বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৪

৭ আসনে পুনঃভোটের প্রস্তুতি সম্পন্ন

Home Page » জাতীয় » ৭ আসনে পুনঃভোটের প্রস্তুতি সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৪



সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। (ফাইল ছবি)

রাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ নিউজ)ঃগোলযোগের কারণে স্থগিত থাকা ছয় জেলার সাতটি সংসদীয় আসনের প্রায় চারশ’ কেন্দ্রে আজ বৃহস্পতিবার পুনরায় ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের দিন সংঘাত, ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ, ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের কারণে এই কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ আটকে গিয়েছিল।

সেদিন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ফল স্থগিত হলেও আদালতের এক আদেশের কারণে আজ বৃহস্পতিবার ওই আসনের স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।

পুনঃভোটে গোলযোগ এড়াতে যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, যদিও এরই মধ্যে ভোটের দিন বগুড়া-৪ আসনে (গাবতলী) হরতাল ডেকেছে দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী বিএনপি।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ইতোমধ্যে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদের প্রথম অধিবেশনও আগামী ২৯ জানুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে।

হামলা, নাশকতায় আটটি আসনের ৩৯২ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করেছিল ইসি। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্র বাদে বাকি কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “ভোটের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সেনা, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা প্রতিটি উপজেলা, ৫/১০টি কেন্দ্রকে ঘিরে টহলে থাকবে।”

যে সব আসনে পুনঃভোট হচ্ছে, সেগুলো হল- দিনাজপুর-৪, বগুড়া-৭, গাইবান্ধা ১, ৩, ৪, যশোর-৫ ও লক্ষ্মীপুর-১।

সিইসি কাজী রকিব ভোটের আগের দিন সাংবাদিকদের বলেন, স্থগিত ৭ আসনে পুনঃভোট শান্তিপূর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বাত্মক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ির টাউন হল ভোট কেন্দ্র। হাতবোমা বিস্ফোরণের পর এই কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হয়ে যায়। গাইবান্ধার পলাশবাড়ির টাউন হল ভোট কেন্দ্র। হাতবোমা বিস্ফোরণের পর এই কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হয়ে যায়। “আশা করি, কালকের ভোটে ৫ জানুয়ারির সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা চাই, ভোটাররাও চায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।”
বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম ইসিতে যান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুনঃভোট নির্বিঘ্ন করতে তার দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

যে সব আসনে ভোট

দিনাজপুর-৪: এই আসনের ১২০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৭টিতে ভোট স্থগিত হয়। এসব কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১৯।

গাইবান্ধা-১: এই আসনের ১০৯টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত হয়েছে ৫৪টির ভোট। এসব কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০৯টি। বাকি কেন্দ্রগুলোর ফলাফলে আওয়ামী লীগের মনজুরুল ইসলাম লিটন ৬৮ হাজার ৯৯৩ ভোট এবং জাতীয় পার্টির আব্দুল কাদের খান ৮ হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়েছেন।

গাইবান্ধা-৩: এই আসনে ৮০টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত রয়েছে, যাতে ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৬২৭ জন। ঘোষিত ৫০ কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের ইউনুস আলী সরকার ৭০ হাজার ৬৬৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম খাদেমুল ইসলাম খুদি ১২ হাজার ৭৮১ ভোট পেয়েছেন।

গাইবান্ধা-৪: এই আসনের ১৩০টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত রয়েছে ৭২টির ভোট। এতে ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৭৭ জন। ঘোষিত কেন্দ্রগুলোর ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ৫৯ হাজার ৮৬২ এবং আওয়ামী লীগের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ১৮ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়েছেন।

বগুড়া-৭: এই আসনের ১৬১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৬টি কেন্দ্রে পুনঃভোট হচ্ছে। এতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৬৫ ভোটার রয়েছেন।জাতীয় পার্টির মুহম্মদ আলতাফ আলী ৭ হাজার ৪৩ ভোট এবং জেপির এটিএম আমিনুল ইসলাম ৩ হাজার ১৭৫ ভোট নিয়ে লড়বেন।

যশোর-৫: এই আসনের ১২২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬০টি কেন্দ্রে পুনঃভোট হচ্ছে। ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৬ জন। ঘোষিত ফলাফলে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান ৩০ হাজার ৫৩১ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টচার্য্য ১৮ হাজার ৩৩১ ভোট পেয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর-১: এই আসনের ৮১টি কেন্দ্রের মধ্যে পুনঃভোট হবে ২১টিতে। এগুলোতে ভোট রয়েছে ৫০ হাজার ২৭৯টি। ঘোষিত ফলাফলে নৌকা প্রতীকে তরীকত ফেডারেশনের এম এ আউয়াল পেয়েছেন ৩২ হাজার ৫৭ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ২০ হাজার ৯১১ ভোট।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ১০৬ কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত দুটি কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ৭ হাজার ২৫৭টি। দুই কেন্দ্র বাদে জেপির রুহুল আমিন ৩০ হাজার ৫৪৪ এবং আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন ২৩ হাজার ৯৪৬ ভোট পেয়েছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরো কয়েকটি কেন্দ্রে পুনঃভোট চেয়ে আদালতে গেছেন।
সিইসি বলেন, “কুড়িগ্রামের নির্বাচন আদালতের আদেশেই বন্ধ থাকবে। আবার যথাসময়ে ভোটগ্রহণ করা হবে।”

আ. লীগের দুই প্রার্থীর জবাব পেয়েছে ইসি

যশোর-১ ও যশোর-২ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিন ও মনিরুল ইসলামের কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব পেয়েছে ইসি।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আওয়ামী লীগের এ দুইজনের ‘প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না’ তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, “দুজনের লিখিত জবাব আজ (বুধবার) আমাদের কাছে এসেছে। এখন তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজন হলে তাদের শুনানিও করবে।”

৫ জানুয়ারি ভোটে ২৯০টি আসনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে ইসি। বাদ রাখা হয় আফিল ও মনিরুলের গেজেট প্রকাশকে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দুটি আসনে নির্বাচিত হওয়ায় তিনি পরে রংপুর-৬ আসনটি ছেড়ে দেন। ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে ইসি।

এই পর্যন্ত ঘোষিত চূড়ান্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগ ২২৯, জাতীয় পার্টি ৩৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, জেপি ১, তরীকত ১, বিএনএফ ১ ও স্বতন্ত্র ১৪টি আসন পেয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০:০৭:১৫   ৩৯১ বার পঠিত