বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩
‘ভাই আমারে বাঁচান, আমার শার্টটা খুইলা দেন, আগুনে পুইড়া গেলাম রে…’
Home Page » সারাদেশ » ‘ভাই আমারে বাঁচান, আমার শার্টটা খুইলা দেন, আগুনে পুইড়া গেলাম রে…’‘আমারে হাসপাতালে নিয়েন না। ওরা (দুর্বৃত্তরা) আমারে পাইলেই মাইরালাইবো। ভাই, আমারে আমার বাড়িতে পাডাইয়া দ্যান।’ কথা শেষ করার আগেই কেঁদে উঠলেন। থর থর করে কাঁপছেন পঞ্চাশোর্ধ বৃদ্ধ। একটু থেমেই আবারও কী যেনো বিড় বিড় করে বলছিলেন। মুখের কাছে কান নিতেই শব্দগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু…আল্লাহ আমারে বাঁচাও…’।
লোকটার মুখভর্তি দাঁড়ি। চেহারা দেখেই তার নিরীহ ভাবটা বোঝা যাচ্ছে। নামটাই কেবল জানা গেলো- আব্দুল হক। ভয়ে আর কিছু বললেন না। তাকাতে পারছেন না তার ঝলসে যাওয়া হাতটার দিকেও।
ঘটনাটা মঙ্গলবার বিকেলের দিকে। চারটা বাজার একটু আগে। সিএনজি অটোরিকশা চালক আব্দুল হক পল্টন থেকে বিজয় নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। নিজের মতো করেই চালাচ্ছিলেন অটোরিকশা। একটা ভাড়া পাওয়ার আশা করছিলেন হয়তো মনে মনে। কিন্তু তার যে এমন মর্মান্তিক অবস্থা হবে তা কি মনে মনেও কল্পনাও করতে পেরেছিলেন?
কোত্থেকে যেনো ছুটে এলো পেট্রোল বোমা। অটোরিকশার দরজা গলে ঠিক পড়লো আব্দুল হকে ডান হাতে। মুহূর্তেই জ্বলে উঠলো আগুন। নীল শার্টটা জ্বলছে না শুধু, ঝলসে গেলো পুরো হাতটি। নিমেষেই, কিছু বোঝে ওঠার আগেই।
হুড়মুড় করে দরজা খুলে বেরুলেন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলেন চিৎকার করে। ‘ভাই আমারে বাঁচান, আমার শার্টটা খুইলা দেন, আগুনে পুইড়া গেলাম রে…।’ এগিয়ে এলো না কেউই। পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন নির্বাক। তাৎক্ষণিক এগিয়ে এলেন কয়েকজন। পাশে থাকা চশমার দোকানগুলো থেকে বেরিয়ে এসে ধরলেন আব্দুল হককে। শার্ট খুলে নিলেন এক ঝটকায়।
আব্দুল হক হতভম্ব। ধপ করে বসে পড়লেন মাটিতে। টেনে নিয়ে এক চশমার দোকানে বসানো হলো। দোকানের মালিক আর কর্মীরাই এগিয়ে এলেন তার সেবায়।
খানিক পরই আব্দুল হক বললেন, ‘আমার সিএনজি থানায় নিতে দিয়েন না। থানায় গেলে এই গাড়ি আর পামু না ভাই। আমারে হাসপাতালেও নিয়েন না। হাসপাতালে নিলেই সন্ত্রাসীরা আমারে মাইরালাইবো।’
আব্দুল হককে দেখে মর্মাহত হয়েছেন অনেকেই। তাদেরই একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে উঠলেন, ‘আহ্, গরিব লোকদেরই যতো বিপদ। রাজনীতিকরা আর মানুষ হইলো না…।’
বাংলাদেশ সময়: ০:৪৭:১৪ ৫০৫ বার পঠিত