বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৩

খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অবাস্তব ধরনের

Home Page » জাতীয় » খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অবাস্তব ধরনের
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৩



sheikh-hasina1.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা অবাস্তব ধরনের। বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের ওয়াক-আউটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের এই আচরণই প্রমান করেছে তারা আলোচনা চান না। গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে বুধবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় সাংসদরা যোগ দিয়ে খালেদা জিয়ার নির্বাচনকালীন প্রস্তাব তুলে ধরেন। পরে সরকার দলীয় এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে অবৈধ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিরোধী এমপিরা ওয়াক আউট করেন। পরে সংসদ মুলতবি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়ে সূচনা বক্তব্যে বিরোধী দলীয় নেতার দেওয়া প্রস্তাবকে অবাস্তব ও অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপি সংসদে এসে প্রস্তাব দিয়ে চলে গেলেন। আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু তারা শুধু বলে গেলেন, শোনার সময় তাদের হলো না। আমার মনে হয় তারা আলোচনার জন্য আন্তরিক নয়।’ খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা অবাস্তব ধরনের বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি জানি না তিনি কিসের ভিত্তিতে এ ধরনের নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দিলেন। কারণ যাদের নাম তিনি প্রস্তাব করেছেন। তাদের অনেকে মারা গেছেন, অনেকে অসুস্থ আবার অনেকে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। রাত ৯টায় শুরু হওয়া বৈঠকে আওয়ামী লীগের ১৫ জন নেতাসহ অন্যান্য দলের ৩৬ জন নেতা উপস্থিত রয়েছেন।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, আনিসুর রহমান মল্লিক, ফজলে হোসেন বাদশা, বিমল বিশ্বাস, জাসদের হাসানুল হক ইনু, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মাঈন উদ্দিন খান বাদল, শিরিন আক্তার, সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়ুয়া, লুৎফর রহমান, ধীরেন সিংহ, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান সেলিম, শহীদুল্লাহ শিকদার, ন্যাপের আব্দুর রহমান, এনামুল হক, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির মো. জাকির হোসেন, গণ আজাদী লীগের হাজী আব্দুস সামাদ, এস.কে শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, অসিত বরণ রায় প্রমুখ।

এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় সংসদে যোগ দেয় বিরোধী দল। জাতীয় সংসদে সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া আগামী নির্বাচনকালীন সরকারের-রূপরেখা প্রস্তাবটি জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন বিএনপির সিনিয়র সংসদ সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে প্রস্তাবটি দেন তিনি।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই প্রস্তাব বিবেচনার অনুরোধ জানান।

এরপরপরই তোফায়েল আহমেদ সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি’র প্রস্তাবকে `অগ্রহণযোগ্য` বলে উল্লেখ করে বলেন, কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রস্তাব দিন, আমরা আলোচনা করবো।

তোফায়েল আহমেদ এ সময় `বিরোধী দল হোমওয়ার্ক না করেই একটি প্রস্তাব এনেছে` উল্লেখ করে বলেন, ১০ জন উপদেষ্টা পাওয়া যাবে না `৯৬ ও ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে।

`৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনকে বিএনপি চেয়ারপার্সন যে `পুকুর চুরি`বলেছিলেন, সেকথাও সংসদকে স্মরণ করিয়ে দেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এরপর জমির উদ্দিন সরকার তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য খণ্ডন না করে বলেন, প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তিনিই কথা বলবেন।

এরপর বিএনপি’র বর্ষীয়ান নেতা এমকে আনোয়ার সংসদে দাঁড়িয়ে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি `আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিবর্তন করে এই সঙ্কট তৈরি করেছে` বলে অভিযোগ আনেন।

এমকে আনোয়ারের পর ফ্লোর পান শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি সংসদকে বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিবর্তন করেনি। জাতীয় সংসদ তা করেছে। এসময় তিনি ৫ম সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে এনে জিয়াউর রহমানের সরকারকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেন।

ফজলুল করিম সেলিমের এই বক্তব্য শুনে বিএনপি ও বিরোধী দলীয় এমপিরা কোনো বক্তব্য না দিয়েই সংসদ থেকে বেরিয়ে যান।

বিরোধী দলীয় এমপিরা ওয়াক-আউট করার পর এবিষয়ে বক্তব্য রাখেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ কয়েকজন। সুরঞ্জিত বিরোধী দলীয় এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে যাওয়া সংসদ সদস্যদের জন্য অসম্ভব হবে। তবে আলোচনা অবশ্যই করা যাবে। বিধি মোতাবেক প্রস্তাবটি এলে আমরা অবশ্যই আলোচনা করবো।

পরে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন। তবে সংসদে তিনি এই প্রস্তাব বিষয়ে কোনো কথা বলেন নি। রাত ৮টা ৪৮ মিনিটে সংসদ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী।

সংসদে বিরোধী দলের প্রস্তাব নিয়ে কথা না বললেও গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকে যোগ দিয়েই এর কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩১:২২   ৩৩৯ বার পঠিত