল অনেক দিনতে এক মিয়ার সাথে পেম বাদাইছে। দুইজনেই দুইজনের জন্যি পাগোল। কিন্তু ঝামেলা হলো, তারা কবে পড়ালেখা শ্যাষ করবি. আর কবে বিয়ে করবি? ছাওয়াল পড়ে টেনে, আর মিয়া এ-ই-টি। ছাওয়ালের বাপ যে রাগি মানুষ, কষ্যিণকালেও এ মিয়ার সাথে বিয়ে দিবিনেনে। এর কারণ এট্টাই, মিয়ার বাপ খুবই গরীব; তারপর আবার গুষ্টিও কুমা। কিন্তু বিয়েতো ছাওয়ালের হেনেই করতি হবি। কারণ সে যে পেম করা করেছে তাতে বিয়ে না করে উপায় নেই। মিয়াডাও সেদিন ভয় দ্যাখাইছেÑ তুমি বিয়ে না করলি আমি কিন্তু গলায় দড়ি নেব- আর নায় বিশ খায়ে মরব। দুই জনই দুই জনের জন্যি পাগল। মাঝখানে ভয় শুধু বাপের বলে। কিন্তু পুরুষ মানষির অত ভয় করলি¬ কি আর চলে?
একদিন মিয়াডা বলেই ফেললো,¬ তুমি ক্যামন ধারা পুরুষ; বাপের দেখে ভয় করবাতে আগেত্তে মনে ছিলো না। তোমার মত পুরুষ মানুষগেরে কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি নিয়ে মরা উচিত।
পুরুষ মানষির আর যায় হোক মিয়া মানষির অপমান সহ্য হয় না। ইডা মনে হয় পুরুষগেরই ধারা। তাইতো ছাওয়ালডা ফাল দিয়ে উঠে কলো চল্ কোন কথা নেই, আজ, এখনি তোর বিয়ে করব।
মিয়াডাও দেখলো এই সুযোগ যায়। আর এখোন এই বীরির বাচ্চা বীরির কথায় রাজী না হোলিতো কপালেও কষ্ট আছে। তাইতো মিয়াও রাজী, এখোন কিয়া করে কাজী। এখোন মেজাজ তাদের ফুরফুরে, তাপমাত্রা একশো ডিগ্রীরও উপরে।
দুই জনই মার মার শব্দে কাজী অফিসের দিকে রওনা হয়ে গেল। দুই জনেরই একই কথা বাড়িত্তে খ্যাদা দ্যায় দিবি-দরকার হয় গাছতলায় থাকপো। তাই বলে পেম তো মরতি দিয়া যায় না। এই পেমের জন্যি যদি লাইলি-মজনু মরতি পারলো, তো আমরা পারবো না ক্যান ?
