শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৩
নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকারি দল; সম্ভব না হলে জরুরি অবস্থা
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকারি দল; সম্ভব না হলে জরুরি অবস্থাবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ শুধু বিরোধী দল নয়, জাতীয় পার্টি না এলেও নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের পক্ষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের অন্য কোনো শরিকও যদি নির্বাচনে না আসে তবুও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে দলের অন্য নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে হলেও নির্বাচন করবেন তিনি। সর্বশেষ গত বুধবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিনি এমন অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এ ক্ষেত্রে যতো কৌশল এবং ছাড় দেয়া যায় তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করে হলেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে বাধ্য করা হবে। এখন সরকারের একটাই টার্গেট নির্বাচন। দল ও সরকারের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ রয়েছেন। এ অবস্থান থেকে কোনোভাবেই সরে আসবেন না তিনি। একই সাথে বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। সে ক্ষেত্রে খুব শিগগিরই যৌথ অভিযান এবং প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারিসহ নানা বিষয় সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একতরফা নির্বাচন সফল করতে বাইরে থাকা বিরোধী দলের বাকি সিনিয়র নেতাদেরও গ্রেফতার করা হতে পারে। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকেও গৃহবন্দী এবং প্রয়োজনে কারাবন্দী করা হতে পারে। আর জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না এলে এরশাদের জন্যও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই এমন সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়া হচ্ছে বলে দল ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বলেও জানায় সূত্রগুলো।
সরকারের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, যেকোনোভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অটল সরকার। বিশেষ করে সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকা সফরের পর নির্বাচন নিয়ে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সাথে বৈঠক করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হয়েই দূতিয়ালি করতে এসেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে আবারো আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় দেখতে চায় ভারত সে বার্তা তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের কাছে সুজাতা সিংয়ের সেই বক্তব্য প্রকাশ করে দিয়েছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ কোনোভাবে নির্বাচন করে ফেলতে পারলে নতুন সরকারের স্বীকৃতির জন্য ভারত আন্তর্জাতিক মহলে তৎপরতা চালাবে। ভারতের এমন মনোভাবের পর একতরফা নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে সরকার।
সরকারের অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, ৫ তারিখ যেকোনোভাবেই নির্বাচন করে ফেলবে সরকার। তবে কোনো কারণে ব্যর্থ হলে জরুরি অবস্থা জারি করে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকবে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সটকে পড়বে সরকার। কিন্তু কোনোভাবেই বিরোধী দলের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার পথে যাবে না সরকার। এসব বিষয় নিয়ে দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাঝে ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ চলছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা আলাপকালে জানান, রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য দেশী-বিদেশী নানা চাপের মুখে সরকার সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও এখন আর সেই অবস্থানে নেই। এখন সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অটল তারা। গত বুধবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী তার সেই সিদ্ধান্তের কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও কঠোর অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনোভাবেই এ তফসিলের পরিবর্তন আমরা মেনে নেবো না। দলের শীর্ষস্থানীয় অন্য নেতারাও সরকারের এমন মনোভাবের কথা বারবার তুলে ধরছেন।
দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। কারণ, তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করেছে। কিন্তু আন্দোলনের মুখে সেই সংশোধনী থেকে সরে গিয়ে নির্দলীয় সরকার বহাল করলে আমাদের রাজনৈতিক পরাজয় হবে। কিন্তু আমাদের নেত্রী সেই পরাজয় মানতে নারাজ।
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও সংসদ সদস্য আলাপকালে জানান, গত কয়েক বছর বিএনপি সরকারবিরোধী কোনো জোরালো আন্দালন দেখাতে পারেনি। দেশের জনগণও ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচি দেখতে চায় না। তাই চলমান সহিংস আন্দালন করতে গিয়ে বিএনপি জনরোষের কবলে পড়তে পারে। এ ছাড়া সরকার একপর্যায়ে বিএনপির আন্দোলন দমন করতে পারবে বলে মনে করছে। কারণ, বিএনপি নেতাদের এক মামলা দিয়েই ঠাণ্ডা করে দেয়া যায়। তবে সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে জামায়াত। কারণ, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত কঠোর অবস্থানের পরও এ দলটিকে দমানো যায়নি। দলের চতুর্থ সারি পর্যন্ত নেতৃবৃন্দ কারাবন্দী হলেও এ দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ এবং মনোবল ভাঙতে পারেনি সরকার। তাদের ওপর যে দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার সিকিভাগও যদি বিএনপির ওপর প্রয়োগ করা হয় তা হলে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই বিএনপি নিয়ে সরকার তেমন আতঙ্কিত নয়। শুধু জামায়াতকে ‘বাগে’ আনতে পারলেই সরকারের সামনে আর তেমন কোনো বড় বাধা থাকবে না। অনায়াসেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব হবে। তাই জামায়াতকে আরো চাপে রাখতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করছে সরকার। আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তিও সেই প্রক্রিয়ার অংশ। প্রয়োজনে যেকোনো দিন ওই নেতার ফাঁসি কার্যকর করে জামায়াতের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:৩৬:১৪ ৪১৩ বার পঠিত