রবিবার, ৩১ মার্চ ২০১৩
পদ্মা পাচ্ছে বাজেটে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » পদ্মা পাচ্ছে বাজেটে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকামালয়শিয়া ও চীনের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য আগামী বাজেটে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।শনিবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, এই অর্থের মধ্যে ৬০৮ মিলিয়ন ডলার থাকবে বিদেশি মুদ্রায়।
মন্ত্রী বলেন, “নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতুর কাজ পুরোদমে শুরু করার যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এর রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।”
অর্থ মন্ত্রণালযের সম্মেলন কক্ষে এই মত বিনিময় সভায় আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেও পদ্মা সেতুর জন্য এক হাজার ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রবীণ সাংবাদিক রাহাত খান, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সিইও সৈয়দ ফাহিম মুনয়েমসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা মতবিনিময়ে অংশ নেন।
পদ্মা প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব ব্যাংকসহ কয়েকটি দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তি করলেও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর চলতি বছর জানুয়ারির শেষে তাদের ‘না’ বলে দেয় সরকার।
এরপরই সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানায়।
এরই মধ্যে মালয়শিয়া ও চীনসহ কয়েকটি দেশের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। ফেব্রয়ারি মাসে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরে মালয়শিয়া ও চীন।
মালয়শিয়ার ২৩০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাবে বলা হয়, টোল আদায়ের মাধ্যমে ২৬ বছরে এই অর্থ তুলে নেবে তারা। লাভের ৭০ শতাংশ, অর্থাৎ ৫২০ কোটি ডলার মালয়শিয়া নেবে। বাকি ৩০ শতাংশ বাবদ বাংলাদেশ পাবে ২১৯ কোটি ডলার।
অন্যদিকে স্পেয়ার এনার্জি ক্রিয়েশনস বেইজিং লিমিটেডের নেতৃত্বে কয়েকটি চীনা কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম পদ্মা সেতু নির্মাণে ১৯৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়।
তাদের প্রস্তাবে রাজি থাকলে প্রকল্প ব্যয়ের ২৭৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১৯৫ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের যোগান দেবে। বাকি অর্থ দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে, যা মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ।
এ জন্য চীনা কনসোর্টিয়াম কোনো সুদ নেবে না। তারা টোলও তুলবে না। প্রতি মাসে ৮ দশমিক ১৫ মিলিয়ন বা বছরে মোটামুটি ১০ কোটি ডলার হিসাবে ২০ বছরে চীনা বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
চীনের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, “এখন আমরা নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি নিয়েই অগ্রসর হচ্ছি। অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না।”
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যতো হৈ চৈ হচ্ছে; জাইকার অর্থায়নে এর থেকে দ্বিগুণ বিনিয়োগের মেট্রোরেল প্রজেক্ট নিয়ে ততো আলোচনা হয় না।”
সরকারকে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার পরামর্শ দেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
অর্থমন্ত্রী এ সময় মৃদু হেসে বলেন, “পদ্মা প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে যতো আলোচনা হয়, জাইকা তার থেকে অনেক বেশি অর্থ আমাদের মেট্রো রেল প্রকল্পে দেয়ার পরও আসলেই তেমন আলোচনা হয় না।”
মেট্রো রেল প্রকল্প নিয়ে জাইকার সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি হয়েছে জানিয়ে মুহিত বলেন, “অামরা যতো দ্রুত সম্ভব এ প্রকল্পের কাজ শুরু করব।”
ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে চার লেনে উন্নীত করার কাজে ধীরগতির প্রসঙ্গ টেনে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০০৮ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে চার লেনে উন্নীত করার কাজের জন্য দ্বিতীয় দফা টেন্ডার করে কার্যাদেশ দেয়ার পরেও বিভিন্ন জটিলতায় তা বাতিল করা হয়। এখন পর্যন্ত সেই হাইওয়ের কাজ শেষ হয়নি।”
অর্থমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, “জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কারণে এ কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। রাস্তার দুপাশে অনেক মসজিদ-মাদ্রাসা থাকার কারণে জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগে বলে মাটি সংগ্রহ নিয়েও অনেক সমস্যা হয় বলে মন্ত্রী জানান।
নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, প্রতিবার এপ্রিল মাসে বাজেট আলোচনা শুরু হলেও এবার একটু আগেই বাজেট আলোচনা শুরু করা হয়েছে।
“এর একটি কারণ আছে। সবার মতামত নেওয়ার পরই আমরা বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করব। মিডিয়ায় বাজেটের আকার নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু আমি নিজেই জানি না নতুন বাজেটের আকার কেমন হবে। তবে এটা বলতে পারি, এবারের বাজেটের আকার চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে খুব বেশি হবে না।”
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পাশাপাশি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান মুহিত।
“নতুন বাজেটে প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইল জেলার জন্য জেলা বাজেট ঘোষণা করা হবে। সম্ভব হলে আরেকটি জেলার জন্যও জেলা বাজেট দেয়া হবে।”
বিদ্যুৎ খাতের উন্নতি হয়েছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “২০১৭ সালের পর দেশে আর বিদ্যুৎ সমস্যা থাকবে না। এ খাতের উন্নয়নে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। ছোটো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি বড় বড় প্রকল্পের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে।”
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “এ সরকারের এটাই শেষ বাজেট। সরকার তার নির্বাচনী ওয়াদা কতোটুকু পূরণ করতে পেরেছে কিংবা কেন মানুষ এ সরকারকে আবার ভোট দেবে- তার একটি স্পষ্ট ধারণা অাগামী বাজেটে থাকা উচিৎ।”
সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকার ‘নমনীয় মনোভাব’ দেখাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বুলবুল।
বাংলাদেশ সময়: ০:২৩:৩৭ ৬০১ বার পঠিত