শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

গুণ্ডামির মুখে গুণ্ডে

Home Page » বিনোদন » গুণ্ডামির মুখে গুণ্ডে
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৪



gunday-movie-poster.jpg(খোকন)-বঙ্গ-নিউজ ডটকম: শেষ পর্যন্ত লড়াইটা বাধল। ঠেকানো আর গেল না। বলিউড ভার্সেস টলিউড। হিন্দি বনাম বাংলা। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, জিৎ, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরি, রাজ চক্রবর্তী, সুরিন্দর ফিল্মস, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস বনাম রণবীর সিংহ, অর্জুন কপূর, যশ রাজ ফিল্মস। জুন মাল্য, পায়েল সরকার বনাম প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। বাঙালিরা বাংলায় গুণ্ডেগর্দি মেনে নেবে না কিছুতেই। ওদিকে, গুণ্ডে-ও বাংলায় হামলা করবেই। তা, কলকাতা হাইকোর্ট কার পক্ষে?
হিন্দির সঙ্গে সঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা ডাবিং-এও মুক্তি পাবে যশ রাজ ফিল্মসের ‘গুণ্ডে’, খবরটা নতুন কিছু ছিল না। গুণ্ডে-র লাইন প্রোডিউসার অরিন্দম শীল স্পষ্টই বিক্ষোভ জানিয়েছিলেন মাস দুয়েক আগে ব্যাপারটা নিয়ে। এভাবে ডাব করে চালালে বাংলা ছবির বাজার মার খাবে- এই ছিল আশঙ্কার কারণ। আর ছিল কিছু নীতিগত প্রশ্নও। আসলে, কোনও বাংলা-হিন্দি দ্বিভাষিক ছবি পশ্চিমবঙ্গে শ্যুট হলে সেখানকার টেকনিশিয়ান ব্যবহারের একটা নিয়ম রয়েছে। যশ রাজ ফিল্মস তা করেনি। সেই জন্যই বাংলা গুণ্ডে-র মুক্তি নিয়ে একটা প্রশ্ন, একটা ভয় তৈরি হয়েছিল টলিপাড়ায়। কেননা, আইনত এমনটা করতে যশ রাজ ফিল্মস কেন, কোনও প্রযোজনা সংস্থারই কোনও বাধা নেই!
তার পরেও অবশ্য গুণ্ডে নিয়ে একটা আইনি বাধা এল। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কৃষ্ণেন্দু গুপ্তুর পক্ষ থেকে। ‘তুনে মারি এন্ট্রিয়াঁ’ গানটা কেন হাইকোর্ট আর দক্ষিণেশ্বরের মন্দির সংলগ্ন জায়গায় শ্যুট করা হয়েছে- অপরাধ বলতে এই! কৃষ্ণেন্দুর অভিযোগের তীরটা অবশ্য ঘুরেফিরে তাঁর পেশার দিকেই যায়। তাঁর আপত্তির মূল কারণ, কীভাবে কলকাতা হাইকোর্ট আর দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের সামনে একটা চটুল গান শ্যুট করার সম্মতি দেওয়া হয়?
বলাই বাহুল্য, গান শ্যুট যখন হয়েছে, তখন আইনি কোনও অসুবিধা ছিল না। ওই গানটার শ্যুটিং নিয়ে পাতার পর পাতা খবর করেছে মিডিয়া, কারওরই জানতে বাকি ছিল না যে ওখানে কী হচ্ছে আর কেমনভাবে হচ্ছে! সে দিকে সুবিধে করতে না পেরে কৃষ্ণেন্দু গুপ্তুর তরফ থেকে অভিযোগ উঠল একটু অন্যভাবে। শ্যুটিং-এর অনুমতি দেওয়া হয়েছে তো হয়েছে, তা বলে ছবির পর্দায় কলকাতার ঐতিহ্যের বিকৃতি মেনে নিতে হবে? বাংলার সংস্কৃতির আকাশে এ কেমন দুর্যোগের ঘনঘটা?
