মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩
আকাশের চিঠি; তিন-রোকসানা লেইস
Home Page » সাহিত্য » আকাশের চিঠি; তিন-রোকসানা লেইসবরফ পড়া থেমে গেল গত মাসে যখন প্রচণ্ড বরফ পরার কথা। পৃথিবী উষ্ণ হয়ে উঠছে। চারপাশে তার খবর।
কেউ আমাকে তোমার খবর দেয় না কেন নীল। আমার ভিতর শীতল থেকে শীতলতর হচ্ছে প্রতিদিন। এক গহীন বরফ শীতল জলের হ্রদে ডুবে আছি আমি। আমার হৃদয়ে কোন কথা নেই, গান নেই, উৎসাহ নেই, রঙ নেই। দেশে এখন বসন্ত উচ্ছাস আনন্দ ভরা সময়। মনে আছে ফাগুয়ার দিনে কপালে রঙের আলপনা এঁকে খালি পায়ে হাঁটতাম আমরা মাদলের তালে, ঢোলক আর নুপুরের ছন্দে।
শালবন বিহারের সেই লালমাটির কথা সেই রাতের কথা আজ খুব মনে পরছে। তুমি আমি দুজনে হয়ে গিয়েছিলাম আদি ভূমির অকৃত্তিম বাসিন্দা। মেয়েরা সাজিয়ে ছিল আমাকে মহুয়া, শিমুল ফুলের গহনায়, তোমাকে যা লাগছিল না দেহাতি পোষাকে ঢোল গলায় ঝুলানো অবস্থায়।
তোমার ঢোলক বাদনের সেই অস্থির ঢঙ আমার চোখ জুড়ে এখনও অস্থিরতায় পাগল করে দিচ্ছে আমাকে ময়ুরের মতন নৃত্যরত সে দৃশ্য। মেয়েরা টেনে নিয়ে গিয়েছিল আমাকে তোমার সামনে নাচ করার জন্য।
আমরা মিশে গিয়েছিলাম ভালোবাসায় আর মাটির গন্ধে, অবর্ণনীয় ভালোলাগায়। অসাধারন একটা সময় কেটেছিল সহজ মানুষের উৎসবে। ওরা কেমন আমাদের দূরে সরিয়ে না দিয়ে আপন করে নিয়েছিল।
মনে আছে নীল, কতদিন পর্যন্ত আমরা সেই অকৃত্তিম ভালোলাগার অনুভবে শিহরিত হয়েছি, পরিকল্পনা করেছি লেখাপড়া ছেড়ে পাহাড়ি জীবন বেছে নেয়ার। তুমি বাঁশি বাজাবে চাঁদের আলোয় আমি বনফুলের গহনা পরে নাচব বনময়ূরি যখন তখন। নাগরিক জীবন দুপায়ে দলে চলে যাবো আমরা শাল তমালের ছায়ায়।
আমার আর কোন নতুন নেই শুধু পিছনের এক একটা সময় দিন, মুহূর্তের দৃশ্য খুলে খুলে দেখি, এক একদিন সেই ঘোর ভালোলাগায়, বিষাদে কাটিয়ে দেই।
উষ্ণ পৃথিবী আমাকে তার উষ্ণতায় জাগাতে পারছে না। আমার দুচোখে সমুদ্র লবন ধারা গলিয়ে দিচ্ছে বরফ। জলেরধারা কি পৌঁছোবে তোমার কাছে বলবে আমি কতটা কষ্টে আছি?
তুমি কেমন করে এমন নিরব হয়ে আছো আমার কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না। এ কেমন ব্যবহার! কতবার রাগ করে ভাবছি তোমাকে আর ভাবব না কিন্তু তুমি আমার ধমনীতে প্রবাহিত রক্ত, নিঃশ্বাসের অক্সিজেন হয়ে আছো কি ভাবে তোমাকে না ভেবে পারি বলো।
অপেক্ষায় আছি তুমি হয়তো আজ রাতে এসে দরজায় টুকা দিবে, জাগাবে আমার শীতলতা আনন্দে উচ্ছাসে, ভালোবাসায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৫:৩৪ ৫০০ বার পঠিত