শনিবার, ৯ অক্টোবর ২০২১

শিক্ষাবিদ ও রম্যলেখক আতাউর রহমান’র স্মরণসভা আতাউর রহমান বাংলা রম্যসাহিত্যে একটি আলোকিত প্রতিভা

Home Page » সাহিত্য » শিক্ষাবিদ ও রম্যলেখক আতাউর রহমান’র স্মরণসভা আতাউর রহমান বাংলা রম্যসাহিত্যে একটি আলোকিত প্রতিভা
শনিবার, ৯ অক্টোবর ২০২১



শিক্ষাবিদ ও রম্যলেখক আতাউর রহমান’র স্মরণসভা আতাউর রহমান বাংলা রম্যসাহিত্যে  একটি আলোকিত প্রতিভা

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, খ্যাতিমান রম্যলেখক ও ডাকবিভাগের সাবেক মহাপরিচালক আতাউর রহমান ছিলেন বাংলাসাহিত্যে রম্যরচনায় স্মরণকালের এক বিরল ও আলোকিত প্রতিভা। বাংলাসাহিত্যে আবুল মনসুর আহমদ এবং সৈয়দ মুজতবা আলীর মাধ্যমে রম্যরচনার যে জাগরণ সৃষ্টি হয়, আতাউর রহমান তাঁর রচনার মাধ্যমে সে জাগরণকে অনেকখানি এগিয়ে দেন। গল্প, কথায় কিংবা বক্তৃতায় তিনি যেভাবে হাস্যরস সৃষ্টি করতে পারতেন, তা তাঁর এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা হিসেবেই বিধৃত। সেন্স অব হিউমার সৃষ্টির অনন্য রচনার ভেতরেও তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব।


পাণ্ডুলিপি প্রকাশন, সিলেট-এর আয়োজনে বাংলাদেশের খ্যাতিমান রম্যলেখক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং ডাকবিভাগের সাবেক মহাপরিচালক আতাউর রহমান’র স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।


পাণ্ডুলিপি প্রকাশন-এর স্বত্বাধিকারী লেখক, প্রকাশক ও সংগঠক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সলের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর ২০২১) রাত আটটায় সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীর পূর্বপারস্থ পাণ্ডুলিপি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন মদনমোহন কলেজ, সিলেট-এর প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক লে. কর্নেল এম. আতাউর রহমান পীর, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট-এর প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্য সমালোচক ও কবি লে. কর্নেল সৈয়দ আলী আহমদ (অব.)। স্মরণসভাটি সঞ্চালনা করেন কবি ও প্রাবন্ধিক মো. আব্দুল বাছিত।


সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক লে. কর্নেল এম আতাউর রহমান পীর বলেন, রম্যলেখক আতাউর রহমান বৃহত্তর সিলেটের এক আলোকিত ও কিংবদন্তি শিক্ষাবিদ। তাঁর মেধা-মনন, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সততা এবং কর্তব্যনিষ্ঠা তাঁকে সর্বজন স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাসাহিত্যে রম্য রচনায় তিনি এক কালীন প্রতিভা। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ছাড়াও তিনি সমাজসেবায় রেখেছেন নানামাত্রিক অবদান। যা তাঁকে একজন সত্যিকার মানুষ হিসেবে পরিণত করেছে।


বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লে. কর্নেল সৈয়দ আলী আহমদ (অব.) বলেন, বাংলাসাহিত্যে রম্যরচনা একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। রম্যরচনায় যেমন বুদ্ধিবৃত্তিকতার বিদগ্ধ প্রয়োগ থাকতে হয়, তেমনই থাকতে হয় হাস্যরস সৃষ্টির অননুমেয় ক্ষমতা। যা ব্যক্তি আতাউর রহমানের চিন্তা-চেতনায় পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিল। বাংলাসাহিত্যে রম্যরচনায় তিনি এক অনন্য দিকপাল। রম্যরচনায় তার অবদান ইতিহাসে পাঠকদেরকে গভীর আনন্দে স্নাত করবে বলে আমার বিশ্বাস।


সভাপতির বক্তব্যে পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল বলেন, একজন লেখকের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি একজন মানবিক মানুষ। রম্যলেখক আতাউর রহমানের চিন্তাচেতনায় ছিল পরিপূর্ণ মানবিকতা। শিক্ষা-সাহিত্য এবং সমাজসেবায় তিনি যেমন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, সেভাবে তিনি মানুষকে কাছে টেনে নিতে কার্পণ্যবোধ করতেন না। আমার সঙ্গেও তাঁর ছিল গভীর সম্পর্ক। রম্যসাহিত্যে তাঁর অবদান কিংবদন্তি হয়ে থাকবে।


উল্লেখ্য, রম্যলেখক আতাউর রহমান ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের নগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর কিছুদিন সিলেট মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ ও মদনমোহন কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সার্ভিস পরীায় উত্তীর্ণ হয়ে সিএসপি অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। তিনি লন্ডন ও রিয়াদের বাংলাদেশ বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি চাকরি জীবনে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক পদ থেকে ২০০২ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন। অবসরের পর তিনি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৪টি। এছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং রম্যরচনা প্রকাশিত হয়। একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান আমলা, লেখক, শিক্ষক, কূটনীতিক ও অসাধারণ বক্তা হিসেবে তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। বাংলাসাহিত্যের বিশিষ্ট রম্যলেখক আতাউর রহমান ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ২৮ আগস্ট শনিবার ঢাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০:২৬:২৬   ৬০৫ বার পঠিত