রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩

নিশীর নিশী জগত এবং একটি ডাইরী-মাহমুদ উন নবী তালুকদার

Home Page » ফিচার » নিশীর নিশী জগত এবং একটি ডাইরী-মাহমুদ উন নবী তালুকদার
রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩



1371569_10151759025128393_1096792179_n.jpg বর্ষা কালের পড়ন্ত সময়। তবুও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।আনুমানিক রাত দুটো বা আড়াইটা। রাজধানীর পল্টন থানার গেটে সেকেলে ধরনের অস্ত্র নিয়ে দুজন কনস্টেবল ডিউটি করছে।ভেতরে শুধু অফিসার ইনচার্জ বসে ছক কষছেন কিভাবে আগামী কালকের মধ্যে এস.বির কর্মকর্তা সালাম ও তার স্ত্রী রেহানার খুনীদের গ্রেফতার করা যায়। গতকাল গভীর রাতে নিজ বাসায় এ দম্পতি খুন হন। কিছুক্ষণ আগেও এস বি অফিস থেকে কড়াকড়ি ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ক্রিমিনালদের গ্রেফতারে কোন রকম গাফলতি না করতে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে, গেটে একটি রিঙ্া এসে দাড়াল। রিঙ্াওয়ালাকে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে এক নারী গেটে দাড়ানো কনস্টেবলদের জিজ্ঞাসা করল ‘অফিসার আছেন ? ওড়না দিয়ে মুখ মন্ডল পেচানো, হাতে একটি ডায়রী, বুঝা যাচ্ছিল না বয়স্কা না যুবতী। পরিচয় জানতে চাইলে ‘আমি অফিসারের সঙ্গে জরচ্রী দেখা করতে চাই’ বলেই হনহন করে সরাসরি অফিসারের কক্ষের দিকে চলে গেল। হয়ত কোন ভিকটিম নিতান্ত সমস্যা না পড়লে এভাবে কি আর এত রাতে আসবে, এই ভেবে প্রহরী দুজন কিছু না বলে একে অপরের দিকে মুখ ভেংচিয়ে তাকিয়ে রইল। দরজা খোলাই ছিল, ‘আসতে পারি ? বলে আগন্তক মেয়েটির অনুমতি প্রার্থনা। জি আসুন, এক নজর তাকিয়ে ইশারায় সামনের চেয়ারে বসতে বললেন অফিসার। মেয়েটি ডায়রী খানা টেবিলে রেখে মিনিট খানিক নীরব হয়ে বসে রইল। ফাইলে গভীর মনোযোগী অফিসার বলল ‘ জি বলুন কি করতে পারি? মেয়েটি কোন কথা না বলে ডায়রীটা অফিসারের হাতে দিলো। অফিসার ডায়রীর এ পাতা ও পাতা উল্টিয়ে বলল ‘ বুঝতে পারছি এটা একটা ডায়রী কিন্্তু আপনার অভিযোগ না বলে এ ডায়রী টা কেন আমাকে দিলেন ? মেয়েটি তখনও ওড়নায় মুখ মন্ডল ঢেকেই রেখেছে। সে বলল ‘ দয়াকরে ডায়রী খানা পড়ুন তবেই আমার অভিযোগ কি তা বুঝতে পারবেন। ‘সারপ্রাইজিং ম্যাটার তো! আপনার ডায়রী পড়ার সময় আমার নেই, প্লিজ আপনার অভিযোগ কি তা বলুন আমি লিখে রাখছি। নাছোড় বান্দা মেয়েটি কিছুতেই ছাড়ছেনা, অফিসারকে হাত জোড় করে পিড়াপিড়ী করতে লাগল ‘দয়া করে না করবেন না।’ যত সব ডিসগাস্টিং ম্যাটার’ বলেই ডায়রীর মলাটের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল তারপর বিড় বিড় করে বলল ‘আট বছরের পুরোনো ডায়রিতে কি না জানি হিস্টোরী লেখেছেন যে আমার কাজ ফেলে রেখে পড়তে হবে ? প্রথম পাতা খানা উল্টিয়ে একটি শিরোনাম লেখা পড়ল ‘ আমার শৈশব থেকে দ্বিতীয় বছর’ তারপর এক নজর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আবার পড়তে লাগল, ‘আমার জন্ম ১৯৯৫ সনের আগস্ট মাসে। জন্ম স্থান ফরিদপুরে সরকারী স্টাফ হসপিটালে। যদিও আমার গ্রামের বাড়ী ছিল ময়মনসিংহে। আমার বাবা ছিলেন ফরিদপুর সদর থানার সাব ইনসপেক্টর আর মা, আমি তার গর্ভে থাকতেই বি.সি.এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলেন। আমার বয়স যখন ছয়মাস তখন আমার বাবা ঢাকায় বদলী হয়ে চলে আসেন আর আমার দ্বিতীয় বছরের শুরচ্তে মা মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে সহ-সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এ পর্যন্ত পড়ে অফিসার আবার মেয়েটির দিকে তাকায় তারপর বলল’ শৈশবের নিজের এসব ঘটনা কার কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন? আমার দাদীমা,মানে আমার দাদীমার নিকট থেকে এসব জেনে নিয়েছি, কারন আমার বাবা অথবা মা কেউ আমার সংেগ তেমন ফ্রি বিহেবিয়ার ছিলেন না তো এ জন্যেই। যখন আমার বয়স সাত বছর তখন আমার স্নরন শক্তির দরজা একটু করে খুলতে থাকে এর পরের ঘটনা গুলি আমি নিজেই বিবৃতি করেছি আর আমি এ ডায়রি লেখা শুরচ্ করি আমার বয়স যখন চৌদ্দ, একথা বলেই মেয়েটি আবার অফিসারকে অনুরোধ করতে লাগল ‘ প্লিজ আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে বাকী অংশ টুকু পড়ুন। অফিসার আর কোন কথা না বলে আবার ডায়রির পাতায় মনোযোগী হলেন- ‘ ঢাকায় সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারে আমি,বাবা-মা, দাদীমা ও দুজন গৃহপরিচারিকা থাকতাম। দাদীমা খুবই অসুস্থ ছিলেন এজন্যে তার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমাকে কোলে পিঠে আদর করতে পারতেন না। গৃহপরিচারিকাগনই ছিল আমার খাওয়া,ঘুম ও খেলার সাথী। মাসিক মোটা বেতনের বিনিময়ে তাদের দায়সারা গোছের যত্ন আত্নির মাঝেই আমি বড় হচ্ছিলাম। কারন আমার বাবা মা ছিলেন সারাদিন অফিসিয়াল