মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

প্রতিবেশী দেশে চীনের অবকাঠামো প্রকল্পে নজর রাখছে ভারত

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » প্রতিবেশী দেশে চীনের অবকাঠামো প্রকল্পে নজর রাখছে ভারত
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৪



বঙ্গ নিউজ ডটকমঃ

বাংলাদেশ-সহ ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীন যে সব অবকাঠামো প্রকল্প তৈরি করছে, তার দিকে ভারত সতর্ক নজর রাখছে এবং এগুলো ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি কি না - সেটাও নিয়মিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে।

ভারতের পার্লামেন্টে দুজন বিজেপি সদস্যের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ।

ওই সাংসদরা বলছেন, শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশে চীনের এই সব লগ্নি ভারতের জন্য খুবই উদ্বেগজনক - তবে ভারতেই চীন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেহেতু চীন এই সব প্রকল্প কম সময়ে ও কম খরচে করে দিচ্ছে সে কারণেই প্রতিবেশী দেশগুলোর চীন-নির্ভরতা বাড়ছে।

বিজেপি’র দুই সংসদ সদস্য, ডি বি চন্দ্রগৌড়া আর শাহনওয়াজ হুসেনের প্রশ্নের জবাবে পার্লামেন্টে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ জানিয়েছেন, চীন যে বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কায় বহু অবকাঠামো প্রকল্প তৈরি করে দিচ্ছে বা নির্মাণে সাহায্য করছে সে সম্পর্কে তারা পুরোদস্তুর অবহিত।

আর শুধু বাংলাদেশেই নয়, একইভাবে নেপালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, মালদ্বীপে আবাসন প্রকল্প কিংবা পাকিস্তানে হাইওয়ে বা ইকোনমিক করিডর গড়ে দিতেও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে চীন।

এর মধ্যে যে সব প্রকল্প ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করে দেশের সুরক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলে মি খুরশিদ তার লিখিত জবাবে বলেছেন।

দুশ্চিন্তাটা ঠিক কী নিয়ে, তা কি আপনি জানেন না? আমি আমার প্রশ্নটা করেছি মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতেই

ডি বি চন্দ্রগৌড়া, বিজেপি’র সাংসদ।

প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের কার্যকলাপ ভারতকে উদ্বিগ্ন রেখেছে অনেক দিন ধরেই, কিন্তু কেন এখন নতুন করে তারা পার্লামেন্টে এই প্রসঙ্গ তুললেন?

এর জবাবে মিঃ চন্দ্রগৌড়া বিবিসিকে বলছিলেন, ‘দুশ্চিন্তাটা ঠিক কী নিয়ে, তা কি আপনি জানেন না? আমি আমার প্রশ্নটা করেছি মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতেই।’

তিনি আরও বলছেন, ‘তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের ভূখন্ডের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানকে রাস্তা বানিয়ে দিচ্ছে চীন, কিংবা শ্রীলঙ্কাকে বন্দর তৈরি করে দিচ্ছে বা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্র বন্দর বানিয়ে দিতে চাইছে। তো ভারত সরকার এ ব্যাপারে কী করছে সেটা জানতে চাওয়াটাই তো স্বাভাবিক, তাই নয়?’

বিজেপি-র এমপি-রা পাকিস্তানে কারাকোরাম হাইওয়ে কিংবা শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরের মতো চীনা যে সব প্রকল্প নিয়ে উদ্বিগ্ন, তার কোনওটাই অবশ্য একেবারে নতুন নয়।

যেমন হামবানটোটা বন্দর ভারত মহাসাগরে স্ট্র্যাটেজিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ভারতের বহুদিনের বন্ধু দেশ শ্রীলঙ্কা যেভাবে চীনকে তার দায়িত্ব দিয়েছিল তা দিল্লি মোটেই ভালভাবে নিতে পারেনি।

তবে দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ও চীন-বিশেষজ্ঞ অলকা আচারিয়া কিন্তু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এখানে ভারত কিছুতেই শ্রীলঙ্কা বা চীনকে দোষারোপ করতে পারে না।

তাঁর যুক্তি, ‘ভুললে চলবে না হামবানেটাটা বন্দর তৈরির প্রস্তাব কিন্তু প্রথমে ভারতকেই দেওয়া হয়েছিল। নানা কারণে ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে, তখন সেখানে আসে চীন’।

আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নের যে প্রয়োজন, তাতে ভারত কতটা যুক্ত হবে সেটা আগে ভারতকে ঠিক করতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো চীনকে ডেকে আনছে, কারণ চীন সময়ে কাজটা উঠিয়ে দিতে পারছে

অলকা আচারিয়া, অধ্যাপক, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়

ফলে মিসেস আচারিয়া বলছেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নের যে প্রয়োজন, তাতে ভারত কতটা যুক্ত হবে সেটা আগে ভারতকে ঠিক করতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো চীনকে ডেকে আনছে, কারণ চীন সময়ে কাজটা উঠিয়ে দিতে পারছে’।

হামবানটোটার এই ইতিহাস বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের ক্ষেত্রেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে, এমন একটা আশঙ্কা অবশ্যই ভারতের আছে।

চীনা মূল ভূখন্ড থেকে আফ্রিকার পোর্ট সুদান পর্যন্ত বিস্তৃত যে দীর্ঘ সমুদ্রপথ বরাবর চীনের সামরিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে বলা হয় – সাধারণভাবে তার নাম ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ বা মুক্তোর মালা, আর হামবানটোটার মতোই এই মালার আর একটা গুরুত্বপূর্ণ মুক্তো হল চট্টগ্রাম।

অলকা আচারিয়া অবশ্য মনে করেন, ‘প্রায় দেড় দশক আগে থেকেই বলা হচ্ছে স্ট্রিং অব পার্লস দিয়ে চীন কীভাবে ভারতকে ঘিরে ফেলতে চাইছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার মনে হয় সেই কাঠামো থেকে এখন বেরিয়ে আসার সময় হয়ে গেছে।’

তিনি আরও যোগ করছেন, ‘এই অঞ্চলে স্ট্রিং অব পার্লস কিন্তু আর স্ট্র্যাটেজিক চর্চার মূল বিষয় নয়, বরং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের উন্নয়ন, তাদের কানেক্টিভিটির জন্য কীভাবে চীনের ওপর দিন-কে-দিন আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে সেটাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের প্রভাব কমাতে ভারতও বাংলাদেশ বা নেপালে পাল্টা প্রকল্প হাতে নেবে কি না, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য তার কোনও সরাসরি জবাব দেননি।

ভারত সরকার শুধু বলেছে, এই সব প্রতিবেশী দেশে সক্রিয় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তারা কাজ চালিয়ে যাবে – কিন্তু তার সঙ্গে চীন কী করছে না-করছে তার কোনও সম্পর্ক নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৭:১১   ৪৪৫ বার পঠিত