মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৩

ইউসুফের বিরুদ্ধে ৪র্থ সাক্ষীর ফের জেরা বৃহস্পতিবার

Home Page » জাতীয় » ইউসুফের বিরুদ্ধে ৪র্থ সাক্ষীর ফের জেরা বৃহস্পতিবার
মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৩



yousuf-sm20131112143443.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে ৪র্থ সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফ আলীকে প্রসিকিউশনের অসমাপ্ত জেরার দিন বৃহস্পতিবার পুনর্নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রোববার সাক্ষ্য দেন আসামিপক্ষের মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফ আলী। ওই দিন হরতালের কারণ দেখিয়ে মোবারকের সিনিয়র আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে তাকে জেরা শুরু করেছিলেন জুনিয়র আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। মঙ্গলবার অসমাপ্ত জেরার দিন ধার্য থাকলেও একই কারণ দেখিয়ে দু’দিনের সময়ের আবেদন জানান একই আইনজীবী। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার অসমাপ্ত জেরার দিন পুনর্নির্ধারণ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

গত ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে এর আগে ইউসুফের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আরও ৩ সাক্ষী। তারা হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. লিয়াকত আলী খান, মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মজিদের পুত্র মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল আলম জাহাঙ্গীর। তাদেরকে জেরা শেষ করেছেন আসামিপক্ষ। গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউটর রেজাউর রহমান ইউসুফের বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন করেন। গত ১ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। জামায়াতের এই নেতাকে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ৪ ধরনের ১৩টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার ৫টি, গণহত্যার ৭টি এবং অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ১টি অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ৭০০ জনকে হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন এই জামায়াত নেতা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ৩০০ বাড়ি ও ৪০০ দোকান লুটের অভিযোগ করা হয়েছে।
ইউসুফের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, পরামর্শ ও প্ররোচনায় খুলনার বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ সংঘটিত হয় বলে তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগও।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশে পাকিস্তানিদের গঠিত কথিত মালেক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ইউসুফ। অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হত্যা-লুণ্ঠনে সহায়তা দেওয়ার জন্য গঠিত সশস্ত্র বাহিনীর ‘রাজাকার’ নামটি তিনিই চালু করেন।
সেই সময় কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নির্দেশে এ কে এম ইউসুফ নিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমে বৃহত্তর খুলনা জেলায় (খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট) শান্তি কমিটি গঠন করেন। পরে মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জামায়াত ও মুসলিম লীগের সদস্যরাসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করেন তিনি।
বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯৬ জনকে নিয়ে তিনি খুলনার আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্পে সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। ওই অঞ্চলের শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতৃত্ব দেন।
জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের নেতা, বৃহত্তর খুলনার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও মন্ত্রী হিসেবে ইউসুফ পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আইনটি বাতিল হলে পরে তিনি মুক্তি পেয়ে যান। এক সময় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে দলের নায়েবে আমির তিনি।
এর আগে গত ১৪ জুলাই অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা। ২৪ জুলাই অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন একেএম ইউসুফের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
গত ১২ মে প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়ে ইউসুফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন র‌্যাব সদস্যরা।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগে ১৫টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। গত ৮ মে এ অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন।
জামায়াতের এ নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৫টি অভিযোগে তদন্ত চূড়ান্ত করে গত ২২ এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটর বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১২:১১   ৩৫১ বার পঠিত