সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৩
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরুবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃএকাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। রবিবার সন্ধায় ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানার কপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। রাত ৯টার দিকে কাদের মোল্লাকে কারা সেল চম্পা কলি থেকে কনডেম সেলে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের প্রাক-আনুষ্ঠানিকতাও চলছে কেন্দ্রীয় কারাগারে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কারাসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরোয়ানা জারির পর মধ্যরাতে অথবা রাতের শেষভাগে রায় কার্যকরের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কখন রায় কার্যকর হবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে চাইছেন না।
এদিকে সন্ধ্যায় কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি প্রিজন) কাছে পরোয়ানা পৌঁছানোর পরই কারাগার ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো চাঞ্চল্যকর মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাগারে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
জানা গেছে, রবিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসির উদ্দিনের কাছে রায়ের কপি হস্তান্তর করেন। এরপর নবনিযুক্ত কারা মহাপরিদর্শক মাঈন উদ্দিন খন্দকার কালের কণ্ঠের কাছে সন্ধ্যার আগে আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুর পরোয়ানার চিঠি পয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যদিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের আনুষ্ঠানিকতা শরু হয়েছে। এর পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাসহ আরো কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন শেষেই রায় বাস্তবায়ন করা হবে। তবে ঠিক কবে নাগাদ ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে এখানো নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। আমরা জানতে চাইব তিনি প্রাণভিক্ষা চান কি না। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ জানা গেছে, পরোয়ানাটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, মহান বিজয় দিবসের দিন অথবা এর আগের যে কোনো দিন কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হতে পারে। ১৪ ডিসেম্বরের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। রবিবার দিনগত রাতের শেষভাগে ফাঁসির রায় কার্যকরের গুজব থাকলেও এ ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নয়। মামলায় আসামিপক্ষ থেকে রিভিউ দায়েরের কথা বলা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রিভিউ দায়েরের কোনো সুযোগ নেই। তবে আব্দুল কাদের মোল্লার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা। রবিবার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার বরাবর এ আবেদন করা হয়। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ আবেদন করতে আসামিপক্ষের পাঁচ আইনজীবী কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এ আবেদন করেন।
সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারা সেল চম্পা কলি থেকে কাদের মোল্লাকে কনডেম সেলে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ফরমান আলী সত্যতা স্বীকার জানান, পরোয়ানা জারির পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে যেকোনো সময়ই কনডেম সেলে নেওয়া হতে পারে।
এদিকে রবিবার বিকেলে থেকেই কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে চকবাজার-লালবাগসহ পুরান ঢাকায় নিরাপত্থা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কারাগারের আশপাশের সড়কে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও র্যাবের টহল দেখা গেছে। মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন উর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হরতাল-অবরোধ চলছে। একই সঙ্গে এমন একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাগারে আছে। এই আসামির বিচারের কারণেই হরতাল। তাই এখানে নিরাপত্তা একটু বেশি।’
চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, ‘কারাগারের আশপাশে আমাদের টহল আছে।’
প্রসঙ্গত- গত বৃহস্পতিবার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্ট। এরআগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর সংক্ষিপ্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ওই রায় দেন।
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৩:৩৩ ৩৯৪ বার পঠিত