কাজী অফিসি যায়ে কোনো কথা নেই- বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ে শ্যাষ। ইবার কি করবি- যাবি কোথায়? মাথার উপর যেন আকাশ ভাঙে পলো। ইট্টু আগের রয়েল বেঙ্গল এখোন বিড়ালের ছাও। শ্যাষম্যাশ ঠিক করলো বউ নিয়ে সে বাড়ি যায়েই উঠপি; যা থাকে কপালে। মিয়াডার মুখি আর কথা নেই। কাম বাগায়েও বিপদ। মনে হচ্ছে সে কিছুই জানেনা। এইভাবে গাছে উটোয়ে দিয়ে মই টান মারা মিয়া মানষির এট্টা স্বভাব দোষই। ছাওয়ালডা দেখলো আর ভাবে লাভ নেই, ঝুকিতো ঝ-ক। ছাওয়াল বোর হাত ধরে গো গো করে হাটা ধল্লে¬া বাড়ির দিকি।
কিন্তু শেষপন্তু আর বাড়ি যাওয়া হলো না। পথেত্তেই শুনলো বাপ কি করে এই ঘটনা জানে ফ্যালেছে। আর জানার পরেত্তেই নাকি রামদাও নিয়ে পথে বসে আছে। এখোন তালি কি করার ! মিয়াডা এইসব ভাবে এতক্ষণ যেন পাথর হয়ে গিছলো। কিন্তু আর পারলো না, বিপদ দেখে বউই কলো না হয় চলো আমাগের বাড়িই যায়। ছাওয়ালডা আর কিছুই ভাবতি পারছেনা। নিরূপায় হয়ে বোর পাছ পাছই হাটা ধল্লে¬া। মিয়া বাড়ি যায়ে উঠলিই মিয়ার বাপ পোথম পোথম ইট্টু রাগারাগিই কল্লে¬া। তারপর মনে মনে কলো, মিয়া আমার ঠিক কামডাই করেছে। কারণ এই যুগি এইরোম বড়লোকের ঢকের ছাওয়াল পাওয়া কি যাইতাই কথা। তাইতো ইট্টু রাগারাগির পর জামোই মিয়াকে কাছে ডাকে কলো এর পরেত্তে যেন আর এই রকম হয় না।
মানে তো নিল, কিন্তু ইবার বাদলো আরেক জ্বালা। তাহলো মিয়া জামোর শুতি দিবি কোনে ? ঘর তো একখেনই। বারান্দায় না হয় ঘিরে দিয়া যায়, কিন্তু শুয়ার জন্যি খাট কিংবা চকিতো পড়ে থাক এট্টা পাটিও তো তার নেই। তাইতো শ্বশুর-জামোই ঠিক করলো আপাতত বাজারে যায়ে এট্টা পাটি কিনে আনবি।
যেই কথা সেই কাম। শ্বশুর-জামোই চলে গেল পাটি কিনতি। পোথোম দুকানে ঢুকেই জামোই পাটি নাড়ে চাড়ে দেখে কলো, মনে হচ্ছে চওড়ায় কম কম-দুইজনের শুয়া ইট্টু কষ্টই হবেনে। এই বলে ঢুকলো দুই নম্বর দুকানে। ইবারও সেই একই কথা। পোথমে নাড়ে চাড়ে দেখলো তারপর কলো, নাহ্ ! চওড়ায় ইট্টু কম কমই মনে হচ্ছে। দুইজনের শুয়া মনে হয় ইট্টু কষ্টই হবেনে। এই বলে বারেলো তিন নম্বর দুকানে। তারপর তিনেত্তে চার, চারত্তে পাঁচ। এইভাবে সাত-সাতটা দুকান মারে ফেললো। জামোর মুখি ঐ একই কথা, ‘পাটিডা মনে হচ্ছে চওড়ায় কম কমই হবেনে। শুয়া ইট্টু কষ্টই হবেনে।’
এদিকে শ্বশুর পড়ে গেল মস্ত বিপদে। তার কাম শুধু বুকার মত পাছ পাছ ঘুরে ব্যাড়ান। ঢুকলো ইবার অষ্টম দুকানে। পাছ পাছ ঘুরা আর ঐ জামোর অসেলে কথার জন্যি শ্বশুরীর রাগ মাথায় উঠে গেল। কিছুতেই সে আর নিজেকে চেক দিতি পারলো না। যেই অষ্টম দুকানে যায়ে পাটি নাড়েচাড়ে করে জামোই ক্যাবল কয়ছে, “ইট্টু ছোট ছোটই মনে হচ্ছে, দুই জনের শুয়া মনে হয় ইট্টু কষ্ট কষ্টই হবেনে।” অমনি শ্বশুর বাও হাত দিয়ে জামোর কানচলে এক ডাবি মারে কলো-সালার বিটা, নতুন বিয়ে করোছো থাকপা এট্টার পার এট্টা, অত চওড়া পাটি দিয়ে তোমার কাম কি?
বাংলাদেশ সময়: ০:৫১:০৪ ১৮৫৯ বার পঠিত