‘দক্ষিণেশ্বরে পবিত্র গর্ভগৃহের ঠিক পিছন দিকে গানটা শ্যুট করা হয়েছে। যে পুণ্যক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রামকৃষ্ণ পরমহংসের নাম, সেখানে এমন অনাচার কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তাছাড়া, গানটা শ্যুট করা হয়েছে রাতের বেলায়, দেবীর বিশ্রামের সময়ে! তখন ওই শোরগোল করে কি তাঁর অবসরের ব্যাঘাত ঘটানো হয় না’? তীব্র আপত্তি জুড়েছেন আইনজীবী। একইভাবে, বিনয় বসুর মূর্তির সামনে প্রিয়ঙ্কার এনট্রিয়াঁ নিয়েও বিপুল ক্ষোভ জমা হয়েছে গুণ্ডে-র বিরুদ্ধে।
ঠিক এই মূল্যবোধের জায়গাটাকেই লড়াইয়ে আঁকড়ে ধরেছে টলিপাড়াও। পরমব্রত, জিৎ, অরিন্দম শীল, নিসপাল সিংহ রাণে, শ্রীকান্ত মোহতা- সবাই! টলিপাড়ার টেকনিশিয়ান নিয়ে ওরকম ঝাঁ-চকচকে, মারকাটারি ছবি বানানো যেত কি যেত না- যশ রাজের এই ভাবনা-চিন্তাটাকে আপাতত ভুলে মেরে দিয়েছেন সকলে। উদ্দেশ্য একটাই, গুণ্ডেদের বাংলায় ঘেঁষতে না দেওয়া। এরপর গুণ্ডের দেখাদেখি সব হিন্দি ছবিই যদি বাংলায় ডাব করা হতে থাকে? তাহলে কি আর বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকবে? এই ভয়ের জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটা আবেদনপত্রও পাঠাচ্ছে টলিপাড়া!
ওদিকে যশ রাজ ফিল্মস কিন্তু এই ব্যাপারে বেশ স্পষ্টবক্তা। ‘আরে, এভাবেই যদি ব্যবসা করতে হয়, তাহলে তো আমাদের ১০০ কোটির ছবির সবগুলোই বাংলায় কলকাতায় রিলিজ করানো হত। এক থা টাইগার থেকে শুরু করে ধুম ৩- সবগুলোই! তা যখন করা হয়নি, তখন ভয়ের কী কারণ থাকতে পারে? গুণ্ডে-র সঙ্গে খুব বেশি করে জড়িয়ে রয়েছে বাংলা আর বাঙালি। সেই জন্যই একটা শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে ছবিটা বাংলায় রিলিজ করাচ্ছি আমরা! ব্যস’, জানাচ্ছেন রফিক গাঞ্জি, যশ রাজ ফিল্মসের মার্কেটিং আর কমিউনিকেশনস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ভেবে দেখলে রফিকের বক্তব্যও মিথ্যে নয়। এখনও পর্যন্ত হলিউডের অনেক ছবিই বাংলায় ডাব করে মুক্তি পায় কলকাতায়, সেগুলো কিন্তু বাংলা ছবির বক্স অফিসে সামান্য ঢেউও তোলে না। তাহলে গুণ্ডে-ই বা এমন কী করে উঠতে পারবে? অন্যদিকে, বলিউড বেশ অনেকদিনই মাথা ঘামাচ্ছে টলিপাড়াকে নিয়ে। ভূতের ভবিষ্যৎ, শব্দ- অনেক ছবিই হিন্দিতে নতুন করে তৈরি হচ্ছে। মহেশ ভট্ট-র অনুরোধে বাংলা ছবির গান হিন্দি ভাষায় ফিট করে দিচ্ছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়- এভাবে চমৎকার একটা আদান-প্রদান চলছেই।
তবে গুণ্ডে কেন পড়ছে গুণ্ডামির মুখে? ট্রেলরে যতই লেখা থাকুক, ‘সবচেয়ে আদরের’, ‘সবচেয়ে পছন্দের’, আসলে কি ব্যাপারটা একেবারে উল্টো?
তাই হয়তো হবে। যা দেখা যাচ্ছে, গুণ্ডে এই মুহূর্তে টলিপাড়ার অন্তত ‘সবচেয়ে অনাদরের’, ‘সবচেয়ে অপছন্দের’!

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৮:১০   ৪৭২ বার পঠিত