কাজকর্মে ব্যস্ত,তাদের সময় কোথায় আমাকে সঙ্গ দেবার ? সন্ধ্যা হলেই চাতক পাখীর মত চেয়ে থাকতাম বাবা- মার জন্য। কেউ দরজায় কড়া নাড়লেও বাবা-মা আসছে মনে করে বুয়াদের তাড়া দিতাম দরজা খোলার জন্য। যখন দেখি তারা আসেন নি অবূঝ মনে ডুকরে কাঁদতাম। অফিস থেকে মা আসার পরও আমার দিকে তার তেমন খেয়াল থাকতনা, সব দায়বদ্ধতা যেন বুয়াদের উপরেই ছিল। মাঝে মধ্যে দাদীমার বকাঝকাতে মা আমাকে একটু আধটু সময় কোলে রাখতেন। ছুটির দিন গুলোতেও বাবা-মা বাসায় থাকতেন না অমুক জায়গায় পাির্ট,অমুক জায়গান অপারেশন ইত্যাদী বলে তারা বাইরে চলে যেতেন। আর এভাবেই কেটে যায় আমার তৃতীয় ও চতুর্থ বছর। পঞ্চম বর্ষে বাবা আমাকে ঢাকার এক নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে প্লে গ্রচ্পে ভর্তি করিয়ে দেন। বাবা হয়ত ফাঁকে ফাঁকে যেতে পারলেও মূলত বুয়ারাই আমার আনা নেওয়ার কাজ করতেন। ভর্তির পর পরই বাসায় আমার জন্য একজন ম্যাডাম রেখে দেওয়া হয় যার কাছে খেলার ছলে তার কোলে বসে ইংলিশ,বাংলা ইত্যাদী পড়তাম। একটি কথা বলে রাখা দরকার আমার বাবা-মা আমার জন্য খরচের ব্যাপারে কখনও কোন রকম কার্পন্য করতেন না। শৈশব থেকে আমার জানামতে আমার কোন আব্দারই অগ্রাহ্য করেননি। কিন্তু পেতাম না তাদের নিকট হতে শিশু মনে অপূর্ণতা পূরনের কোন ঐকান্তিকতা। তবে অল্পদিনে যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মত হল, তা হচ্ছে আমাদের স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম; তিনি আমাকে মাতৃস্নেহের পরশে অনেকটাই স্পেশাল টেক কেয়ার করতেন, হয়ত শুরূ থেকে নিজেকে মেধাবী হিসেবেই পরিচিত করেছিলাম এই জন্যে। এভাবে কেটে যায় প্রাইমারী গন্ডির শেষ পর্যায়ে। পঞ্চম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় আমার ছোট ভাই নির্ঝরের জন্ম হয়। মা এবার ছয় মাসের ম্যাটারনিটি লিভ নিলেন। কিন্তু ছয় মাস পরে নির্ঝরের ভাগ্যও আমার মতই হতে লাগল তার মানে তাকেও গৃহপরিচারিকাদের তত্বাবধানে লালিত হতে লাগল।দাদীমার নিজের শারিরিক অবস্থা খারাপ হলেও তার এই আধমরা অবস্থাতেও আমাদের দু ভাইবোন কে যেন জীবনের চেয়ে বেশী মনে করতেন। সর্বাবস্থায় বুয়াদেরকে আমাদের ব্যাপারে খেয়াল রাখার জন্য তাগাদা করতেন। বছর শেষ হওয়ার আগেই বৃত্তি পরীক্ষা হল। একমাসের মধ্যে ফলাফল বের হলে আমাকে নিয়ে হইচই বেধে যায়। পরে জানতে পারলাম, আমি এ প্রতিষ্ঠান থেকে এই প্রথম ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আমার কৃতিত্বের ফলাফল ছবি সহ পত্রিকায় প্রকাশ করলেন। আমাকে নিয়ে স্কুলে একটি অনুষ্ঠানও হয়েছে সেই অনুষ্ঠানে ম্যাডাম আমাকে একটি ডায়রী দিয়েছেন। আজকের যে কথাগুলি লেখছি এটা হলো সেই ম্যাডামের দেয়া ডায়রী। আমার বৃত্তি প্রাপ্তিতে আমার বাবা মাও খুব খূশি হয়েছেন এবং তার পরদিন আমাকে একটি দামী লেহেং্‌গা কিনে দিয়েছেন, কিন্তু সত্যি বলতে কি তারা খুশি হলেও সেটা যেন আমার মধ্যে তেমন দাগ কাটেনি। শুধু বার বার ম্যাডামের ঐকান্তিক আদর-স্নেহ আর তার ছোট গিফট ডায়রি খানাই যেন আমার কাছে অনেক প্রাপ্তি মনে হতে লাগল। এরই মধ্যে নির্ঝরের বয়স এক বছর পূর্ণ হল। আমার বৃত্তি প্রাপ্তি ও নির্ঝরের জন্মদিন দুটোকে উপলক্ষ্য করে বাবা একটি বড় পার্টি দিলেন,যাকে বলে জমকালো পার্টি। বেশ এলিট শ্রেনীর লোককেই আমন্ত্রন করা হয়েছিল এছাড়া দুজন নামকরা কন্ঠ শিল্পীও এসেছিলো। অনুষ্ঠানে আমরা দু ভাইবোন বেশ দামী গিফট পেয়েছি। আমার জন্মের পর এই প্রথম সেদিন আমরা একসংেগ গ্রূপ ছবি উঠেছিলাম, সোফায় বসা আমি বাবার কোলে আর নির্ঝর ছিল মায়ের কোলে। সেই ছবিটার একটি কপি আজও আমার ডায়রীতে রেখে দিয়েছি। ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হলাম ঢাকার নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। স্কুলটি বাবার অফিসের যাওয়ার রাস্তার কাছে হওয়ায় প্রায় বাবার সাথেই স্কুলে যাওয়া হয়।তবে ছুটি হলে শুধু ড্রাইভার আমাকে বাসায় নিয়ে আসতো। এ কয়েক বৎসর বাবা দু বার প্রমোশন পেয়েছেন সর্বশেষ গত বছর আগে স্পেশাল ব্রাঞ্চে যোগদান করেছেন। এখন আর বাবার সংেগ তেমন যাওয়া হয়না,মূলত বাবা-মা দুজনের সংেগই দুরত্বটা আরও বেশী বেড়ে গেছে।আমিও যেন এখন আরো বেশী একাকিত্ব অনুভব করছি। সাধারনত বয়ঃসন্ধি কালে মা-মেয়ের সম্পর্ক আরও বন্ধুর মত হওয়ার কথা কিন্ত আমার জন্য সেটা ছিল একটা দুরাশার ব্যপার। নবম শ্রেনিতে পড়াকালীন মা নির্ঝর ও আমাকে নিয়ে গেলেন নিকটে একটি প্রতিষ্ঠিত কিন্ডারগাটেনে নিঝর্র এর ভর্তি ব্যাপারে। ভর্তির যাবতীয় কাজ সেরে আমরা একটি ফাষ্টফুডে বসে খেতে বসেছি হঠাৎ নজরে এল পাশের চেয়ারে বসা একটি সুদর্শন ছেলে কি যেন খাচ্ছে আর আমার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে। আমি নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলাম, কিছুক্ষণ পর দেখি সে আমার দিকে তাকিয়েই রয়েছে। বিষয়টি বিব্রতকর লাগছিল বিধায় মাকে ইশারায় বলতেই ছেলেটি টের পেয়ে অন্যদিকে তাকাল। তবে সত্যি বলতে কি, ছেলেটির এমন আচরন সত্বেও তাকে যেন বার বার আড়চোখে দেখতে লাগলাম। শুধু তাই নয় মাঝে মধ্যে নির্ঝরকে আমি আনা -নেয়ার সময়ও এদিক ওদিকে তাকিয়ে সেই ছেলেটিকে পরোক্ষ ভাবে খোঁজ করতাম। একদিন নির্ঝরকে স্কুলে পৌছে দিয়ে যেই গাড়ীতে উঠছি অমনি দেখি সেই ছেলেটা পাশে দাড়িয়ে মোবাইলে কার সংেগ যেন কথা বলছে।