শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৪
যশোরের ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ঝুঁকিতে
Home Page » প্রথমপাতা » যশোরের ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ঝুঁকিতেখোকন:বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে যশোরের ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করলেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন এ এলাকার ব্যবসায়ীরা। গত বছর যশোর শহরের বেশিরভাগ ব্যাংক তাদের মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। এতে ব্যাংক কর্মকর্তারা স্বস্তি পেলেও অস্বস্তির মধ্যে আছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে হরতাল-অবরোধের কারণে গত দুই মাস ধরে তারা ব্যবসা করতে পারছেন না। পণ্য আমদানি করেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। আবার অনেকে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসতে পারছেন না পরিবহন-সংকটের কারণে। শিল্প-কারখানায় পণ্য বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ব্যাংক ঋণের সুদ তাদের দিতে হচ্ছে। দেশ এভাবে আর এক-দুই মাস চললে ব্যবসায়ীদের পুঁজি শূন্যের কোঠায় পৌঁছাবে। এরই মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি হারিয়েছেন। ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফের জন্য সম্প্রতি যশোর চেম্বার অব কমার্স অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
যশোরের বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে তাদের মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ভালোভাবেই অর্জিত হয়েছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে। ওয়ান ব্যাংক যশোর শাখার মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৬ কোটি টাকা। এই ব্যাংকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে সাড়ে ছয় কোটি টাকা। একইভাবে এবি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি, অর্জিতও হয়েছে ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি, অর্জিত হয়েছে ৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ কোটি, অর্জিত হয়েছে ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৪ কোটি, অর্জিত হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ, অর্জিত হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ লাখ, অর্জিত হয়েছে ১ কোটি ১ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ, অর্জিত হয়েছে ১ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ লাখ, অর্জিত হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। ব্যাংক এশিয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি, অর্জিতও হয়েছে ৪ কোটি টাকা।
এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাংকও একই ধারায় কমবেশি মুনাফা করেছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে আমরা ব্যবসা ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারছি না। অথচ ব্যাংক ঋণের সুদ আমাদের ঠিকই দিতে হচ্ছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে হরতাল-অবরোধে দোকান বন্ধ থাকায় আমাদের দেউলিয়া হবার উপক্রম হয়েছে। অথচ ব্যাংক ঠিকই মুনাফা করছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ব্যাংক সুদ মওকুফের জন্য অর্থসচিবকে চিঠি দিয়েছি।’
চলতি বছর পরিবেশ ঠিক না হলে ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপির খাতায় নাম লেখাবেন বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আফিল গ্রুপের পরিচালক মাহাবুব আলম লাভলু বলেন, ‘টানা হরতাল ও অবরোধে আমরা ফ্যাক্টরি ঠিকমতো চালু রাখতে পারছি না। মালামাল বিক্রি করতে না পারায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছি। কেননা উৎপাদিত পণ্য পরিবহন করতে না পারায় বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ পণ্য বিক্রি হোক আর না হোক আমাদের ব্যাংক ঋণের সুদ সময়মতো পরিশোধ করতে হচ্ছে । গ্রাহক-সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। যশোর ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান টুকুন রাইজিংবিডিকে জানান, ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হয়ে গেছেন। ব্যবসায়ীরা মালামাল আমদানি করেও অবরোধের কারণে তা বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ তাদের ব্যাংক সুদ দিতে হচ্ছে। অবিলম্বে তিনি ব্যাংক সুদ কমানোর দাবি জানান।
যশোর রূপালী ব্যাংকের এজিএম শওকত আলী সাংবাদিকদের জানান, বেসরকারি ব্যাংকে সুদের হার অনেক বেশি। এটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। ওয়ান ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক ও এভিপি আবু সাঈদ মোহাম্মদ আবদুল মান্নাফ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যখন ঋণ নেন, তখন তারা সব জেনেশুনেই নিয়ে থাকেন। আর সুদের হার কমবেশি করার এখতিয়ার লোকাল ব্যাংক কর্মকর্তাদের থাকে না। এটা প্রধান শাখার ব্যাপার। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে সুদের হার নির্ধারণ করে। তবে আমরা মনে করি, দেশে এ অবস্থায় গত বছর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এবি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফসিউর রহমান জানান, ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফার কারণে গত বছরের ১০ মাস দেশের অবস্থা ভালো ছিল। সবাই ব্যবসা করতে পেরেছেন। যে কারণে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ ব্যবসার ক্ষতি করতে পারেনি। তবে এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যাংকের মুনাফায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। কেননা ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা করতে না পারলে ঋণ শোধ করবেন কীভাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪২:৪৮ ৩৪২ বার পঠিত