সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০২২

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আদ্যোপান্ত - প্রথম পর্ব

Home Page » প্রথমপাতা » দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আদ্যোপান্ত - প্রথম পর্ব
সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০২২



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

যুদ্ধ কখনো জাতিতে জাতিতে সমস্যা নিরসনের পথ হতে পারে না । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হয়েছিল এবং তারই প্রেক্ষিতে বিশ্বশান্তি রক্ষায় লীগ অফ নেশনস আবির্ভাব হয়েছিল। কিন্তু লীগ অফ নেশন বিশ্ব শান্তি রক্ষায় ব্যর্থ হবার ফলস্বরূপ হিসেবে বিশ্ববাসীকে সবথেকে ভয়াবহ ও মারাত্মক যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয় । ৫ পর্বের বিশেষ প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্বে তুলে ধরছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আদ্যোপান্ত ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ যাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধটা যেমন হঠাৎ করে হয়ে গেল, ২য় বিশ্বযুদ্ধ তেমন ছিল না। বরং এটা ছিল পূর্ব পরিকল্পিনার ফসল! জার্মানী-ইটালি এবং জাপান পরিকল্পিতভাবে তৎকালীন বিশ্ব ব্যাবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে এই যুদ্ধ বাধায়। ১ম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্য, অটোমান সাম্রাজ্য এবং রাশিয়ান সম্রাটের পতনের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতির ময়দানে খেলোয়াড় বদল হয়। মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসন্ন হয়ে পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আগমনে সবমিলিয়ে নেতৃত্ব উঠে যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের হাতে! ওদিকে লেনিনের নেতৃত্বে রাশান রাজনীতিও ভিন্ন পথে চলে যায়।উইলসন ছিলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, গণতন্ত্র এবং লিবেরালিজমের প্রবক্তা ও বাস্তবায়নের অন্যতম নায়ক।
যুদ্ধপরবর্তীকালীন নেতারা সবাই এই মর্মে একমত হয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুদ্ধ একটা অভিশাপ। সবাই ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্যে একমত হয়ে উইলসনের সাথে একমত হয় যে, যেহেতু যুদ্ধের পুরো ক্ষতিটাই বহন করে জনগণ তাই জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যদিও তাদের কাজকর্ম সেই সময়ের তুলনায় বেশ “ইউটোপিয়ান” ছিল, কিন্তু তারা বেশ কিছু সমস্যার সঠিক কারন খুজে বের করে , গোপন সামরিক চুক্তি এবং গোপন আন্তর্জাতিক রাজনীতি যুদ্ধের সহায়ক ধারনা করে, “ওপেন ডিপ্লোম্যাসি”র প্রচলন শুরু হয়।

সরকারব্যাবস্থায় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সচ্ছতার নিশ্চয়তা করার লক্ষ্যেই জন্ম নেয় “লীগ অব নেশন্স”! সহজ ভাষায় যেটার দায়িত্ব ছিল বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধ প্রতিরোধে একটি “মুরুব্বী” কাউন্সিল হিসেবে কাজ করা! পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা যা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে গঠিত হয়!আজকের ” জাতিসংঘ” এর পুরানো বা ব্যার্থ ভার্সনই হলো এই “লীগ অব নেশন্স”।

যুদ্ধে পরাজিত জার্মানীকে ২৬৯ বিলিয়ন “গোল্ড মার্ক” জরিমানা করা হয়ে। এবং ১৮৭২ এর যুদ্ধে জার্মান দখলকৃত “আলসাক-লরেন” এলাকা ফ্রান্স নিয়ে নেয়! জার্মানীকে অস্ত্রহীন করে ফেলা হয়। এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যকে একদম খন্ড খন্ড করে ফেলা হয়।অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য বেদখল করা হয় এবং তুরস্কের নানা অংশ দখল করার লক্ষ্যে ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইটালী-গ্রিস তুর্কী ভুখন্ডে ঢুকে যায় । যদিও তুরস্ক নিজেদের ভুমি রক্ষা করতে সক্ষম হয় ।সবচেয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে , যুদ্ধ পরবর্তী মূল নেতা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলসনের সাথে! মার্কিন নেতৃত্বে পুরো দুনিয়া বদলে দেবার স্বপ্ন দেখিয়ে ইউরোপ থেকে দেশে ফেরার পর মার্কিন কংগ্রেস উইলসনের সমস্ত প্ল্যান খারিজ করে দেয়, এবং নিজেদের ইউরোপীয়ান ঝামেলা থেকে দুরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়!এই অবস্থায়, ১০ বছর পেরিয়ে যায়। তখনো বিশ্ব জুড়ে ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্য ছিল এবং নিদৃষ্ট যোগ্য কোন নেতৃত্ব না থাকায় দেশগুলো নব্য লিবেরাল আইডিয়া ঠিক মত আত্মস্থ করতে ব্যার্থ হওয়ায়, ফলে “লীগ অব নেশন” কার্যত কাজ করতে পারছিল না! এবং রাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করার নীতি এবং সামগ্রিক চিন্তার অভাবে ধীরে ধীরে এটা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে

এই অবস্থায়, বিজয়ী ব্রিটেন বা ফ্রান্স আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রনে অনাগ্রহী হয়ে নিজ নিজ হিসাব ঠিক রাখায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। ফ্রান্সের লক্ষ্যে ছিল জার্মানীর ভবিষ্যত যুদ্ধ করার ক্ষমতা সম্পূর্ণ নিশ্চিন্হ করে ফেলতে, কিন্তু ব্রিটেন হয়তো “নেপোলিয়ান” যুগের কথা স্বরন করে “ব্যালেন্স অব পাওয়ার” ঠিক রাখার জন্যই জার্মানীর সামরিক উপস্থিতির সমর্থন করে! এবং জার্মানী আবার নিজেদের সামরিক বাহিনী গঠনের অনুমুতি পায়। এটা একটা মহা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, কারন ১ম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানীর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত হয়।
এরই মাঝে বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় “অর্থনৈতিক মহামন্দা” । করুন অর্থনৈতিক পরিবেশে ইটালীতে ফ্যাসিস্ট মুসলিনির আবির্ভাব ঘটে এবং জার্মানীতে নির্বাচিত হয়ে যায় এডলফ হিটলার ।

……..চলবে
সংকলনে: মাসুম আজাদ

বাংলাদেশ সময়: ২২:১২:৩৪   ৫৮৩ বার পঠিত   #  #  #  #