শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৩
ফিরলে মৃত্যু ছাড়া পথ নেই: এরশাদ
Home Page » প্রথমপাতা » ফিরলে মৃত্যু ছাড়া পথ নেই: এরশাদবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আশা করলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র নিজের কাছে জমা নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, এসব পদত্যাগপত্র শনিবার রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন তিনি।
বিএনপির অনুপস্থিতিতে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর মঙ্গলবার নাটকীয় এক ঘোষণায় সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানান জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।
পরদিন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলেন তিনি।
বুধবারের ওই ঘোষণার পর আকস্মিকভাবে বারিধারায় এরশাদের বাড়ির সামনে র্যাব-পুলিশের পাহারা বসে। এর মধ্যেই ওই বাড়িতে দলের নেতা-কর্মীর ভিড় জমে।
বৃহস্পতিবার কয়েক দফায় দলের শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাতের পর রাত পৌনে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নির্বাচন ও অবরোধ ছাপিয়ে এই সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে আসা সাবেক এই সামরিক শাসক।
এরশাদ বলেন, “আমার কাছে সবার (মন্ত্রী) পদত্যাগপত্র জমা রয়েছে। সবাই আমাকে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
“আশা করি, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরশু (শনিবার) দেখা হবে। যখন দেখা হবে, তার কাছে তা দিয়ে দেব।”
দলের চেয়ারম্যানের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় পার্টির দুই মন্ত্রী রওশন এরশাদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তবে প্রধানমন্ত্রীকে তারা পদত্যাগপত্র দেননি।
এছাড়াও জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন জি এম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম এবং মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা রয়েছেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বারিধারার বাড়িতে যান হাওলাদার, চুন্নু, সঙ্গে যান সালমা। এরপর জাপা মহাসচিব হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, তারা পদত্যাগপত্র দলীয় চেয়াপারসনের কাছে জমা দিয়েছেন, বাকিরাও দেবেন।
এরপর রাতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ যান এরশাদের বাড়িতে। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন এরশাদ।
পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়ার রীতি থাকলেও তা রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হচ্ছে কেন- জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, “আমার স্ত্রীর (রওশন) কথা হল, তারা শপথ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতির কাছে; সুতরাং পদত্যাগ করতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছেই করবেন।”
বিএনপিসহ নিবন্ধিত অধিকাংশ দলের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টির সরে দাঁড়ানোয় দৃশ্যত চাপে পড়া আওয়ামী লীগ নেতারা আশা করছেন, বারবার সিদ্ধান্ত বদলের জন্য পরিচিত এরশাদ এবারো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবেন।
সিদ্ধান্তের বদল হবে কি না- জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, “আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে গেলে মৃত্যু ছাড়া কোনো পথ নেই।”
একদিন আগেও তিনি একই ধরনের কথা বলেছিলেন। বিএনপি না গেলে নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা দেয়ার একমাসের মধ্যে তার সিদ্ধান্তের বদল ঘটে।
নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার এক সপ্তাহের ব্যবধানে উল্টো সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এরশাদ মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর রাতে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য আনিসুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিন বাবলু গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই ঘটনার কারণে রাত আনিসুল বারিধারায় এরশাদের বাড়িতে গেলে সমবেত কর্মীরা ‘আওয়ামী লীগের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান তোলে।
এতে ‘দুঃখ’ পেয়েছেন জানিয়ে এরশাদ বলেন, “এই আচরণের (কর্মীদের) জন্য আমি দুঃখ পেয়েছি। আমি ভদ্র লোকের রাজনীতি করি, অশোভন রাজনীতি করি না।”
আনিসুলের পক্ষে দাঁড়িয়ে এরশাদ বলেন, “আমার দলের সবাই জাতীয় পার্টি করে, তারা অন্য কোনো দলের এজেন্ট নয়।”
সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে থেকে প্রতিমন্ত্রী সালমার স্বামী যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুলকে আটকের চেষ্টা করায় উষ্মা প্রকাশ করেন এক সময়ে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী এরশাদ।
“সরকার মনে করেছে, আমি বাচ্চা ছেলে, অন্যের বুদ্ধিতে রাজনীতি করি। সরকার মনে করেছে, বাবুল আমাকে বুদ্ধি দেয়, তাই তাকে আটকের চেষ্টা করেছে। তিনি (বাবুল) আমার কাছে আসতেই পারেন।”
বাবুলকে র্যাবের একদল সদস্য এরশাদের বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে টানা-হেঁচড়া শুরু করলে জাতীয় পার্টির কর্মীরা তা আটকায়। পরে রুহুল আমিন তাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যান। র্যাব দাবি করেছে, বাবুলকে আটকের কোনো চেষ্টা তারা করেননি।
রাত ৯টা ২০ মিনিটে আনিসুল বেরিয়ে যাওয়ার পর এরশাদের বাড়িতে জ্যেষ্ঠ কোনো নেতা ছিলেন না। আনিসুল ভেতরে থাকা অবস্থায়ই ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন হাওলাদার। চুন্নু ও সালমা তার আগেই বেরিয়ে আসে
বাংলাদেশ সময়: ০:৩০:৫৯ ৫৩৯ বার পঠিত