রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৩
তারেক রহমানকে বেকসুরখালাস, মামুনের ৭ বছরের কারাদণ্ড
Home Page » প্রথমপাতা » তারেক রহমানকে বেকসুরখালাস, মামুনের ৭ বছরের কারাদণ্ডবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে, দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার (মানিলন্ডারিং) মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত। রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি জরিমানাও করা হয়েছে। পাচারকৃত ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০০২ এর ২(ঠ), (অ), (আ) ও ১৩ ধারায় এ সাজা দেওয়া হয়। রোববার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। মামলা দায়েরের ৪ বছর ২১ দিন পর এ মামলার রায় দেওয়া হলো। খালাসপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। মামুনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ মে তৎকালীন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোজাম্মেল হোসেন ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এ মামলায় তারেক রহমান পলাতক থাকায় তার পক্ষে কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়নি। গত ৮ নভেম্বর দুদকের আইনজীবী এবং ১৪ নভেম্বর মামুনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটিতে মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তারা হলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মামলার বাদী মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মামলাটির রেকর্ডিং অফিসার হোসনে আরা বেগম, ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আলীমুজ্জামান, গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির চেয়ারপারসন খাদিজা ইসলাম, পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ করিম, সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সৈয়দ এহসানুল হাফিজ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম, নির্বাহী কর্মকর্তা বিভূতি ভূষণ সরকার, ব্যাংকটির জেনারেল ম্যানেজার ওমর ফারুক ভূঞা, দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম। চার্জশিট বহির্ভূত সাক্ষী হিসাবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেসটিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ৩১ অক্টোবর মামুনের পক্ষে ৫ জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য প্রদান করেন। তারা হলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ওয়ান গ্রুপের কর উপদেষ্টা আহমেদ আজম খাঁন, ওয়ান কম্পোজিট মিলসের পরিচালক নাসির উদ্দিন মিয়া, এনামুল হক, ওয়ান টেক্সের পরিচালক আবেদ হাসান মাহমুদ ও ওয়ান স্পিনিং মিলসের পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তারেক ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এই টাকা লেনদেন হয়।
এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এই টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২৩ জুন অপর একটি অর্থপাচার মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ও সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মনকে ৬ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন একই আদালত। এছাড়াও তাদের ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
২০০৮ সালের মে মাসে কোকো সরকারের নির্বাহী আদেশে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যান। তারপর তাকে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আদালত আদেশ দিলেও তিনি ফিরে না আসায় তাকে পলাতক দেখিয়ে ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪০:২১ ৩৬০ বার পঠিত