শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০১৪

মুক্ত হচ্ছেন না খালেদা!নির্বাচনের আগে ‘অবরুদ্ধ’আটদিন ধরে

Home Page » জাতীয় » মুক্ত হচ্ছেন না খালেদা!নির্বাচনের আগে ‘অবরুদ্ধ’আটদিন ধরে
শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০১৪



image_70748_0.jpgতমালবঙ্গ-নিউজডটকমঃ আটদিন ধরে গুলশানের নিজ বাসায় ‘অবরুদ্ধ’ রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বর নিজ বাসা থেকে গুশানের কার্যালয়ে যান তিনি। এরপর আর তাকে বাসা থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। ৬ জানুয়ারির আগে তাকে বাসা থেকে বের হতে দেয়া হবে না। এমনকি নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নিজ বাসায় ‘অবরুদ্ধ’ থাকতে পারেন খারেদা। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমনই নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।গত ২৪ ডিসেম্বর গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। ওই রাতেই গুলশানে তার বাসার সামনে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। পাশাপাশি গুলশানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। সেদিন থেকেই পুলিশ কাউকে বাসভবন ও কার্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে দেয়নি। অঘোষিতভাবে ‘অবরুদ্ধ’ করা হয় বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ও কার্যালয়। গুঞ্জন উঠে, যে কোনো সময় বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বড়দিন উপলক্ষ্যে স্বাক্ষাৎ করেন খালেদা জিয়া। পরদিনও কার্যালয়ে তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন তিনি। এসময় কাউকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দিলেও সাংবাদিক ও আইনজীবী নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর থেকে নিজ বাসায় ‘অবরুদ্ধ’ তিনি। এমনকি কোনো নেতাকর্মীকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি।

২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে অংশগ্রহণ করার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে অবশ্য ব্রিটিশ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বের হওয়ার পর শমসের মবিন চৌধুরীকে আটক করা হয়। পরে আবার ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া গত আটদিনে দলের একাধিক নেতাকে গুলশানের বাসা ও কার্যালয়ের সামনে থেকে আটক করে পুলিশ। ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানসহ কয়েকজনকে ছেড়ে দিলেও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নারী সংসদ সদস্য শাম্মি আক্তারসহ কয়েকজন এখনও কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে, নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকেও ১২ ডিসেম্বর রাতে বারিধারার বাসা থেকে অসুস্থতার কথা বলে তুলে নিয়ে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করানো হয়। এখনো সেখানেই আছেন তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে এরশাদ সুস্থই আছেন। প্রতি সকালে গলফ খেলছেন, ব্যায়াম করছেন। তবে দলের কারো সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয় না। এরশাদের রুমেই একজন সারাক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণ করেন। এরশাদ কার্যত নজরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নির্বাচনের পর শপথগ্রহণ নিয়ে সমঝোতা হলেই এরশাদকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আর তাই, যে কোন মূল্যে শান্তিপূর্ণভাবে দশম জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে এরশাদের মতো খালেদা জিয়াকেও অলিখিতভাবে তার বাসায় ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর তাকে বাসা থেকে বের হতে দেয়া হতে পারে।

সূত্র জানায়, যে কোনো মূল্যে নির্বাচন ঠোকানোর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে বের হতে দিলে বা নেতাদের তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দিলে তিনি নির্বাচন ‘বানচালের ষড়যন্ত্র’ করতে পারেন। এছাড়া বাসা থেকে বেরিয়ে কার্যালয়ে গেলেই গণমাধ্যমে কথা বলবেন। তা প্রচার হলে পরিস্থিতি নাজুক হতে পারে, বাড়তে পারে সহিংসতাও। বিশেষ করে সারাদেশে নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই খালেদাকে তার নিজ বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে।

গুলশান জোনের এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বের হতে না দেয়া এবং কাউকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না দেয়ার বিষয়ে কড়া নির্দেশ রয়েছে।’

কবে নাগাদ খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বের হতে দেয়া হবে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপরের নির্দেশ পেলেই।’ তবে তা নির্বাচনের আগে হবে না বলে জানান তিনি।

এদিকে বিএনপির সংসদীয় দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে শুক্রবার খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার অভিযোগ তুলেন। খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার, অবরুদ্ধ না কি গৃহবন্দি তা জনগণের কাছে স্পষ্ট করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ কি না এ বিষয়ে জানাতে চাইলে লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তা তো আপনারা ভালো জানেন। আন্দোলন দমাতে ও নেতাকর্মীদের কাছ থেকে খালেদা জিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকার খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে প্রহসনের নির্বাচন করতেও ভয় পাচ্ছে। তাই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাতে কোনো লাভ হবে না। চেয়ারপারসনের আহ্বানে জনগণ এই একতরফা নির্বাচনকে বর্জন করবে।’

এ বিষয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. ওসমান ফারুক বলেন, ‘আওয়ামী নেতারা একেক সময় একেকরকম কথা বলছেন। তারা বলছেন- বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। এটা যে কতো বড় মিথ্যাচার তা গোটা জাতির কাছে পরিষ্কার। কেননা বেগম খালেদা জিয়াকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও বালি ভর্তি ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার দৃশ্য গোটা দেশবাসী মিডিয়ার বদৌলতে অবলোকন করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো অবরুদ্ধ। বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও বেগম জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করা হচ্ছে না।’

শুক্রবার রাতে বেগম জিয়া নিজেও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি শান্তিপূর্ণ “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি” কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে ভীত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের দিয়ে আমার বাসভবন ঘিরে রেখেছে। আমাকে বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কোনো ঘোষণা ছাড়াই সরকার কার্যত আমাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। আমার অফিস এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ।’

বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৮:৪৭   ৩২১ বার পঠিত