বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০১৩

“এক সাংবাদিকও থাকতেন লিয়াকতকে জিজ্ঞাসাবাদে”

Home Page » প্রথমপাতা » “এক সাংবাদিকও থাকতেন লিয়াকতকে জিজ্ঞাসাবাদে”
বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০১৩



ulfa220130822071101.jpg বঙ্গ-নিউজ ডটকম: দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার অন্যতম আসামী এনএসআই’র তৎকালীন উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেনকে সিআইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় দু’পুলিশ সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন ও আলাউদ্দিন এবং জাতীয় এক পত্রিকার চট্টগ্রাম অফিসের এক সাংবাদিকও উপস্থিত থাকতেন বলে দাবি করেছে আসামীপক্ষ।বৃহস্পতিবার এ মামলার অধিকতর তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.মনিরুজ্জামানকে জেরার সময় লিয়াকতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ এ দাবি করেন। আদালত বিষয়টি নথিতে অন্তর্ভুক্ত করেন।

চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমানের আদালতে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় লিয়াকতের পক্ষে জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আদালত এ মামলার কার্যক্রম আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূলতবি করেন।

জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মেজর লিয়াকতকে গ্রেপ্তারের পর প্রথম দফায় চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে সিআইডি কার্যালয়ে এবং পরেরব‍ার ৬ দিন টিএফআই সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ২০০৯ সালের ২ জুন লিয়াকতকে ছয়দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।’

এসময় অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ‘দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সার্জেণ্ট আলাউদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন এবং একটি জাতীয় পত্রিকার চট্টগ্রামের এক সাংবাদিকও উপস্থিত থাকতেন।’ জবাবে বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান মনিরুজ্জামান।

আইনজীবী দাবি করেন, সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন ও আলাউদ্দিন ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর থেকে পলাতক অবস্থায় ছিল এবং জাতীয় পত্রিকার এক সাংবাদিক মনিরুজ্জামানকে পলাতক আসামী নিয়ে ঘোরাফেরার বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে বিষয়টি নাকচ করেন মনিরুজ্জামান।

উল্লেখ্য দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সার্জেন্ট আলাউদ্দিন ও সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালান থেকে দু’টি একে-৪৭ রাইফেল চুরি করে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগে ২০০৫ সালে নোয়াখালীর সুধারাম থানায় মামলা হয়। তাদের র‌্যাব গ্রেপ্তারও করেছিল। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের মামলা প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে দু’জনই চট্টগ্রামে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত আছেন।

জেরার এক পর্যায়ে আইনজীবী দাবি করেন, ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সাক্ষী গোলাম রসুলের ১৬১ ধারার বিবৃতিতে অস্ত্র আটকের সময় সিইউএফএল জেটিতে ‘আবুল হোসেন’ নামে একজনের উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ আছে। বিবৃতির কোথাও মেজর লিয়াকত ছদ্মবেশে আবুল হোসেন হিসেবে থাকার কথাটি উল্লেখ নেই।

জবাবে মনিরুজ্জামান প্রথমে আইনজীবীর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করলেও পরে বলেন, বিষয়টি বিবৃতিতে উল্লেখ আছে।

এরপর আইনজীবী দাবি করেন, সার্জেন্ট আলাউদ্দিন তার আদালতে দেয়া বিবৃতির কোথাও বলেননি, অস্ত্র আটকের সময় আবুল হোসেন নামে একজন কথা বলার অনুরোধ করে তাকে টেলিফোন এগিয়ে দেয়। মনিরুজ্জামান এ দাবি সত্য নয় বলে জানান।

আইনজীবী দাবি করেন, মামলার অভিযোগপত্রে ৪৪ নম্বর আসামী হিসেবে মেজর লিয়াকত হোসেন এবং ৫১ নম্বর আসামী হিসেবে আবুল হোসেনের নাম উল্লেখ আছে। সম্পূরক অভিযোগপত্রে আবুল হোসেনকে মেজর লিয়াকত হিসেবে দেখানো হয়নি। জবাবে মনিরুজ্জামান এটি তার এখতিয়ারে নেই বলে জানান।

উল্লেখ্য ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) জেটিঘাটে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইনে ও চোরাচালানের অভিযোগে দু’টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ঘাট শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ প্রায় অর্ধশত লোককে আসামী করা হয়।

মামলা দু’টির সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপক্ষের তৎকালীন কৌসুলী মহানগর পিপি আহসানুল হক হেনার আবেদনের প্রেক্ষিতে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন আদালত।

প্রায় সাড়ে তিন বছর অধিকতর তদন্তের পর ২০১১ সালের ২৬ জুন নতুনভাবে আরও ১১ আসামীর নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৎকালীন এএসপি মো.মনিরুজ্জামান।

এরপর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিচার।

সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের পর থেকে এ মামলায় অধিকতর তদন্তকারী কর্মকর্তা মো.মনিরুজ্জামান চৌধুরীসহ ৩০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৯:৪৫   ৩৭২ বার পঠিত