বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩
শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারায় কারখানা বন্ধের কথা ভাবছেন মালিকরা!
Home Page » প্রথমপাতা » শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারায় কারখানা বন্ধের কথা ভাবছেন মালিকরা!বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ : বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে গত ৫ দিনের শ্রমিক অসন্তোষের ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অব্যাহত ক্ষতির মুখে গার্মেন্টস মালিকরা এখন কারখানা বন্ধের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে জানা গেছে বিজিএমইএ(বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) সূত্রে।দু‘ একদিনের মধ্যে যদি পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে এবং কারখানাগুলো আবারও অস্থিতিশীল হয়, তাহলে শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারায় কারখানা বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছেন মালিকরা।
বিজিএমইএ এর একটি সূত্রে জানা যায়, ২১ সেপ্টেম্বরের শ্রমিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস খাতের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়া শুরু হয়েছে। মূলত তখন থেকেই মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিদিনই কয়েক দফায় তাদের মধ্যে বৈঠক হচ্ছে।
এসব বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ২৫ সেপ্টেম্বর বিজিএমইএ’র সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন, ঈদের আগে আবারও ভাঙচুর বা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, ১৩ এর ১ ধারা অনুযায়ী, অবাঞ্ছিত কোনো কারণে কারখানার ক্ষতি হলে মালিক তাৎক্ষণিকভাবে কারখানা বন্ধ করে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে শ্রমিকরা চলতি মাসের বেতন ছাড়া আর তেমন কিছুই পাবেন না।
এদিকে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের সত্যতা স্বীকার করেছেন বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম বলেন, বিশৃংখলা সৃষ্টি হলে ১৩ এর ১ ধারা অনুযায়ী আক্রান্ত কারখানা বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে মালিকদের সিদ্ধান্তটি সঠিক। আসলে মালিকদের এখন কিছুই করার নেই। কারণ তারা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এভাবে চলতে পারে না। তবে কারখানার পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে সরকার আশ্বাস দিয়েছে। দেখা যাক পরে কি হয়।
অন্যদিকে মালিকদের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আইনের অপব্যাখ্যা বলে মনে করছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। শ্রমিক নেতাদের মতে মালিকরা শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই এমনটা বলছেন, যার কোনো ভিত্তি নেই।
এ বিষয়ে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধের কোনো এখতিয়ার মালিকরা রাখেন না। কারণ কোনো প্রাকৃতিক ক্ষতি বা অন্য কোনো কারণে উৎপাদন কাজ চালাতে না পারলেই কেবল ১৩ এর ১ ধারায় কারখানা বন্ধ হতে পারে। কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনের সময় মালিকরা বলবেন, ‘১৩ এর ১ ধারায় কারখানা বন্ধ করে দিলাম’, সেটা কখনোই মেনে নেয়া হবে না। মালিকরা আইনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে।
২১ সেপ্টেম্বর নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের শ্রমিক সমাবেশে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে প্রথম রাস্তায় নেমে আসেন শ্রমিকরা। তারপর ন্যূনতম মজুরির দাবিতে এখন প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিকরা রাস্তায় নামছেন। চলছে ভাঙচুর, লুটপাট ও নৈরাজ্য।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৬ জুন পোশাক শ্রমিকদের বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণে সরকার ‘নিম্নতম মজুরি বোর্ড’ গঠন করে। অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ একে রায়কে চেয়ারম্যান করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট এই মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডে একজন নিরপেক্ষ সদস্য, পোশাক কারখানার মালিক ও শ্রমিক পক্ষের দু’জন স্থায়ী সদস্য এবং পোশাক কারখানা মালিক পক্ষের দু’জন প্রতিনিধি রয়েছেন।
মজুরি বোর্ডে নিরপেক্ষ সদস্য হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. কামাল উদ্দীন, মালিক পক্ষের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিক পক্ষের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু। এছাড়াও পোশাক কারখানা মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন আরশাদ জামাল দিপু ও সিরাজুল ইসলাম রনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৯:০৬ ৩৯৭ বার পঠিত