বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

জুলেখা হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সিরাজুল গ্রেপ্তার

Home Page » প্রথম পাতা » জুলেখা হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সিরাজুল গ্রেপ্তার
বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২



র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত সিরাজুল

বঙ্গ-নিউজ: মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইরের গর্ভবতী জুলেখা হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সিরাজুলকে ১৯ বছর পর নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস দল গতকাল ২২ জুন রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের জুলাই মাসে মানিকগঞ্জ সদর থানার বাহের চর এলাকার সিরাজুল ইসলামের সাথে সিংগাইর থানার উত্তর জামশা গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে জুলেখা বেগমের বিবাহ হয়। ওই সময় বরপক্ষকে যৌতুক হিসেবে নগদ অর্থ, গহনা এবং আসবাবপত্র প্রদান করা হয়।

তবুও বিয়ের পর থেকে আসামি সিরাজুল স্ত্রীকে আরো যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো এবং যৌতুক না দিতে পারলে তালাক দিবে বলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো। ইতোমধ্যে তার স্ত্রী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে আসামি সিরাজুল তার প্রতিবেশী মোশারফ নামে এক যুবকের সাথে স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্ক আছে বলে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তোলে এবং স্ত্রীকে আরো বেশি নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আসামির গ্রামে সালিশ বৈঠক আয়োজন করে জুলেখার পরিবার।

সেখানে পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সালিশে উপস্থিত ব্যক্তিরা সিরাজুলকে গালিগালাজ করে। এই ঘটনার পর সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সিরাজুল তার স্ত্রীকে নিয়ে শশুর বাড়ি সিংগাইরের উত্তর জামশা গ্রামে যায়। ৬ ডিসেম্বর জুলেখাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মানিকগঞ্জ শহরে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করে গভীর রাতে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়। মানিকগঞ্জ শহর থেকে সিরাজুল তার স্ত্রীকে নিয়ে কৌশলে শ্বশুর বাড়ির নিকটবর্তী কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।

এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি তার ব্যাগে থাকা গামছা বের করে জুলেখার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। মর্মান্তিক এই ঘটনায় ভিকটিম জুলেখা নিহত হওয়ার পাশাপশি তার ৮ মাসের গর্ভস্থ সন্তানও হত্যার শিকার হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরদিন ৭ ডিসেম্বর থানা পুলিশ জুলেখার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। সেদিনই নিহতের বাবা বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় সিরাজুল, তার বড় ভাই রফিকুল, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল, চাচা ফাইজুদ্দিন ও তাইজুদ্দিন এবং মামা আবুল হোসেনসহ সর্বমোট ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলার পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে জুলেখার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০০৫ সালের শেষের দিকে মানিকগঞ্জ জেলার জেলা ও দায়রা জজ মো. মোতাহার হোসেন চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামি সিরাজুলকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। ওই ঘটনার পর থেকে সিরাজুল প্রায় ১৯ বছর পলাতক ছিলেন।

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক জানান, আসামি সিরাজুল ১৯৮২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার বাহির চর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেনি। ব্যক্তিগত জীবনে আসামি একগুয়ে ও বদরাগী ছিল।

স্ত্রী জুলেখাকে হত্যা করার পর কয়েকদিন সাভারে আত্মগোপনে থাকে সিরাজুল। ২০০৫ সালে পুনরায় বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানার চর সৈয়দপুর এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন সিরাজুল। বর্তমান তার সংসারে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী জুলেখাকে হত্যার পর আসামি আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যাননি।

গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য সিরাজুল শরিয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। এক জায়গায় সে বেশিদিন অবস্থান করতেন না। তাছাড়া পরিচয় গোপনের উদ্দেশে প্রতিনিয়ত পেশা পরিবর্তন করতেন। বিভিন্ন সময় রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, সবজি বিক্রেতা, কুলি, রাজমিস্ত্রি, ট্রাকচালক এবং পরিবহন অফিসের দালালি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৩:৩০   ২৭৪ বার পঠিত   #  #  #  #