শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০১৩
৫১ শতাংশ ভোটার চায় ভোটকেন্দ্রে-আ.লীগ
Home Page » জাতীয় » ৫১ শতাংশ ভোটার চায় ভোটকেন্দ্রে-আ.লীগবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা বর্জন ও প্রতিহত করা হবে বলে বিএনপির ঘোষণাকে আমলে নিচ্ছে না সরকার; বরং প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়াই সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। দলটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ভোটকেন্দ্রে ন্যূনতম ৫১ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার কর্মকৌশল নিয়ে ভাবছে এখন। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে এ অবস্থানের কথা জানা গেছে।আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়টিকে খুব বড় করে দেখছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। দলীয় নেতারা মনে করেন, নির্বাচনে কে এল আর এল না, সেটা বড় কথা নয়। কেন্দ্রে মোট ভোটারের ৫১ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব ভোট পড়লে ওই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। তাই ৫১ শতাংশের বেশি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে নেওয়াকেই এখন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা বিষয়টি স্বীকার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে মোট ভোটারের অর্ধেকের বেশিসংখ্যক ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে নেওয়া। জনগণকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নেওয়া সম্ভব হলে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ নেওয়া না নেওয়া নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।’
সরকারের এ অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সব সরকারই চায় পুনর্নির্বাচিত হতে। সেটা জনগণের মন জয় করে হওয়া এক কথা, আর বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকা অন্য কথা। এটা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ব্যবস্থার বিরোধী। তিনি বলেন, প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে যদি খুব প্রগতিশীল সরকারও প্রতিষ্ঠিত হয়, তা দীর্ঘ মেয়াদে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন হয় কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের আগ্রহ রয়েছে। অনেকের ধারণা, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে শেখ হাসিনা কূটনৈতিক চাপে পড়তে পারেন। এরই মধ্যে তিনি দেশে ফিরেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলেছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আগের মতোই প্রধানমন্ত্রী অনড়।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক, তা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ চায় না। সর্বশেষ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে দলীয় শীর্ষ পর্যায়ে আত্মবিশ্বাসে যথেষ্ট চিড় ধরেছে। বিশেষ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা জিততে পারেননি। এরপর দলীয় নেতাদের মধ্যে কিছুটা ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের অনেকেরই ধারণা, বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের ফল ভালো হবে না। আর নির্বাচনে বিজয়ী না হতে পারলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত হবে। দলগতভাবে আওয়ামী লীগও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা জানান, নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করল কি না, বা করলেও কী পরিমাণ মানুষ অংশ নিতে পারেন, সে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা এখন কাজ করছেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও ভোটকেন্দ্রে ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া যায়, ভেতরে ভেতরে তার কর্মকৌশল ঠিক করার কাজ চলছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৪০ ভাগের মতো ভোট পেয়েছেন। আগামী নির্বাচনে মিত্র দলগুলোকে নিয়ে ৫১ ভাগ ভোটার উপস্থিত করানো যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা মনে করেন, আওয়ামী লীগের দলীয় ভোট ৪০ শতাংশ থাকলেও গত সাড়ে চার বছরে নানা কারণে অন্তত ৫-৬ শতাংশ ভোট দলটি হারিয়েছে। এখন ৩৫ শতাংশ ভোট নিয়ে সংসদ নির্বাচনে ৫১ শতাংশের অধিক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করাটা একটি চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন এই নেতা।
অন্যদিকে বিএনপির নেতারা মনে করেন, সংসদ বহাল রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। তাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, মুখে সংলাপের কথা বললেও নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার কোনো আগ্রহ প্রধানমন্ত্রী বা সরকারি দলের নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা বা সংলাপের কোনো উদ্যোগও নেওয়া হবে না। তবে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল এ বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে সরকারি দল তাতে অংশ নেবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়েই নির্বাচনের পক্ষে। বরং বিএনপি নির্বাচন করতে চায় না। তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৬:৪৬ ৩৯০ বার পঠিত