অজান্তেই যেন তাকে ভাল লাগছিল কিন্তু পরিচয় নেই, কথা নেই তাই নিজের মধ্যেই ভাল লাগা বিষয়টি চাপিয়ে রাখলাম। তবে বেশীদিন এরকম আর থাকল না। কারন আর একদিনের কথা, নির্ঝরকে স্কুলে রেখে আমি আবার কিছুক্ষনের জন্য সেই ফাষ্টফুডের দোকানে ঢুকলাম হালকা কিছু খেয়ে নেবার জন্য। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেটি বসে আছে ঠিক আগের মতই আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। আমি কিছুটা যেন আনমনা ভাব নিয়ে খাওয়া শেষ করলাম। ইতোমধ্যে সেও আমার কাছে এসে পড়েছে’ হ্যালো,বলতেই একটু চমকে উঠি,আমিও কাঁপা গলায় বললাম’ হ্যালো’। আমি টনি,আমার বাসা এ এলাকায়। তিতুমীর কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ি, আমার ছোট ভাই এ স্কুলে পড়ে আমি তাকে নিতে আসছি। আপনারও নিশ্চয় কেউ এখানে পড়ে ? সে এক যোগে এ সব বলল। ‘ জি,আমার ছোট ভাইও এখানে পড়ে।ও কে আসি তাহলে’ বলেই দোকানের ম্যানেজারকে বিল দিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গাড়ীতে উঠলাম। গাড়ীতে বসে ভাবলাম নিশ্চয় কোন বনেদী পরিবারের ছেলেই হবে। এভাবে পর পর কয়েকদিন তার সংেগ দেখা হল,কথাও হল এবং এক পযার্য়ে তার সংেগ যেন অঘোষিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠল। যদিও সে হিসেব মতে আমার চার বছরের সিনিয়র কিন্তু তার মানসিকতা সত্যিই বন্ধুবৎসল। বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত-মানসিক সমস্যায় পড়লে আমার প্রতি তার হাত যেন সেভাবেই প্রসারিত হত। ধীরে ধীরে আমিও তার প্রতি গভীর ভাবে ইমপ্রেসিভ হতে থাকলাম তবে তা ছিল দেখা সাক্ষাতের সময়েই। সম্বোধনও হয়ে পড়ল আপনি থেকে তুমি, কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় ফোনে তেমন কথা বার্তা হত না। যাহোক,এরই মধ্যে আমার দাদী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ায় গ্রামের বাড়ী থেকে আমার চাচা এসে তাকে নিয়ে গেলেন কারন আমার বাবা-মা তারা এত ব্যস্ত ছিলেন যে তাকে সেবা করা দুরে থাক তার পাশে পাঁচ মিনিট সময় দেয়াটাও যেন অসম্ভবপর হয়ে পড়ছিল। দাদীমার চলে যাবার সাথে সাথে বুয়া দুজনেও চলে গেল। বাসাটা পূরোদস্তর ভূতুড়ে পরিবেশ হয়ে পড়ল, আমারও প্রচন্ড খারাপ লাগত দাদীমা চলে যাওয়াতে।তাছাড়া নির্ঝরকে দেখাশুনার ব্যপারটা এমন হল যেন আমাকে কয়েকদিন ক্লাশ মিস করার মত অবস্থা। অনেক কষ্টে চাচা গ্রামের বাড়ী থেকে একজন কাজের মেয়ে সংগ্রহ করে দিলেন। তার নাম শাপলা। গ্রামের মেয়ে হলেও সে বেশ স্মার্ট,কথাও গুছিয়ে বলতে পারে সুন্দর ভাবে। অল্প দিনেই সে আমার দারূন ভক্ত হয়ে গেল। শুধু ভক্ত নয় বিশ্বস্থও বটে। তখন আমার এস.এস.সি পরীক্ষা চলছে। কখনও বাবা আবার কখনও মা আমাকে হলে পৌঁছে দিতেন কিন্তু পরীক্ষা শেষ হলে বাসায় ফিরতে আমাকে শুধু ড্রাইভারের উপর নির্ভর করতে হত। একদিন ড্রাইভার আসতে দেরি করায় টনি একটি সি.এন.জি ক্যাব নিয়ে আমাকে বাসার গেটে পৌছে দেয়। তাকে বাসায় আনতে সাহস পাইনি, এমনিতে ছেলেবন্ধু তার মধ্যে পরীক্ষার সময় এ বিষয়টা বাবা-মা হয়ত তারা ভালভাবে নাও নিতে পারে। তবে পরীক্ষার কয়েকদিনে টনির খুব কাছাকাছি হওয়াতে নিঃসঙতা ও সংকোচবোধ দুটোই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। পরীক্ষা শেষে একদিন বিকেলে টনির সাথে ঘুরতে বেড়োই। সন্ধ্যায় বাসার গেটে পৌছতেই বাবার নজরে পড়ে যাই, দোতলার বারান্দায় নিঝর্রকে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। বেশ আতংকের মধ্যে পড়ে গেলাম কারন বাবা অথবা মা কেউই জানত না আমার ছেলে বন্ধুর কথা। ট্যাঙ্ িথেকে নামার সাথে সাথে টনিও নামলে বাবা তাকে ইশারায় বাসায় আসতে বলেন। টনি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছে কারন বাবা পুলিশ বলে। ড্রইং রুমে ঢুকেই টনি বাবা কে সালাম জানাল, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মা ও এসে পড়লে সে মাকেও সালাম জানাল। টনি কিছু বলার আগেই ভয়ে সত্য মিথ্যার সংমিশ্রনে আমি বাবা-মাকে টনির ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়াদি বললাম। বাবা মা পাশাপাশি বসা আর আমি একটু দূরত্বে কাজের ছুতায় তাদের কথাবার্তা শুনছিলাম। এরই ফাকে শাপলা নাস্তা দিয়ে গেল। টনি নাস্তা সেরে উভয়ের নিকট হতে বিদায় নিল তবে যাবা সময় আমার সংেগ তার কোন কথা হল না। টনি চলে যাবার পর মা বললেন ‘ছেলেটার আচার ব্যবহার তো বেশ ভালই’।