বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২

কিডনি কেনা-বেচা, একটি চক্র গ্রেপ্তার !

Home Page » প্রথমপাতা » কিডনি কেনা-বেচা, একটি চক্র গ্রেপ্তার !
বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২



কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের গ্রেফতারকৃত কয়েকজন

বঙ্গ-নিউজ: প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানা অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশের কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে অসহায়-নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এমনই একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব।

আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশন চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয়ের চটকদার প্রচারণা চালাতো তারা। অবশেষে র‌্যাবের অভিযানে চক্রের মূলহোতা শহীদুল এবং এ সংক্রান্ত ফেসবুক পেজের এডমিনসহ ৫ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর ভাটারা, বনশ্রী ও মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. শহিদুল ইসলাম মিঠু (৪৯), মো. মিজানুর রহমান (৪৪), মো. আল মামুন ওরফে মেহেদী (২৭), মো. সাইমন (২৮) এবং মো. রাসেল হোসেন (২৪)।

অভিযানে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর সাথে চুক্তির এফিডেভিট কপি, ১৪টি পাসপোর্ট, কিডনি ক্রস-ম্যাচিংয়ের দলিলাদি, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফটোকপি, ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের জাল সীলমোহর, খালি স্ট্যাম্প, সিপিইউ, মোবাইল ও সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, কিডনি কেনাবেচার এই চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। চক্রের সদস্যরা পাশ্বর্বর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনাবেচা সদস্যদের চক্রের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক মানুষকে সেখানে পাচার করেছে।

চক্রের ১ম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। চক্রের ২য় দলটি ১ম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

পরবর্তীতে তৃতীয় গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সাথে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

র‍্যাব আরও জানায়,এই চক্রের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা এই অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীপ্রতি ২০ হতে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে এবং অগ্রীম ২ লাখ টাকা প্রদান করতো। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাদের বাকি টাকা না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম অভিযুক্ত মো. শহিদুল ইসলাম মিঠু ২০১৬ সালে নিজের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি কিডনি প্রতিস্থাপনে রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখতে পান এবং দেশে এসে এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন।

অল্পদিনের মধ্যেই একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করেন শহিদুল এবং অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা হতে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন।

তিনি আরও বলেন, শহিদুল ইতোমধ্যে পঞ্চাশের অধিক কিডনি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। এছাড়া মিজানুর রহমান কিডনি ডোনারদের ভারতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, ব্যাংক এনডোর্সমেন্ট, মেডিকেল ডকুমেন্টস, ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে দিতেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১:১৩:৪২   ৩৯৫ বার পঠিত   #  #  #  #  #