মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৩

দফায় দফায় বাড়ছে বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল প্রকল্পের ব্যয়

Home Page » জাতীয় » দফায় দফায় বাড়ছে বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল প্রকল্পের ব্যয়
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৩



download-2.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ দফায় দফায় বাড়ছে ‘বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয়। প্রকল্পটির ৩য় সংশোধনের জন্য শেরে বাংলানগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের উপ-একনেক (পিইসি) সভায় ওঠানো হয়েছে। এতে করে আবারও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে প্রকল্পটির।

মূল প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। মূল প্রকল্প থেকে প্রথম সংশোধনীতে  ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ে ২৬৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এখন ৩য় সংশোধনীতে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে  ২ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। একের পর একর প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে প্রকল্পটি তৃতীয় বারের মতো সংশোধন হতে যাচ্ছে।

তৃতীয়বারের মতো সংশোধনীর জন্য একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি ওঠানো হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সহকারী প্রধান (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) আবুল বাকের মোহাম্মদ তৌহিদ বঙ্গনিউজকে বলেন, অতিরিক্ত ৮ দশমিক ৯২ একর জমি ক্রয় করার কারণে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে। খুব শিগগিরই একনেক সভায় ৩য় সংশোধনীর জন্য প্রকল্পটি ওঠানো হবে।

সার্বিকভাবে প্রকল্পের প্রস্তাবিত মেয়াদ ১ বছর ৬ মাস বৃদ্ধির ফলে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অধীনে প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং বিভিন্ন ধরনের খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পের অবকাঠামোতে নানা ধরনের নতুন নতুন কাজ সংযুক্ত হয়েছে। যার ফলেও প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে।

৩য় সংশোধনীতে ২৬৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আবুল বাকের মোহাম্মদ তৌহিদ জানান, সরকারি তহবিল থেকে প্রকল্পের ব্যয় মেটানো হবে। তবে মোট ২ হাজার ২৩৭ কোটি টাকার মধ্যে জাপান সরকার ১৫০ কোটি টাকা অনুদান সহায়তা দিচ্ছে।

চলমান প্রকল্পটি ২০০৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়েছে এবং ২০১৪ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বার বার সংশোধন ও ব্যয় বাড়ার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ
প্রকল্পটিতে নতুন করে হাতিরঝিল সংলগ্ন রামপুরা ব্রিজের যানজট নিরসনকল্পে উত্তর বাড্ডা ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে দুটি ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কারণে প্রকল্পটি এলাকার জমির পরিমাণ ৭ দশমিক ৫৭ একর বৃদ্ধি করতে হবে। এ কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।

এদিকে হাতিরঝিল প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হলেও আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। যেমন প্রকল্পের জলাশয়ে পানি পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য কাজ। এ কাজ শেষ করতে গুলশান লেকের সঙ্গে হাতিরঝিল লেকের সংযোগস্থলের প্রশস্থতা বৃদ্ধি ও এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে আরও ১ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এছাড়া বৌবাজার-তেজগাঁও এবং নিশান মোড়-হাতিরঝিল দু’টি সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরো  ০ দশমিক ১৯ একর জমি অতিরিক্ত  অধিগ্রহণ  করা হবে।

প্রকল্পের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য রক্ষার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও প্রকল্প এলাকায় ১০টি পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনার কারণেও বাড়বে ব্যয়।

সংশ্লিষ্ট খাল দিয়ে বিভিন্ন এলাকার ভাসমান ময়লা মিশে যেন খাল দূষণ না করে, সেটাও রোধ করা হবে। খালে ময়লা জমে যেন খালের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি না করে সেজন্য স্পেশাল ডাইভারশন স্ট্রাকচারের(এসএসডিএস) মুখে ৪টি মেকানিক্যাল স্ক্রিন স্থাপন করা হবে।

এছাড়া প্রকল্পের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ২০টি ফোয়ারা স্থাপন ও ৪টি ঘাস কাটার যন্ত্র (এইরেটর) ক্রয় করা হবে। এসব কারণেও এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলে জানা গেছে।

হাতিরঝিল প্রকল্পের সাতকাহন
রাজধানীর রমনা, তেজগাঁও, খিলগাঁও এবং বাড্ডা এলাকাকে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন’ প্রকল্পটি। এর আওতায় প্রকল্প এলাকার স্টর্ম ওয়াটার রিটেশন ও বন্যা প্রতিরোধকল্পে বেগুনবাড়ি খাল ও হাতিরঝিল এলাকার মধ্যবর্তী নিম্ন এলাকা খনন ও উন্নয়ন করা হচ্ছে।

ওয়েস্ট ওয়াটার ডিসপোজাল ইস্যু বিবেচনা করে সমগ্র এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন এবং ঝিলের পাড় উন্নয়ন করা এর উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে প্রকল্প সন্নিহিত এলাকার যানজট নিরসনকল্পে হাতিরঝিল এলাকার চারদিকে ইতোমধ্যে সড়ক, সেতুসহ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি হাতিরঝিলের খালের পানি স্বচ্ছ, পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত করার কাজও এর আওতায় করা হবে।

চারটি সংস্থা যৌথভাবে বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সেগুলো হলো- রাজউক, এলজিইডি, ঢাকা ওয়াসা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন(এসডব্লিউও)।

প্রকল্পের ৩১১ দশমিক ৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করছে রাজউক। এছাড়া ১০ লাখ ৭৭১ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হচ্ছে। ২৯ লাখ ৪০ হাজার বর্গমিটার সাইট প্রটেকশন করার লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। এছাড়া একটি জিপ কেনার পাশাপাশি ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৭ ঘনমিটার অস্থায়ী নির্মাণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করছে রাজউক।

অন্যদিকে ১০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মেইন সুয়ার লাইন ডাইভারশন, ১২টি স্পেশাল ডিভিশন স্ট্রাকচার নির্মাণ, ৭ কিলোমিটার সিয়ার ডাইভারশন, ২০টি ফাউন্টেন ও ৪টি এরেটর ক্রয়, ১০টি পাম্প ক্রয়, পানি সরবরাহ, ১টি পিক-আপ, ৩টি মোটরসাইকেল ক্রয়সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা।

৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, ৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে, ৪৭৭ মিটার ব্রিজ, ৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার ফুটপাথ, ৪০০ মিটার ওভারপাস, ২৬০ মিটার ভায়াডাকড, ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের কাজ করার দায়িত্ব এলজিইডি’র।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের (এসডব্লিউও) কাজের মধ্যে রয়েছে ব্যারাক নির্মাণ, ২টি পিক-আপ ক্রয় ও ২টি পিক-আপ ভাড়া, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ক্রয় করা। প্রকল্পে এসডব্লিউও’র ওপর অর্পিত প্রায় সকল কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৬:০০   ৫২৯ বার পঠিত