একটু মুচকি হেসে বাবা সায় দিলেন। পরিচয় হবার পর টনিকে মাঝে মধ্যে বাসায় নিয়ে আসতাম জরূরী কোন কাজের উছিলা ধরে যাতে বাবা-মা কেউ কোন রকম সন্দেহ করা বা কৈফিয়ত নিতে না পারে। টনির আরেকটি প্রশংসনীয় দিক ছিল যে সে ডিজে ড্যান্স করত। তার ড্যান্স কসরত ছিল সত্যিই পাগল করার মত। একদিন এক সন্ধ্যায় সে আমাকে ফোন করল ড্যান্স বারে আসতে আমিও মাকে ফোনে আমার বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছি বলে বের হয়ে গেলাম। টনির দেয়া ঠিকানা মোতাবেক আমি চলে এলাম। গুলশান এ একটি হোটেল সমেত বাসায়, বিশাল হলরচ্ম, ছোট ছোট চেয়ারে ঘেরা গোল টেবিলে সাজানো বিশালকার পানিয় বোতল সাথে কাচের পান পাত্র। তারচ্ন্যে ভরা প্রায় সমসাময়িক বয়সী ছেলে মেয়েদের কোলাহল। পোশাক-আশাকেও যেন উম্মাতাল করা। হলরূমের শেষ প্রান্তে বিশালাকারের স্থায়ী মঞ্চ,পার্শে সাজানো গিটার,ড্রাম, কি বোর্ড, সাউন্ড কন্টোলার ইত্যাদী। জীবনের প্রথম এরকম পরিবেশে এসে একটু পূলকিত বোধই করছি, তবুও টনিকে জিজ্ঞাসা করলাম’ কোথায় নিয়ে এলে ? পাশে পেতে রাখা আসনে টনি আমাকে বসিয়ে তারপর বোতল হতে রংগীন পানিয় গ্লাসে ঢেলে দিয়ে বলল ‘এটা এমনই এক জায়গা যেখানে এলে মনের সকল কষ্ট দুর হয়ে যায়, থাকে না কোন মানসিক যন্ত্রনাবোধ’। তার কথাটা ভালই লাগল তবে পানীয় গ্লাস হাতে নিয়ে বললাম ‘এটার রং এমন কেন ? আরে দেখনা পিয়ে, তারপর তো বলবে’ বলেই আমার গ্লাসে ঠুকা দিয়ে বলল’শুরচ্ কর’।এরই মধ্যে এসে পড়ল টনির আরও দু বন্ধু আকাশ ও টগর। টনি দুজনের সংেগ পরিচয় করিয়ে দিল। আকাশ টনির সমবয়সী হবে তবে টগর প্রায় চল্লির্শোধ হবে তবে মন মেজাজ পুরোটাই তার চাঞ্চল্যে ভরপুর। যাই হোক প্রথম পরিচয়ে দুজনকেই বেশ চমৎকার লাগছিল। আমাদের কথাবার্তা চলার মাঝেই রঙীন আলোকচছটার ঝলকানী দিয়ে শুরচ্ হল হিন্দি হিট গানের তালে তালে মঞ্চ কাঁপানো ডিজে ড্যান্স। অভুতপূর্ব দৃশ্যই বটে এসময়ে কখন বেখেয়ালে হাতে রাখা গ্লাস ভর্তি ড্রিংকস শেষ করে ফেলেছি তারপর আর মনে নেই—হঠাৎ কিছুক্ষণ পর একটু হূঁশ ফিরে এলে দেখি টনিকে জড়িয়ে ধরে ব্যালে নৃত্য করছি। খানিক পর বিরতি দিতেই বললাম ‘চল টনি অনেক রাত হয়ে গেছে বাসায় ফিরতে হবে।’ আরে তুমি আমার ড্যান্স দেখবেনা ? একথা বলার সাথে সাথে টনি, আকাশ ও টগর মঞ্চে চলে গেল আবার শুরচ্ হলো হিন্দি গানের তালে তালে উদ্দাম নৃত্য। টনির নেতৃত্বে আকাশ ও টগর নাচের পারফর্ম করছে, সত্যিই অবাক করা পারফর্মেন্স। রাত প্রায় বারোটার দিকে ডিজে পার্টির অনুষ্ঠান শেষ হলে পাশের একটি ফাষ্টফুডের দোকানে আমরা চারজনে শুকনো খাবারে ডিনার সেরে নিলাম।বিলটাও আমি পরিশোধ করে দিয়েছি। আকাশ ও টগরকে বিদায় দিয়ে টনির সাথে একটি ট্যাঙ্ িক্যাবে বাসায় চলে আসি। গাড়ীর হর্নের শব্দে মা বারান্দায় চলে এলেন,সম্ভবত বাবা বাসায় এখনো আসেনি। দারোয়ান গেট খুলে দিলে টনিকে’গুডনাইট’বলে সরাসরি বাসায় চলে এলাম। টনিকে দেখলেও মা আজ কিছু বললেন না। গোমড়ামুখে শুধু জিজ্ঞেস করলেন ‘খাবেনা’? না মা, বান্ধবীর বাসায় খেয়ে নিয়েছি’ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মাকে জবাব দিলাম। ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে গিয়ে শুয়ে পড়। আর হ্যাঁ,শোন কাল তোমার এস.এস.সির রেজাল্ট বের হবে’। বলেই মা চলে গেলেন। আমিও মাথা নুয়ে হর্্যাঁ জবাব দিয়ে আমার শোবার রচ্মে চলে এলাম। সে রাতে প্রায় তিনটা পর্যন্ত টনি,টগর ও আকাশের সাথে মোবাইলে কথা বলেছি। পরদিন সকাল এগারটায় শাপলার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাংেগ, দেখি সে নাস্তা হাতে সরাসরি আমার শোবার রচ্মেই এসেছে। চোখ কচলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম’ কিরে বাসায় কেউ নেই ? শাপলা বলল’ খালু খুব ভোরে চইলা গেছে গা, খালাম্মা নয়টার দিকে নির্ঝরকে নিয়ে বাইর হয়ে গেছে গা’। বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম’ তাই নাকি। কেমন যেন উত্তেজনা বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল। ঠিক আছে তুই নাস্তা টেবিলে রাখ আমি আসছি বলেই শাপলাকে বিদায় দিয়ে টনিকে ফোন করলাম। ঘন্টা খানেকের মধ্যে টনি আমাদের বাসায় চলে এল। আগে থেকে দারোয়ান তাকে চিনে রাখায় ভেতরে আসতে কোন সমস্যা হয়নি। বাইরে থেকে শাপলার খবর এল ‘আফামনি টনি ভাইয়া আইছে’। ‘ভেতরে পাঠিয়ে দে ‘ বলে আমি উঠে বসে পড়লাম। টনি ভেতরে ঢুকেই ‘ হাই সুইট ডার্লিং’ সম্মোধন করতেই আমি ও বললাম ‘ হাই সুইট ডার্লিং। কি ঘুম কেমন হল ? বলতে বলতে পকেট থেকে একটি ছোট প্যকেট বের করল এবং দরজাটা আটকিয়ে দিয়ে প্যাকেট থেকে একটি লাল সদৃশ ট্যাবলেট বের করে আমার সামনে ধরল। বললাম ‘এটা আবার কি ? টনি বলল এটা এনজয়মেন্টের আরেক ধাপ, ভাবলাম বাবা-মা যেহেতু কেউ বাসায় নেই সেহেতু এনজয়মেন্টটা এখানে করতে মন্দ নয় ‘ ঠিক আছে দাও দেখি তোমার এনজয়মেন্টের দ্বিতীয় ধাপটা কেমন বলেই ট্যাবলেটটি মুখে পূরলাম।