সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৩
‘রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের অনিঃশেষ’
Home Page » জাতীয় » ‘রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের অনিঃশেষ’বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ঠোঁটের ফাঁকে বেরিয়ে এসেছে সাদা দাঁত, মাথায় রক্তলাল শিং; পেটমোটা বিশাল কালো সেই দানবের হাতও রক্তাক্ত। বুকে চাঁদ-তারায় হানাদার শত্রুর পরিচয় চিহ্ন।পেছনেই বিশালাকায় এক সরীসৃপ। ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ থেকে ছুড়ছে আগুন। পঞ্চাশ ফুট দেহটা চলছে এঁকেবেঁকে। স্বাধীন বাংলার সবকিছু যেন সে ছারখার করে দিতে চায়।
‘ভিনদেশী’ এ দানবদের ‘দেশছাড়া’ করে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ বাঙালি বরণ করছে বঙ্গাব্দ ১৪২০ কে।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের অনিঃশেষ’।
প্রতিবারের মতো এবারো পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা । রাজধানীবাসী ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে এসে অনেকেই যোগ দেন এই শোভাযাত্রায়।
ঢাক-ঢোল-বাঁশি বাজিয়ে, হাতির পিঠে তীরধনুক নিয়ে সওয়ার যোদ্ধা, শোলার পাখি, রিকশায় সওয়ার টেপা পুতুল, গুঁতো দিতে উদ্দত ষাঁড়, বিশালদেহী ‘রাজাকার’ আর শান্তির পায়রার মতো নানা প্রতীক সঙ্গে নিয়ে বৈশাখী সাজে এই শোভাযাত্রায় যোগ দেন সব বয়সের সব শ্রেণি পেশার মানুষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য সহিদ আখতার হুসাইন, চারকলা অনুষদের ডিন সৈয়দ আবুল বারক আলভি, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া অংশ নেন এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়।
শোভাযাত্রার নিরাপত্তা দিতে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যভস্থা নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্যরাও ছিলেন।
চারুকলা থেকে শুরু হয়ে হোটেল রূপসী বাংলা গিয়ে আবার ফিরতি পথে টিএসসি হয়ে চারুকলায় এসে শেষ হয় এ শোভাযাত্রা।
গামছা দিয়ে বানানো পাগড়ি আর পতাকায় মোড়ানো কপাল বন্ধনী দিয়ে সেজেছিল ছেলেরা। তাদের কারো কারো মাথায় কৃষকের ছইওয়ালা মাথালও দেখা যায়। মেয়েদের খোঁপায় ছিল ফুল, হাতে চুড়ি। কারো কারো গালে লাল-সাদা আল্পনা।
প্রতিবাদী স্লোগানের ফেস্টুন নিয়েও অনেকে যোগ দেন শোভাযাত্রায়। অনেকের হাতে দেশের মানচিত্রখচিত মুক্তিযুদ্ধকালীন পতাকাও দেখা যায়।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কাজের সমন্বয়ক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “এখন তো সবারই দাবি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। সেই দাবিকেই শোভাযাত্রায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রূপকের মাধ্যমে।”
“আমরা চাই বাংলা বাঙালির শিল্প-সাহিত্য-ঐতিহ্য নিয়েই চলবে। কিন্তু অশুভ শক্তি চায় এগুলো মরে যাক। আমরা বাঙালির ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই যুগ-যুগান্তর।”
শোভাযাত্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ‘ড্রাগন’ দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাবে ভাস্কর্যের এই শিক্ষার্থী বলেন, “এরা এই মাটির নয়, অন্য দেশের। ওই যে কথায় আছে- বন্যেরা বনে সুন্দর, রাজাকাররা পাকিস্তানে। যারা দেশকে ভালোবাসে না- তারা এদেশে থাকতে পারে না।”
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৯:৫২ ৫৬৪ বার পঠিত