মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৩

শেষ হল বিজয়া দশমী

Home Page » সারাদেশ » শেষ হল বিজয়া দশমী
মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৩



burigonga-bg20131014062701.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ  এসেছিলেন ঝড়-ঝঞ্জা নিয়ে। তবে যাবারকালে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা দিয়ে গেলেন মাদুর্গা। প্রতি বছর পুজো আসবে। আনন্দ-উৎসবের পাঁচদিন শেষে বিদায়ের পালা। বিজয়া দশমীর দিন বারবার এই উপলব্ধির মুখোমুখি হই আমরা। কেননা মন খারাপ করে। তবু সিঁদুরখেলা, বরণডালা দিয়ে হাসিমুখে বিদায় দিতে হয়। যাকে কেন্দ্র করে কয়েকটা দিন এত আনন্দে কাটল, সময়ের নিয়ম মেনে আজ তাঁকেই চলে যেতে হবে। কোনও কিছু নতুন করে পেতে গেলে যে বারবার হারাতে হয়- একথা লিখে গিয়েছেন বাঙালির আরেক প্রাণের ঠাকুর। সেই কথা দুর্গামায়ের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও খাটে। এলে তো যেতেই হবে। সেই সার সত্যকে মেনে নিয়েই বিজয়ার এত আয়োজন।

অসুরবিনাশী মাদুর্গা যে ক’দিন পিতৃগৃহে ছিলেন ঢোলের বাদ্য, উলু আর কাশার ধ্বনিতে ভক্তি আর আনন্দ মূর্ছনা দুই-ই জাগিয়েছেন ভক্তদের মনে । বিসর্জনের আগেও চলেছে ঢাক, শঙ্খধ্বনি, মন্ত্র পাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি প্রদান, নৃত্য, মায়েদের সিঁদুর খেলা।

ভক্তরা সোমবার ধান, দুর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানালেন । আসছে বছর বসুন্ধরায় আবার এই সময় ফিরে আসবেন মা- এই আকুল প্রার্থনায় ভক্তরা চোখের জলে বিদায় দিয়েছেন জগজ্জননীকে।

এদিন বিকেলে আনন্দ-বেদনা মিশিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে বিজয়ার শোভাযাত্রা, প্রতিমা বিসর্জনসহ সকল আয়োজনেই করেছেন ভক্তরা। সবার কামনা সুন্দর এই পৃথিবীতে অশান্তি, দুঃখ-বেদনা দূর হয়ে থাকবে শুধুই সত্য। থাকবে না হানাহানি ও সাম্প্রদায়িকতা।

প্রতি বছর আশ্বিন-কার্তিকের পঞ্চমী থেকে দশমী তিথির পাঁচটি দিবস `জগজ্জননী` উমা দেবীর পিতৃগৃহ ঘুরে যাওয়া। পাঁচ দিনের শারদ উত্সব এবার শেষ হল ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে।

ঢাকায় বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা ওয়াইজঘাটে দেবী বিসর্জন দেওয়া চলবে। তার আগে রাজধানীর অধিকাংশ প্রতিমা নিয়ে ঢাকেশ্বরী থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে প্রতিমা বিসর্জন।

কেন্দ্রীয প্রতিমা বিসর্জন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক রজত কুমার শূর জানান, ওয়াইজঘাটে ১০৩টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। এ সময় মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানীতে দুর্গাপূজা এক সময় শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ ছিল পুরান ঢাকার কোতোয়ালি এলাকায়। বিগত কয়েক বছর ধরে পুরো ঢাকায় পূজার আয়োজন হচ্ছে মহাসমারোহে।

শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ আশ্রম, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, ধানমন্ডি সর্বজনীন পূজা কমিটি, গুলশান বনানী সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, কলাবাগান সর্বজনীন পূজা উত্সব, রমনা কালীমন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ও ব্যক্তিগতভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে উত্সবমুখর পরিবেশে।

আলোকসজ্জা আর নানা কারুকার্যে সজ্জিত হয়ে ওঠে প্রতিটি মণ্ডপ। গত ৫ বছর ধরে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বাসিন্দারা এবারও বনানী খেলার মাঠে জাঁকজমকভাবে পূজার আয়োজন করেন গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা উত্সবের ব্যানারে।

এ বছর সারাদেশে ২৯ হাজারের বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২১২টি। গতবছর এ সংখ্যা ছিলো ২০২টি।

ঢাকায় বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পুজো কমিটির উদ্যোগে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া চলছে। পুরানো ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার স্নানঘাট দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিকেল থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়।