টনিও একটা খেল, তারপর আর কিছু মনে করতে পারছিনা তবে আধঘন্টা পর আবিস্কার করলাম আমি কিছুটা বেশামাল অবস্থায় টনিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। ড্রাইভারের ফোন কল এল, ‘ আপু আমি নির্ঝরকে নিয়ে আসছি আপনি বাসায় আছেন তো ? হ্যাঁ আছি,বলেই তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম এবং টনিকেও তাগাদা দিলাম উঠার জন্য। তারপর দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে টেবিলে রাখা নাস্তা সেরে নিলাম। শাপলা কফি আনলো, টনি বলল ‘থাক আজ আর কফি খাবনা’বলেই নিচের দিকে যেতে উদ্যত হলে আমি তাকে গেট পর্যন্ত বিদায় দিতে গেলাম। এরই মধ্যে নির্ঝর এসে পড়েছে, গাড়ি থেকে নেমে আসতেই টনি নির্ঝরের গালে টুকা দিয়ে বলল ‘হ্যালো সুইট ব্রাদার হাউ আর ইউ ? নির্ঝর কিছু না বলে মাথা ঝুকিয়ে হ্যা বোধক জবাব দিয়ে আস্তে আস্তে এগুতে লাগল। টনি চলে গেলে নির্ঝর সিড়িতে উঠার সময় বলল ‘আপু তোমার ঐ বন্ধুটা কেন প্রতিদিন আসে ? নির্ঝরকে একটানে কাছে নিয়ে মৃদু স্বরে বললাম ‘এই তো ভাইয়া,সে আমার পড়াশুনার খোঁজ খবর নিতে আসে। শাপলাকে আগেই বলা ছিল টনির বাসায় আসার ব্যপারটা বাবা-মা কাউকে না জানাতে। যাহোক টনির দেয়া কয়েকটি ট্যাবলেট রেখে দিয়েছিলাম, পর পর কয়েকদিন সেবন করাতে যেন আসক্তি জমে গেল। কয়েকদিন পর শেষ হয়ে গেল, টনির নিকট আরও কিছু চাইলে সে বলল’ এসব তো খুবই এঙ্পেন্সিভ সহজে পাওয়া যায়না। ওর কথা শুনে আমি সংেগ সংেগ পাঁচ হাজার টাকা দিলাম,কারন আগেই বলেছি বাবা-মার কাছে চাওয়া মাত্রই টাকা পাওয়া এটা যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। কিন্তু হাতে টাকা থাকলেও সব সময় সেই ড্রাগ মিলত না আর সময় মত না পেলে আমার মেজাজ যেন খিটখিটে হয়ে পড়ত। মার সংেগ অল্পতেই রেগে যেতাম। মা হয়ত আমার ড্রাগ এডিক্টেড হবার ব্যাপারে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন তবে এখনই তিনি কিছু বললেন না।এরই মধ্যে এস.এস.সির রেজাল্ট বের হলো। গোল্ডেন এ পাওয়ায় বাবা -মা যার পর নাই উল্লসিত হলেন, অতঃপর সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে লন্ডনে অথবা সিডনির কোন এক নাম করা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবেন। কিন্তু আমি গোঁ ধরলাম কক্ষনো বাইরে যাবনা, এতে আমার রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেল, এমনকি ঘরের জিনিষ ভাংচুরের মত কাজও করতে লাগলাম। অগত্যা বাবা আমার আব্দারের কাছে নতি স্বীকার করে ঢাকার অন্যতম সেরা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিল। বন্ধুদের সংেগ অতিরিক্ত মাখামাখি এবং ইদানিং ড্রাগ এডিকশনের বিষয়টা বাবাও টের পেয়ে গেছেন। তারা উভয়ে যেন বেশ ভাবনায় পড়ে গেলেন,তাই সব সময় যেন পড়ার মধ্যে ডুবে থাকি এ চিন্তা করে বাবা তিন জন গৃহ শিক্ষক সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে নিয়োগ দিলেন। বাবা মার অনুপস্থিতিতে আমি একথা সেকথা বলে গৃহ শিক্ষকদেরও ফাঁকি দিয়ে চলতে লাগলাম।একদিন ড্যান্স বারে বেশ রাত করে ফেলি,তাছাড়া সেদিন ড্রাগের পরিমানটাও বেশী নেয়া হয়েছিল বিধায় স্বাভাবিক হয়ে বাসায় ফিরতে অনেক দেরী হয়ে গেল। বাবা মা দুজনে তখনও বারান্দায় দাড়িয়েছিল আমার অপেক্ষায়, ট্যাঙ্ িক্যাব থেকে নেমে টনি ও আকাশ দুজনেই ধরাধরি করে নামিয়ে দিল।বিষয়টি বাবা-মা দুজনেরই নজর এড়াতে পারলোনা, বাবা আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলেন ‘ নিশি ভেতরে যাও’ বলেই তিনি এগিয়ে গেলেন টনি ও আকাশের দিকে। ইশারায় গেটের ভেতরে ডেকে নিয়ে এলেন, ততক্ষণে আমি দোতলার সিঁড়ির মাঝামাঝিতে চলে এসেছি, কিছুটা ভয় ও কৌতুহল নিয়ে দাড়িয়ে গেলাম দেখি কি হয়।বাবা কড়া ভাষায় তাদের বকাঝকা করলেন এবং ভবিষ্যতে যেন তাদের আর সামনে দেখা না হয় এও বলে শাসালেন। টনি ও আকাশ মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে গেট পার হয়ে চলে গেল। বন্ধুদের প্রতি বাবার এহেন আচরন আমাকে যারপর নাই ক্ষুব্ধ করল। তবুও কিছু না বলে আমি আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকলাম। মা আমাকে খেতে বললে কোন জবাব না দিয়ে আমার কক্ষে ঢুকে সাজোরে দরজা লাগিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ শাপলা আফামনি, আফামনি বলে ডাকতে লাগল। রাগের মধ্যেও শাপলার ডাক অগ্রাহ্য করতে পারিনি তাই দরজা খুলতেই শাপলা আমার রচ্মে ঢুকে পড়ল। এটা সেটা বলে যেন সে আমাকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করল। বুঝতে বাকী রইলনা যে এটা বাবা মা’র কারসাজি যাতে আমি রাগের বশে রাতে কিছু একটা না করে ফেলি। পরদিন বেশ সকালেই বাবা আমাকে ডাকলেন মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে নাস্তার টেবিলে