শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০১৪
খুব দ্রুত একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতির পরামর্শ ভারতের; জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে
Home Page » জাতীয় » খুব দ্রুত একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতির পরামর্শ ভারতের; জরুরি অবস্থা জারি হতে পারেআগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে ভারত। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার সরকার প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
‘জঙ্গি জামায়াতকে সামলে হাসিনা ফের নির্বাচনে আসুন, চায় দিল্লি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ তারিখ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের পর নিরাপত্তা ও কূটনীতি দুদিক থেকেই পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট এসেছে নয়াদিল্লির কাছে। জামায়াতে ইসলামীর জঙ্গিপনা পুরোপুরি শেষ করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি করা একটি উপযোগী পন্থা হিসেবে মনে করছে শেখ হাসিনার সরকার। তাদের দাবি, সে ক্ষেত্রে একদিকে নির্বিঘ্নে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে, অন্যদিকে বিরোধীদের লাগাতার হরতাল-অবরোধ বন্ধ হওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হবে। মানুষও স্বস্তি পাবে। পশ্চিম বিশ্বের পক্ষেও বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান নেওয়া সহজ হবে না। কিন্তু ঢাকা এ কথা মনে করলেও এই পরিস্থিতি যে দীর্ঘদিন চলতে পারে না, সে কথাই বলা হচ্ছে রিপোর্টে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় গোটা লড়াইটাই একপেশে হয়ে গেছে। ১৫৩টি আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে বসে রয়েছেন একজন করে প্রার্থী। এর মধ্যে ১৩২ জনই শাসক আওয়ামী লীগের।
আনন্দবাজার বলছে, বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ‘কার্যত গৃহবন্দি’ বলে দাবি করেছে তাঁর দল। বিএনপির অনেক নেতাই জেলে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে পশ্চিমা দুনিয়া। তাই এ দফায় সরকার গড়লেও দ্রুত দেশে রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে আরো একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ ঢাকাকে দিচ্ছে নয়াদিল্লি। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার জন্য ৫ তারিখের আগেই কোনো উচ্চপদস্থ কর্তাকে ঢাকায় পাঠানোর কথা ভাবছে নয়াদিল্লি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সব মিলিয়ে তাই একদিকে যেমন সীমান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কোমর বাঁধা হচ্ছে, শরণার্থীদের প্রশ্নে কিছুটা মানবিকতার পথে হাঁটার কথা ভাবা হচ্ছে; অন্যদিকে কূটনৈতিক স্তরে হাসিনা সরকারকেও বোঝানো হচ্ছে- পরিস্থিতির রাশ ধরার জন্য সংবেদনশীল পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘতম সীমান্তের ভাগীদার ভারতের পক্ষেও অবস্থাটা আদৌ অনুকূল নয়। বিষয়টির নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক দুই রকম দিকই রয়েছে বলে মনে করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সীমান্ত সিল করে দেওয়া অথবা শরণার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা আপৎকালীন তৎপরতা হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদিভাবে এই চাপের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটা নয়াদিল্লির কাছে যেমন সহজ নয়, তেমন কাম্যও নয়। পূর্ব উপকূলকে কাজে লাগিয়ে ভারতে জঙ্গি পাচার করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। সুতরাং বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদিভাবে জঙ্গিপনার দিকে হাঁটুক, এটা কিছুতেই চায় না সাউথ ব্লক। আর তাই আমেরিকার সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং জানিয়েছেন, জামায়াতকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দীর্ঘ দূতিয়ালির পরও যে আমেরিকা সুর নরম করেনি, তা এখন স্পষ্ট। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা খোলাখুলিই জানিয়েছেন, নির্বাচন হওয়া উচিত অবাধ ও নিরপেক্ষ। আসন্ন ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগের ভূমিকায় যে আমেরিকা আদৌ সন্তুষ্ট নয়, সে কথাও বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। পশ্চিমা দুনিয়া বলছে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা।
আনন্দবাজার জানায়, যে রিপোর্টটি সম্প্রতি সাউথ ব্লকে পৌঁছেছে, তাতে বলা হচ্ছে, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে তার সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতার পথে হাঁটবে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। কোনো কারণে যদি এই সরকার পড়ে গিয়ে জামায়াত সমর্থিত বিএনপি সরকার আসে, তাহলে বিপুলসংখ্যক অনুপ্রবেশকারী মোকাবিলার জন্য ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন শুধু হিন্দুরাই নন, অসংখ্য ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমানও বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হবেন। আর তাঁদের সহজ গন্তব্য হবে ভারত।’
প্রতিবেদনের শেষাংশে বলা হয়, চলতি পরিস্থিতির মোকাবিলায় হাসিনা সরকারকে জরুরি অবস্থা জারি করতে হতে পারে, এমন কথাই বলছে ওই রিপোর্ট। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সে দেশের সংবিধান অনুসারে চার মাস পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে সরকার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ হিংসামুক্ত আবহাওয়ায় একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার অবকাশ পাবে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে, জিনিসের অগ্নিমূল্যও কমবে। যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক ফাঁসি হলে হয়তো আবার উন্মুত্ত হতে পারে জামায়াত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থাকে আরো কিছুদিন বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে সরকার। পশ্চিমের পক্ষেও বিরোধিতা করা কঠিন হবে।’ কিন্তু এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলুক, ভারত তা চাইছে না। আর সে কথাই বোঝানোর জন্য ভাবা হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকারকে।
বাংলাদেশ সময়: ৪:৩১:৩৪ ২৬২ বার পঠিত