বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৪
বাংলাদেশ এখন ‘গণতন্ত্রবিহীন’ অবস্থায় রয়েছে: খালেদা
Home Page » প্রথমপাতা » বাংলাদেশ এখন ‘গণতন্ত্রবিহীন’ অবস্থায় রয়েছে: খালেদাবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশ এখন ‘গণতন্ত্রবিহীন’ অবস্থায় রয়েছে দাবি করে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরুর ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
৫ জানুয়ারির ভোটে অংশ না নেয়ার জন্য কোনো আক্ষেপ নেই জানিয়ে এই ভোটকে প্রহসন আখ্যায়িত করে আন্দোলনের পাশাপাশি সংলাপের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কয়েকটি কর্মসূচি দিয়ে তা সফলে শিগগিরই বিভিন্ন অঞ্চল সফরে বের হবেন বলেও জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর বুধবারই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসেন খালেদা। লিখিত বক্তব্য পড়ার পর সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি।
এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপির সংসদে বিরোধী দলের আসন হারানোর দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছিলেন, খালেদা জিয়া দুই কূলই হারিয়েছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আমরা কোনো কূল হারাইনি। জনগণ থেকে যারা বিচ্ছিন্ন, তারাই বরং কূল হারিয়েছে।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল এই নির্বাচন ঠেকাতে হরতাল-অবরোধ ডেকেছিল, তবে এর মধ্যেই ভোট হয়ে যায়। ওই ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সরকার গঠন করেছে।
নির্বাচনে না যাওয়াটা ভুল ছিল কি না- প্রশ্ন করা হলে খালেদা বলেন, “কোনো ভুল ছিল না। আমাদের আন্দোলন সঠিক ছিল।”
সংবাদ সম্মেলনের আগে ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের ভোটচিত্র নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়।
খালেদা বলেন, এই ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেনি। এই ‘প্রহসন’ দেশের মানুষ বর্জন করেছে। সারাদেশে কোথাও মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি।
গড়ে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ ইসি ‘জালিয়াতি’ করে ৪০ শতাংশ ভোটের হিসাব দেখাচ্ছে।
“৫ জানুয়ারি আওয়ামী প্রহসন হাতে-কলমে প্রমাণ করেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান কতটা যৌক্তিক। প্রমাণ হয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারে না।”
“প্রহসনের ভোটে দেশের জনগণ অন্যায়, অবিচার, ভোটাধিকার হরণ ও গণতন্ত্র হত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছে।”
৫ জানুয়ারির ভোটের মধ্যদিয়ে গঠিত বর্তমান সংসদকে গণপ্রতিনিধিত্বহীন উল্লেখ করে এর মাধ্যমে গঠিত সরকারকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
“এই সরকার বৈধ সরকার নয়।একটি অবৈধ সরকারের কোনো দায়িত্ববোধ থাকে না জনগণের প্রতি। এমন একটি সরকার দীর্ঘায়িত হওয়া খুবই বিপজ্জনক।”
এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি সংলাপের মধ্য দিয়ে সঙ্কট সমাধানে রাজি থাকার কথাও জানান তিনি।
“আমাদের এই আন্দোলন চলবে। এই আন্দোলন ক্ষমতার জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্য। আন্দোলনের পাশাপাশি সংলাপের প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকবে।”
“আমি আশা করছি, বঞ্চিত-উৎপীড়িত মানুষ অচিরেই তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে,” বলেন খালেদা।
আন্দোলন তাহলে অব্যাহত থাকবে কি না- জানতে চাইলে খালেদা বলেন, “হ্যাঁ, আমাদের আন্দোলন চলবে।”
৫ জানুয়ারির নির্বাচন ‘বর্জন’ করায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে খালেদা ২০ জানুয়ারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গণসমাবেশের কর্মসূচি দেন।
১৮ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালনের পর দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন ২৯ জানুয়ারি বিক্ষোভ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বিএনপি কখনোই সহিংসতা করেনি। আমাদের আন্দোলন জনগণকেন্দ্রিক। আমাদের আন্দোলন সব সময়ই সঠিক ছিল, কারণ আমরা উন্নয়ন আর গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।”
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়বেন কি না- জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের একেসঙ্গে আন্দোলন করার বিষয়টি তুলে ধরেন বিএনপি নেত্রী।
“৮৬ সালের স্বৈরাচার আমলে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি ছিল যে কেউই নির্বাচনে অংশ নেব না। কিন্তু সে সময় আওয়ামী লীগ চুক্তি ভঙ্গ করে জামায়াতের সাথে ওই নির্বাচনে অংশ নেয়।”
“এই যে তত্বাবধায়ক সরকারের কথা উঠছে, এর জন্য আন্দোলন কে করেছে। আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি একত্রে আন্দোলন করে তত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালু করে। তাহলে তারাই (আওয়ামী লীগ) তো সব সময় জামায়াতের সাথে আছে।”
পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে খালেদা বলেন, প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ বিএনপি সমর্থন করে না।
বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের আটকের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
“হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করে কারাগারগুলো ভরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাসস্থানগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে, ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মহিলাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে।”
“সব প্রতিবাদ অস্ত্রের ভাষায় স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তারা মওলানা ভাসানীকে গৃহবন্দি করতে দ্বিধা বোধ করেনি। এবারো বিরোধীদলীয় নেতাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে।”
খালেদা বলেন, “৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন করে বাংলাদেশ আবার পিছিয়ে পড়ল, পুরোপুরি গণতন্ত্রহীন হয়ে পড়ল।
“প্রতারণা করে, সন্ত্রাস চালিয়ে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রহসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা যারা প্রলম্বিত করেছে, তারা বেশি দিন গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।”
তিনি দাবি করেন, ৫ জানুয়ারিতে অন্তত ২২ জন নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই সংখ্যা দুই শতাধিক।
আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী করবেন, তার একটি ফিরিস্তিও দেন খালেদা। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেয়ার পাশাপাশি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘যথাযথ’ মর্যাদা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ভোট নিয়ে তথ্যচিত্র
খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের আগে ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের ভোটের চিত্র নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়।
৪৫ মিনিট স্থায়ী এই তথ্যচিত্রে ভোটকেন্দ্রের ভোটারশূন্য অবস্থা, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্য রয়েছে। পরে সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্যচিত্রের একটি সিডিও দেয়া হয়।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখানো হয়েছিল।
প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান বলেন, “গত ৫ জানুয়ারি প্রহসনের যে নির্বাচন হয়ে গেছে, যাতে ভোট দিতে মানুষজন যায়নি, এটি তারই প্রমাণ।”
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৪:১০ ৩৭০ বার পঠিত