বসালেন,পাশে নির্ঝর বসা’গুড মর্নিং আপু’ বলেই সে আমার কাছে এসে বসে পড়ল। এদিকে মা আপন মনে খাচ্ছে আর কার সংগে যেন মোবাইলে কথা বলছে। শাপলা প্রয়োজনী জিনিষ টেবিলে যোগান দিচ্ছে। নাস্তার পর্ব চলাকালীন সময়ে বাবা-মা আমাকে নানান নীতি বাক্য শোনাতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যে বাবা বাইরে চলে গেলে আমি বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে এসে মাকে বললাম ‘আমার টাকা লাগবে। হঠাৎ যেন মা বারচ্দের মত জ্বলে উঠলেন’ এভাবে কারনে অকারনে টাকা নিয়ে নিজের অধঃপতন আর কত ডেকে আনবে ? এবার একটু ক্ষান্ত দাও। ভর্তি করিয়ে দিয়েছি, তিন তিন জন গৃহশিক্ষক রাখা হয়েছে আর তুমি এসব বাদ দিয়ে শুধু ঐ সব বখাটে বন্ধুদের সংেগ মিলে যা খুশি তাই করে বেড়াবে? মার মুখে এসব কথা যেন আমার মনে আগুনে ঘি ঢালার মতন হল। আমি ক্রুদ্ধ স্বরে বললাম ‘তুমি টাকা দিবে কিনা? না দেবোনা বলেই মা আমার দিকে তাকাতেই আমি হাতে রাখা পার্স দিয়ে মা’র দিকে সাজোরে ছুঁড়ে দিই। মুহুর্তের মধ্যে মার কপালের এক পাশে কেটে রক্ত হতে লাগল। কপাল চেপে ধরে মা চিৎকার দিতেই শাপলা ও নিঝর্র দৌড়ে এল। আমি কিছুক্ষন নীরব দাড়িয়ে থেকে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। মেইন গেট পার হয়ে রাস্তার কিনার ধরে হাটছি আর ভাবছি এ জীবন আর রাখবই না বরং আত্নহত্যা করব, তাই স্থানীয় এক ফার্মেসীর দোকান থেকে দশটি সিডাকসন ট্যাবলেট কিনলাম। অত:পর একটি রিঙ্া নিয়ে সোজা চললাম ড্যান্স বারের দিকে আজ ওখানে টনির থাকার কথা। আত্নহত্যার আগে ওর সংেগ কতগুলি কথা বলা দরকার। পৌঁছেই টনির সাক্ষাৎ পেলাম, গতরাত্রে তার সং্‌েগ বাবার দূর্ব্যবহারের জন্য তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নিয়ে অত;পর বাসায় ঘটে যাওয়ার বিবরণ তাকে বললাম। সে কিছু না বলে আমাকে শুধালো ‘এখন কি করতে চাও ? আমি আত্নহত্যা করতে চাই ‘ বলেই ব্যাগ হতে সিডাকসন ট্যাবলেট গুলি বের করে তাকে দেখালাম। এক রহস্যময় হাসিতে ফেটে পড়ল টনি, আমার নিকট হতে ট্যাবলেট গুলি নিয়ে আবার আমার ব্যাগে রেখে দিয়ে বলল ‘এগুলো আপাতত রাখ,খুব দ্রূতই কাজে লাগবে, এখন কোন ডিসিশন নিয়োনা। আমি মুখ ভার করে বসা দেখে পকেট হতে একপিস ট্যাবলেট বের করে দিলে লুফে নিলাম নিজের অস্থিরতাকে কন্ট্রোল করতে। সারাদিন মোবাইলটা বন্ধ রেখে টনির সংেগই কাটালাম আর সেই সাথে চলল অবিরত ড্রিংকস আর সাথে সিগারেট। রাত দশটার দিকে আবার বাসায় চলে এলাম। এদিকে সারাদিন মোবাইল বন্ধ পেয়ে বাবা মা দুজনেই খুব অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। আমার জানামতে কোন আত্নীয় বা বন্ধুর বাসায় খোজ নিতে বাকী রাখেননি। শুুধু তাই নয় শাপলার ভাষ্য মতে তারা দুজনেই আজ অফিসে যাননি। যাহোক আমাকে দেখে তারা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। সে রাতে বাবা ও মা দুজনেই আমাকে খুব করে বোঝালেন। মায়ের কপালে ব্যান্ডেজ দেখে বললাম ‘মাম,আই এম রিয়েলি সরি ফর সাচ টাইপ অব মিস বিহেভ উইথ ইউ টুডে ‘। বাবা বললেন ‘ ও কে মাই চাইল্ড, প্লিজ ডোন্ট ডু দিস ইন ফিউচার। উভয়কে এখন একটু ফ্লেঙ্বিল দেখে বললাম ‘আমি একটি সমস্যায় পড়ে গেছি বাবা।’ কি সমস্যা?’ বাবা মা দুজনের প্রশ্ন। ইত:স্তত স্বরে বললাম ‘মানে এ কয়েকদিনে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আমি অনেক টাকা খরচ করেছি শুধু তাই নয় প্রায় লাখ খানেক টাকা ধারও করতে হয়েছে ‘ এ টাকাটা পরিশোধ না করতে পারলে হয়তো তোমাদেরও একটা মান সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাড়াবে। সহজ বিশ্বাসী বাবা কোন কথা না বলে সরাসরি একটি চেক কেটে দিয়ে বললেন এই নাও এখানে একলক্ষ পাচ হাজার টাকা দেওয়া আছে তুমি একলক্ষ টাকা পরিশোধ করবে আর পাচ হাজার নিজের হাত খরচা হিসেবে রাখবে’। এতে মা হয়ত কিছু বলতে চাইলেও বাবা ইশারায় বারন করলেন। আমি বাবাকে’ থ্যাংকস সো মাচ’ বলে বের হয়ে গেলাম। খূশিতে গদ গদ হয়ে আমি দ্রূত নিচে নামতে লাগলাম, সিড়িতে থাকা অবস্থায় টনিকে ফোন করলাম। টনিও যেন আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিল কিছুক্ষনের মধ্যে একটি ট্যাঙ্ িক্যাবে বসা টনি ও টগর আমার পাশে এসে থামলে দ্রূত উঠে পড়লাম, তারপর ব্যাংক হতে চেকখানা ভাংগিয়ে গাড়ীতে বসেই বাবা ও মাকে একটি এস.এম.এস করলাম ‘আমি ভালই আছি’ আমার জন্য তোমাদের কাউকে ভাবতে হবেনা’। অত:পর পূরাতন সিম খানা খুলে রাস্তা পার্শে এক দোকান থেকে নতুন সিম কিনে ভরলাম। টগর তার বাসার পাশে একটি তিন রচ্মের বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করল।স্থানীয়দের মাঝে টগর ছিল যথেষ্ট প্রভাবশালী ও মাস্তান ধরনের তাই তরিঘড়ি করে বাসা পেতে কোন বেগ হয়নি। