সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩
রক্ত ঝরল ঢাবি শিক্ষকদের, লাঞ্ছিত হলেন ২ শিক্ষিকাও
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » রক্ত ঝরল ঢাবি শিক্ষকদের, লাঞ্ছিত হলেন ২ শিক্ষিকাওএবার রক্ত ঝরল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শরীর থেকেও। রোববার আঠারো দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচীর সাথে সংহতি জানিয়ে শিক্ষকেরা মিছিল বের করলে তাদের ওপর পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলা চালায় সরকার দলীয় সমর্থকরা। এ সময় সাত শিক্ষক আহত হন। দুই শিক্ষিকা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়া ছাড়াও বেশ কয়েকজন শিক্ষক হামলার শিকার হন। প্রতিবাদে সাদা দলের শিক্ষকেরা আগামীকাল অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সভাসহ কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন।
হামলায় আহত শিক্ষকেরা হলেন ফার্মেসী অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুর রশিদ, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. গোলাম রব্বানী, চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ইস্রাফিল প্রাং রতন, জিন প্রকৌশল বিভাগের ড. শাহনূর হোসাইন, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের ড. মেহেদী হাসান খান, আন্তর্জাতিক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান। এ হামলায় অনন্ত তিন শিক্ষকের শরীর রক্তাক্ত হয়।
যেভাবে শিক্ষকদের ওপর হামলা : প্রত্যক্ষদর্শী এবং শিক্ষকেরা জানান, আঠারো দলীয় জোটের পূর্বঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের সামনে জড়ো হন বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের দেড় শতাধিক শিক্ষক। সেখানে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম তাদেরকে মিছিল না করার অনুরোধ জানান। কিন্তু শিক্ষকেরা তা উপেক্ষা করে পল্টনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওসি সিরাজুল ইসলাম কর্মসূচীতে কোনো নিরাপত্তা দেয়া হবে না জানিয়ে চলে যান।
এর কিছুক্ষণ পরই বেলা ২টার দিকে সচেতন শিক্ষকবৃন্দের ব্যানারে দেড় শতাধিক শিক্ষক মিছিল বের করলে প্রথমে শিক্ষা ভবনের সামনে এবং পরে কদম ফোয়ারার সামনে বাঁধা দেয়। এসময় তারা সেখানে রাস্তার ওপর বসে পড়ে সমাবেশ করা শুরু করে।
সমাবেশে ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানের বক্তব্য চলাকালে আগে থেকেই প্রেসকাবের সামনে অবস্থান নেয়া আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ এবং যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে। প্রথম দফায় তাদেরকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়। পরে সমাবেশ চলাকালে পিছন দিক থেকে শিক্ষকদের ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করে। আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি আসাদুর রহমান দূর্জয় এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ নাজমুলের নেতৃত্বে হামলা হয় বলে জানা গেছে।
একপর্যায়ে শিক্ষকদের ধাওয়া করে এবং মারধর করে। এসময় সাত শিক্ষক আহত হন। চারুকলা অনুষদের ড. সাবরিনা শাহনাজসহ দুই শিক্ষিকাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, কিল ঘুষিও মারা হয়। পরে শিক্ষকদের একটি অংশ হাইকোর্টের ভিতরে এবং অপর একটি অংশ কার্জন হলের ফার্মেসী অনুষদের সামনে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে সেখান থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং হুমকি ধমকি দেন হামলাকারীরা।
এর আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ, ড. আখতার হোসেন খান, মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
প্রতিবাদে কর্মসূচী : হামলার পর তাৎক্ষণিক ফার্মেসী অনুষদের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন সাদা দলের শিক্ষকেরা। সেখান থেকে আগামীকাল সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলায় প্রতিবাদ সভা করার ঘোষণা দেয়া হয়। এ সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে। কর্মসূচী হিসেবে কাস এবং পরীক্ষা বর্জন করা হতে পারে বলে শিক্ষকেরা জানান। এছাড়া শিক্ষক সমিতির জরুরি সভা ডেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানানো হয়। সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. তাজেমরী এস এ ইসলাম এ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন।
সাদা দলের বিবৃতি : ওদিকে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসুচি বানচালের জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিজ বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় সচেতন শিকদের জমায়েতে সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সাদা দলের শিক্ষকেরা। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রিয় বাংলাদেশ আজ এক গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটে। এ অবস্থায় দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নিশ্চুপ বসে থাকতে পারি না।
শিক্ষকেরা বলেন, আমদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য রাজপথে নেমে এলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে। পরে কদম ফোয়ারার কাছে প্রেসকাবের দিক থেকে লাঠিসোটা এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা শিকদের উপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন শিক আহত হন। এসময় মিসেস সাবরিনাসহ কয়েকজন নারী শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করে। তারা বলেন, ঘটনার সময় বিপুলসংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত থাকলেও সন্ত্রাসীদের প্রতিহতকরণে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গণহারে গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য রাজপথে সশস্ত্র মহড়া এবং প্রতিপরে উপর আক্রমণ করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা জাতীয় প্রেসকাবে সাংবাদিক এবং সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে ঢুকে আইনজীবীদের উপর হামলা চালিয়েছে।
তারা এ ঘটনারও তীব্র নিন্দা এবং শিক্ষক, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। একইসাথে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে অবিলম্বে অবরোধ মুক্ত করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সূযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকেরা হলেন ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম, সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ, ড. মোঃ আমিনুর রহমান মজুমদার, ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ড. মোঃ আখতার হোসেন খান, ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, ড. লায়লা নূর ইসলাম, মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ড. আবদুর রশিদ, ড. মো: আবদুস সাত্তার, ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ড. আবুল হাসনাত, ড. মোর্শেদ হাসান খান, ড. সূকোমল বড়-য়া, ড. তাহমিনা আখতার, মোঃ মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া, অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান, মোঃ আতাউর রহমান বিশ্বাস, ড. আল মোজাদ্দেদী আলফেছানী, মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক আবু আহমেদ, ড. বোরহান উদ্দীন খান, ড. মোঃ আবদুর রব, ড. আমিনুল ইসলাম ভূইয়া, ড. জাহিদুল ইসলাম, মোঃ নুরুল আমিন, মোহাম্মদ ওমর ফারুক প্রমুখ ।
বাংলাদেশ সময়: ২:০৩:৫১ ৪২৯ বার পঠিত