ওই এলাকাটি ঢাকের শব্দে আর ধূপের গন্ধে মুখরিত হয়ে ওঠে। বিসর্জন চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। এ উপলক্ষে ওয়াইজঘাট ও বুড়িগঙ্গা নদী এলাকায় জোরদার করা হয় নিরাপত্তা।

শেষবারের মতো দেবীর আশীর্বাদ কামনায় নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সের ভক্ত নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করেন। কীর্তন-শ্যামা সঙ্গীতের মধুর সুর আর ভক্তদের উল্লাসে পুজোমণ্ডপ ছিল মুখরিত।

এদিন নগরীর বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে লোকজনকে প্রতিমা দর্শনের জন্য আসতে দেখা গেছে। সধবা নারীদের দেখা যায় সিঁদুর দিয়ে দেবীর পা রাঙিয়ে সেখান থেকে একফোঁটা নিজের কপালে লাগাতে।

পুজো উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পুজো কমিটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়িয়ে যেতেই ভক্তরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পুজোমণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে।

ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পুজোমণ্ডপ থেকে আসা প্রতিমা নিয়ে ট্রাকগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায় রাস্তায়। প্রতিটি ট্রাকে দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমাও ছিল। সেই সঙ্গে উৎফুল্ল ছিল বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ।

ভক্তরা নেচেগেয়ে শোভাযাত্রাকে আরও বর্ণিল করে তোলেন। সম্মিলিত বাদ্য-বাজনা, মন্ত্রোচ্চারণ ও পুজো-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা। বুড়িগঙ্গার দুই তীরে হাজারও ভক্ত ও দর্শনার্থী প্রতিমা বিসর্জন দেখতে ভিড় করেছেন। অনেকে প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় করে নদীতে আনন্দ করেন।

দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বার্ষিক লক্ষ্মীপূজার দিন। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উত্সবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি।

ভক্তরা দুর্গতি নাশিনী দুর্গা মাকে আহ্বান করে বলে - ‘মাগো, তুমি আমাদের দুর্গতি নাশ করে দাও, আমাদের মানসপটে লালিত-পালিত হিংসা বিদ্বেষ-হানাহানি দূর করে দাও। আমাদের শক্তি দাও, আমাদের শান্তি দাও’।

পৌরাণিক মতে, দুর্গাদেবী হলেন ব্রহ্মার মানস কন্যা। যখন সংসারে অসুরের রাজত্ব চলছিল, চারদিকে অসুরের জয়, অসুরের দাপটে মানবকূল ত্রাহি ত্রাহি করছিল, অসুর তাদের আসুরিক বৃত্তি দ্বারা সবার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল, শান্তি-সমৃদ্ধি হিংসার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।

সেই আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল মানুষের ভাল গুণ বা মানবীয় সত্ত্বা। তখন দেবী দুর্গাকে সৃজন করে ব্রহ্মা তাকে সর্বশক্তিতে ভরপুর করে অসুর বিনাশের জন্য মর্ত্যে প্রেরণ করেছিলেন। তখন দুর্গা দেবী তার দিব্যশক্তির দ্বারা আসুরী শক্তি বা অপশক্তিকে (অসুরকে) পরাভূত করে পুন:শান্তির জন্য সামর্থ হয়েছিলেন।

এবার মাদুর্গা আমাদের মাঝে এসেছিলেন দোলায় চড়ে যা ছিল অশুভ। শাস্ত্রমতে- এতে করে মর্তে ঝড়-দৈব-দুর্বিপাক, অস্থিরতা, মড়কসহ নানা অশনি সংকেত বহন করে।মর্তে মা থাকতেই আঘাত হেনেছে পাইলিন।

তবে বিপদের বার্তা সত্বেও সুখবর হচ্ছে- মা বাবার বাড়ি অর্থাৎ মর্ত থেকে স্বামী গৃহ কৈলাস যাচ্ছেন গজে চড়ে। দেবী হাতিতে এলে বা গেলে সুখসমৃদ্ধি বয়ে আনেন। আশার কথা হচ্ছে- এতে করে আগামী বছরটা ধন-ধান্যে শস্যপূর্ণ থাকবে আমাদের এই বসুন্ধরা। আর দেবীর নৌকায়েআসা-যাওয়ার অর্থ বসুন্ধরা হয়ে উঠবে শস্যপূর্ণ।

বাংলাদেশ সময়: ০:৩৮:৫৩   ১১৬২ বার পঠিত