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে টনি আর আমি থাকতে লাগলাম। কয়েকদিন পর টগর আমাদের বাসায় একটি ডিজে পাটির আয়োজন করে। আরো নতুন বেশ কয়েকজন ছেলেও মেয়ে বন্ধু জুটল। এভাবে প্রায় আরও কয়েকদিন চলল। আশে পাশের লোকজন আপত্তি করলেও টগরের ভয়ে জোরালো কেউই কিছু বলতে সাহস পেতনা। প্রায় দু সপ্তাহ ধরে বাইরে বের হইনি তাই টনিকে বলতেই আমাকে নিয়ে বোরোতে রাজী হল। রমনা পার্কে এক বিকেলে আমি একটি ফুচকার দোকানে পেতে রাখা চেয়ারে বসে ফোনে কথা বলছি আর টনি আমার জন্য ফুচকা আনতে গেছে,পেছন হতে কে যেন আমার কাঁধে হাত রাখছে, চমকে উঠলাম, ফিরে তাকিয়ে যা দেখি তাতে আমার ভয়ে গা হিম হয়ে যাবার উপক্রম। বাবা, হ্যাঁ সত্যিই তো বাবা সিভিল ড্রেসে, কাল বিলম্ব না করে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম’ বাবা আমাকে শেষ বারের মত ক্ষমা করো’ বলেই আবার কাঁদতে লাগলাম। বাবা সিভিল ড্রেসে এবং একাকী এসেছিলেন বলে সে জন্যে হয়ত কেউ তাকে চিনতে পারেনি। তবুও বাবা আমাকে কৌশলে দুরত্বে নিয়ে গেলেন এবং আশ্বাস দিলেন ‘কোন ভয় নেই বাসায় চল’। মান সম্মানের প্রশ্ন মনে করে বাবা এ নিয়ে বেশীদুর এগুতে দেননি। দূর হতে টনি বিষয়টি টের পেয়ে আস্তে আস্তে কেটে পড়ায় আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বাবার সংেগ বাসায় এসে দেখি মা অগ্নি মূর্তি ধারন করে বসে আছে। নির্ঝরের মত এক অবুঝ শিশুটাও যেন আমার উ্‌পর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। তবে শাপলা আমায় দেখে যার পরনাই খুশি হল। আমি কোথায় ছিলাম কেমন ছিলাম ইত্যাদী জিজ্ঞেস করতেই বাবা শাপলাকে বারন করলেন। অত:পর মার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম ‘মা,তুমি আমার উপর রেগেই থাকবে? পেছন দিক হতে বাবা বললেন ‘ হ্যাপি বার্থ ডে টু মাই ডটার’। ওহ হো আগামী কালতো আমার আঠারতম জন্মদিন,যেখানে নিজের প্রতিই বেখেয়াল সেখানে জন্মদিনের কথা মনে থাকবে কি করে? যাহোক বাবা ফোনে ফোনে তার বন্ধু ও শুভাকাংখীদের আমার জন্মদিনের আমন্ত্রন জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।শাপলা রাতেই ঘর-দুয়ার পরিস্কারে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাবা ড্রাইভারকে ডেকে বললেন আঠার পাউন্ডের একটি কেকের অর্ডার করতে। ইতোমধ্যে মায়েরও যেন রাগের জট খুলতে লাগল। তিনিও বেশ কয়েকজন নিকট বন্ধু ও শুভাকাংখীকে ফোনে আমন্ত্রন জানালেন। এতকিছুর মধ্যেও আমার স্বাভাবিকতার চেয়ে যেন অস্থিরতাই বৃদ্ধি পেতে শুরচ্ করল। ভাবলাম আমি তো আবার চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি। অস্থিরতা বাড়ার কারন সেই ট্যাবলেট যা এখন আমার কাছে নেই অথচ দিনে তিন চারবার না পেলে গা জালা করে আর মেজাজ খুব চাউড় হয়ে যায়। নাহ! আমাকে এর বিহিত করতেই হবে, কি করব ভাবতেই পারছিলাম না। অবশেষে টনি, আকাশ ও টগরকে ফোন করলাম। কিছুক্ষন পরে শাপলাকে ডেকে জিজ্ঞেস করি ‘বাবা মা দুজনে এখন কোথায় ? শাপলা জানায়’ বারান্দায় বসে গল্প করছে। সোজা চলে এলাম তাদের নিকট ‘ নিজের অস্থিরতাকে কোনমতে কন্ট্রোল করে বললাম’ তোমরা দুজনে আমার জন্যে যে আয়োজন করছ তার ধন্যবাদ কিভাবে জানাবো তা আমি বলতে পারছিনা তবে আমাকে যদি অন্তত তোমাদের দুজনের জন্য দুটো কফি বানানোর অনুমতি দাও তবে নিজেকে কিছুটা হলেও বাধিত করব ‘একথা শুনে দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল, বাবা বলে উঠলেন’ পাগল মেয়ে বলে কি ? বাবা মার জন্য কফি বানাতে আবার অনুমতি লাগে। যাও আমার জন্যে চিনি কম দিও, আর মা বললেন ‘শোন আমার জন্য একটু লেবু কেটে দিও।’ও কে মাই ডিয়ার প্যারেনটস’ বলেই কিচেন রচ্মে চলে এলাম। কিচেন রচ্মে আমি দুটো বড় মগে আমি কফি ঢালছি আর পেছনে শাপলা দাড়িয়ে দেখে হাসছে। আমি ও কে কোন পাত্তা না দিয়েই কাজ চালিয়ে গেলাম, বাবা-মা যে যেভাবে কফি খেতে চাইছে সে ভাবেই বানিয়ে তারপর নাইট গাউনের ভেতর থেকে কয়েকটি সিডাকসন ট্যাবলেট বের করতেই শাপলা কিছুটা আর্র্শ্চয্যন্বিত হয়ে বলল’ হায় হায় আফা এটা আবার কি দিতেছেন? ‘চুপ কর’ বলেই ট্যাবলেট গুলি দু’জনের মগের ভেতরে দিয়ে নেড়ে মিঙ্ করলাম। আমার কফি বানানো দেরী দেখে কৌতুহলী বাবা মা দুজনেই এগিয়ে আসতে লাগলো তার আগেই তারা আমার হাত হতে কফি ভর্তি মগ পেয়ে ভীষন খুশি হলো,’থ্যাংক ইউ মাই চাইল্ড’ বলে দুজনেই আমাকে শোয়ার তাগাদা দিয়ে তারা তাদের শোবার রচ্মে ঢুকে পড়লেন। এদিকে নির্ঝর আমার পাশের বেডে ঘুমোচ্ছে। শাপলাকে বললাম ঘন্টাখানেক জেগে থাকতে। ও আমার পাশে জেগে থাকল। প্রায় রাত দেড়টার দিকে আমার মোবাইলে একটি মিসড কল এল। তাড়াতাড়ি শাপলাকে নিচে গেটে পাঠিয়ে দিলাম। দারোয়ান শাপলাকে দেখে কোন জিজ্ঞেস না করেই টনি,আকাশ ও টগরকে ভেতরে আসার সুযোগ দিলো।ওরা তিন জনই সরাসরি আমার রুমে ঢুকে পড়ল। শাপলাকে নির্ঝরের পাশে বসিয়ে রেখে আমি ওদের তিনজনকে নিয়ে সরাসরি চলে এলাম বাবা মার শোবার কক্ষে। দেখি খাটে তারা দুজন অচেতন অবস্থায় এলোমেলো ভাবে পড়ে শুয়ে আছে।