বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০১৩
“সত্যি-মিথ্যা বানিয়ে লেখা হচ্ছে ঐশীকে নিয়ে”
Home Page » প্রথমপাতা » “সত্যি-মিথ্যা বানিয়ে লেখা হচ্ছে ঐশীকে নিয়ে”বঙ্গ-নিউজ ডটকম: ঐশী এখানে আসার পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আমার বরাতে নানা রকম নিউজ করেছেন সাংবাদিকরা। কিন্তু আমি কারো সঙ্গে কথা বলিনি। আমিতো এখানে কথা বলার জন্য অথোরাইজড ব্যক্তি নই। আমি কেন কথা বলবো?
সাংবাদিকদের কথা বলতে হলে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সঠিক নিয়মে আসতে হবে। উপ-পরিচালক কিংবা মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারা অনুমতি দিলেই কেবল আমি কথা বলবো। আর আমিতো এখানে কথা বলার কেউ নই, তাহলে কেন তারা আমার নাম ব্যবহার করে নিউজ করেছেন?
প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলেছেন গাজীপুরের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের (সংশোধনাগার) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক তসলিমা বেগম।
বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অবস্থিত কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করতে চাইলে অনুমতি নেই বলে জানিয়ে ফোনে এসব কথা বলেন তসলিমা বেগম।
তসলিমা বেগম আরো বলেন, সাংবাদিকরা ফোন করেছেন। কিন্তু তারা যেসব কথা লিখেছেন, সেরকম কোনো কথা কারো সঙ্গেই বলিনি। পরে দেখেছি, তারা সত্যি-মিথ্যা বানিয়ে লিখেছেন।
পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলার আসামি তাদেরই মেয়ে ঐশী রহমানকে আদালতের নির্দেশে গত ২৪ আগস্ট শনিবার রাত ৯টার দিকে কেন্দ্রটিতে আনা হয়। তার সঙ্গে তাদের বাসার গৃহকর্মী সুমিকেও রাখা হয়েছে এ কেন্দ্রে।
একই আদালত বৃহস্পতিবার ঐশী রহমানকে গাজীপুরের ওই কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে খুব শিগগিরই তাকে ছাড়তে হচ্ছে কেন্দ্রটি।
এ ছয়দিন কেমন ছিল ঐশী জানতে চাইলে কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের খাবারের ঠিকাদার এটিএম নাসিরউদ্দিন বলেন, পত্রিকায় যে রকম পড়েছি, সে রকম মনে হয় না ঐশীকে। পত্রিকায় দেখলাম, ওর বয়স লেখা হয়েছে ১৯ বছরের বেশি, এটাও মিথ্যা কথা। পত্রিকায় ওকে নিয়ে যা যা লেখা হয়েছে কোনো কিছুর সঙ্গেই বাস্তব অবস্থার মিল নাই।
তিনি বলেন, ঐশী সবার সঙ্গেই কথা বলছে। অন্য মেয়েসহ এখানে যারা আছে সবার সঙ্গেই আন্তরিক ও স্বাভাবিক আচরণ করছে। এখানে যা খেতে দেওয়া হয় সবই খেয়ে নিচ্ছে। মনেই হয় না, এই মেয়ে মাদকাসক্ত কিংবা উশঙ্খৃল। খুবই শান্ত মেয়ে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন পড়ার জন্য বই চেয়েছে। কখনো কখনো মন খারাপও করে আর মাঝে মাঝেই ছোট ভাইটার জন্য কাঁদে।
কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান ফটকের প্রহরী আব্দুল মান্নান বলেন, বুধবার একজন ঐশীর বই পড়ার আগ্রহের কথা জানতে পেরে তার জন্য দুটো বই নিয়ে এসেছিলেন ঢাকা থেকে। কিন্তু এই কেন্দ্রের কেউ বইগুলো নিতে আসেনি। বারবার ভেতরে খবর পাঠানো হয়েছিল। তিনি প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা এখানে বসেছিলেন বই দুটো দেওয়ার জন্য। তারপরও দিতে পারেননি।
উল্লেখ্য, গত ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে তাদের রাজধানীর চামেলীবাগের ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয়। ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৭ আগস্ট দুপুরে পল্টন থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের মেয়ে ধানমণ্ডির অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ও-লেভেলের শিক্ষার্থী ঐশী রহমান। পরে গৃহকর্মী সুমিকেও থানায় দিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আটক করা হয় ঐশীর বন্ধু রনিকে।
১৮ আগস্ট আদালতে পাঠিয়ে ঐশীসহ তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গত শনিবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে আনা হলে বাবা-মাকে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ঐশী। গৃহকর্মী সুমিও জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে পাঠানো হয় কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে।
ঐশীকে গ্রেফতারের পর পুলিশও জানায়, ইয়াবা সেবনে বাধা দেওয়ায় মেয়ে ঐশীর পরিকল্পনাতেই হত্যার শিকার হন মাহফুজ দম্পতি। বাবা-মা খুন হয়ে যাওয়ার পরও একমাত্র মেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
তবে কিশোরী ঐশী ও সুমিকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেওয়ার ব্যাপারটি সমালোচিত হয়ে আসছিল। মানবাধিকার কর্মীরা আরো বলে আসছিলেন, নাবালিকা ঐশীকে কোনোভাবেই কারাগারে পাঠানো যাবে না।
নিহত মাহফুজুর দম্পতির অন্য সন্তান ছেলে ঐহী রহমান (৭) রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র।
বাংলাদেশ সময়: ২১:০৩:৩৯ ৪৬৯ বার পঠিত