কিছুক্ষন নীরব দাড়িয়ে থেকে নিজের থেকেই মা কে উদ্দেশ্য করে বললাম ‘ মা, তুমি তো একজন মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের বড় কর্মকর্তা, কিন্তু পারলেনা মেয়েকে মাদকের ছোবল থেকে বাচাতে,শেষ পর্যন্ত মাদক সেবী মেয়ের হাতেই নিজেকে শেষ করলে ?’ তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘ বাবা, তুমিতো একজন স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন বড় কর্তা, কত বড় ক্রিমিনাল তোমার হাতে ধরাশায়ী হয়েছে, কিন্তু পারোনি নিজের মেয়ের অপরাধকে ধরাশায়ী করতে,আজ নিজেই তুমি তোমার রক্তের কাছে ধরাশায়ী হলে।’ একটু ব্যঙোক্ত ভংিগমায় হাসলাম। এরপর টনি বলল ‘ নিশী ফালতু বয়ান দিয়ে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই যা কিছু করার তা এক্ষুনি করতে হবে।’ আমি ইশারা করতেই টগর ও আকাশ মাকে ছেঁচড়িয়ে নিয়ে গেল বাথরচ্মের দিকে এরপর আমি ও টনি বাবাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলাম অন্য এক বাথরুমে। তারপর—————- খানিক পর গোংগানীর শব্দে নির্ঝর জেগে উঠে শাপলাকে জিজ্ঞেস করতেই শাপলা বলল’ তোমার বাবা মা দুজনে ঝগড়া করছে তো তাই’। এরপর শাপলা নির্ঝরকে ভেতরে রেখে বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়। দুজনের গোংগানীর শব্দে শাপলাও ভয়ে বাইরে পায়চারী করতে লাগল।কিছুক্ষন পর —সব শান্ত যেন কিছুই ঘটেনি। টনি, টগর ও আকাশ বেসিনে হাতমুখ ধুয়ে অতি স্বাভাবিক ভংিগায় বিদায় নিয়ে চলে গেল। খানিক পর আমি মায়ের অলংকার ও আলমারী হতে টাকা পয়সা ব্যাগে পুরে শাপলা ও নির্ঝরকে নিয়ে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি আটকিয়ে নিচে চলে এলাম। এত রাত্রে কোথায় যাচ্ছি দারোয়ান জিজ্ঞেস করতেই আমি তরিঘড়ি করে জবাব দিলাম,’খালার বাসায়,কাল আমার জন্মদিন তো তাই আব্বু আম্মু পাঠালেন ওনাদের ডেকে আনার জন্য। নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে দারোয়ান বলল’ তাই বলে এই পিচ্চিকেও নিয়ে যাচ্ছ ? দারোয়ানের কথার কোন জবাব না দিয়ে জলদি গেট পার হয়ে গেলাম। একটু হাটার পর রাস্তায় একটি ট্যাঙ্ িক্যাব পেয়ে ইশারা করতেই ড্রাইভার বলল ‘ কোথায় যাবেন ? বললাম ‘যাত্রাবাড়ী’। ‘একশ টাকা বেশী দিতে হবে’ ড্রাাইভারের আব্দারকে পাত্তা না দিয়ে উঠে পড়লাম। গাড়ীতে উঠেই ড্রাাইভার কে বললাম মুগদা যাব, মুগদার কাছাকাছি এলে আবার বললাম, ওয়ারি যাব,আবার ওয়ারীর কাছাকাছি আসতেই বললাম যাত্রাবাড়ী যাব।বারবার দিক পরিবর্তনে ড্রাইভার বিরক্ত হয়ে বলল ‘আসলে বলেন তো ঠিক কোন জায়গায় যাবেন’। এরই মধ্যে নির্ঝর ঘুমিয়ে পড়ছে দেখে ভাবলাম যাত্রাবাড়ী এক আত্নীয় রয়েছে তার বাসায় যাই। প্রায় রাত চারটার দিকে সেই আত্নীয়ের বাসায় গেটে এসেই তাকে ফোন করলাম। কয়েকবার ফোনের পর সে কল ব্যাক করল। আমার পরিচয় পাওয়া মাত্রই সে গেট খুলে দিল এবং এত রাত্রে আসার হেতু জিজ্ঞেস করল।আমি বললাম বাবা মা রাগারাগি করে বাসা থেকে চলে গেছে তো তাই আমরাও ভয় পেয়ে চলে এসেছি।আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারলেনা। তবুও কিছু না বলে বিছানা করে দিলেন। পরের দিন সকালে টিভি সেটে বসতেই দেখলাম সংবাদ শিরোনাম ‘এস.বি. পূলিশ কর্মকর্তা আ.সালাম ও স্ত্রী রেহানা সালাম নিজ বাস ভবনে খুন’ সংবাদটি শুনে আমি যেন আরও দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ি। কাউকে কিছু না বলে হাতে রাখা ডায়রীখানা নিয়ে চলে এলাম টনির বাসায়। তখনও টনি খুব স্বাভাবিক ছিল। আমাকে সাহস দিয়ে বলল ‘এটা খাও দেখবে অস্থিরতা থাকবেনা’। তারপর একটা ড্রাগ ট্যাবলেট খেয়ে নিলাম কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, ড্রাগ ট্যাবলেটের কোনই ক্রিয়াই হলনা, তারপরও ডায়রির বাকী অংশটুকু লিখতে গেয়ে দেখি আমার নিকট যে কলম ছিল তাতেও কোন কালি ছিলনা। টনির কাছ একটা কলম পেলাম তাও আবার লাল কলম। ভাবলাম আমার জীবনের ইতিহাসের রায় পড়ার সময় এসেছে। তাই আর আর কিছু না লিখে —এরই মধ্যে ফজরের আজানের ধ্বনী শুনে অফিসারের সম্বিত ফিরে আসে এবং মেয়েটিও ততক্ষনে তার মুখমন্ডল হতে ওড়না সরিয়ে ফেলেছে, সে মেয়েটির দিকে তাকাতেই প্রথমে চমকে উঠে তারপর স্বাভাবিক দৃষ্টিতে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকে, অত:পর ঘড়ির দিকে তাকায়এবং হাতে মোবাইল ফোন সেট তুলে নেয় হয়তো আরেকটি প্রহরের অপেক্ষায় থাকতে হবে যে প্রহরে প্রশাসনের ফোর্স ও মিডিয়ার বনিকরা এসে থানার চৌকাঠ ভেংেগ ফেলার উপক্রম করবে। তৈরী করবে সত্য মিথ্যার সংমিশ্রনে মুখরোচক খবর। তা চলবে এক অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। কিন্তু এই প্রশাসন ও মিডিয়ার বণিকগন কখনও অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেষ্টা করেনা যাতে সমাজে আর কোন নিশীর আগমন আর না যেন ঘটে।

বাংলাদেশ সময়: ০:২৪:২০   ৮২৯ বার পঠিত