রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

মিনি ও টুনটুনির মা — মোজাফফার বাবু

Home Page » সাহিত্য » মিনি ও টুনটুনির মা — মোজাফফার বাবু
রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১



মোজাফফার বাবু

টুনটুনির মা আর আসে না।
বাসন-কসন বিছানাপত্রে ময়লা বাসা বেঁধেছে
জামা-কাপড়ে ধুলো আর ঘামের চাষে জন্ম নিয়েছে ছত্রাক
লেবুর ফোটা ফোটা রস আর লবণ-আঠায় মেঝেও যেনো অন্যরকম
তার ওপর মাথা থেকে খসে পড়া চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
টুনটুনির মা থাকলে চোখে পড়তো না এসব, ঠিক গুছিয়ে রাখতো।
অবশ্য তারই বা কী দোষ তিন মাসের বেতন বাকি পড়ে আছে
দেখার কেউ নেই, খোঁজে না সে-ও। বুঝেও না বোঝার ভানে
আজও বাঁচিয়ে রেখেছে নিজেকে শকুনরাঙা মনের ফণা থেকে!
চোখ-কান বুজে গতরের ঘামে টেনে চলেছে সংসার
স্বামী পরিত্যক্তাকে শরীর-ঐ্শ্বর্য পরম মমতায় দেখেশুনে রাখে।
.
থমথমে নিথর রাত নাড়িয়ে দিচ্ছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক
টিকটিক করে একাধারে হেঁটে চলেছে দেয়াল ঘড়ির কাঁটা
ক্লান্তিতে বুজে আসা চোখ নির্জীবতায় সজাগ এখনো
আর সেই ক্লান্ত চোখের ব্লাকহোলে ডুবে যাচ্ছে রঙিন স্বপ্নরা
তার বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে পকেট-পৃথিবী
ছাত্রত্বে বেকারত্ব ঘাড় ধরে চুবিয়ে মারতে চাইছে ভ্যাকুয়ামে
ছুড়ে ফেলতে চাইছে বিবেকের চোরাবালিতে
অথচ সমাজ বদলের সৈনিক তখন নিশ্চুপ-ব্যস্ততায়
বোবা-বাক্যালাপে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করছে আধ্যাত্মিকতায়।
আর মলিন মুখে ঘরের কোণায় বসে মিউ মিউ করছে পোষা মিনি-টা
কিছু বলতে চেয়েও চোখ ভারি করে তাকিয়ে আছে অন্য দিকে;
ও আমার দুঃখ কষ্টের ভাগীদার–
সময় অসময় খোঁজ খবর নেয়, পাশে শুয়ে থাকে।
আগে তার সব কথাই বুঝতে পারতাম, এখন পারি না
পকেটমস্তিষ্ক মনের ঘড়িকে থামিয়ে দিয়েছে যেনো।
.
রাত গড়িয়ে সকাল কড়া নাড়ছে, কড়া নড়ছে দরজারও
শব্দের দুলুনিতে উঠে গিয়ে দোর খুলে দেখি–
টুনটুনির ছোট্ট ভাই বাদল অসহায় মুখচোখে দাঁড়িয়ে,j
‘কর্তা, মায়ের ভীষণ জ্বর, ওষুধের টাকাও নেই…’
অপরাধী চোখ চোখ থেকে সরিয়ে গদবাঁধা সেই উত্তর বেরিয়ে এলো–
‘সামনের হপ্তায় আসিস, ব্যবস্থা একটা হবেই!’
.
সমাজপতিরা তখনো টকশো গরম করে তুলেছেন
ঘরের কোণে বসে মিউমিউ ডাকছে মিনি
পকেটের ফুটো বেদনায় মাথা তুলতে চাইছে–
আঁধারের কালসাপ। ক্লান্ত চোখ মন ঢাকায় সচেষ্ট তখনো…

বাংলাদেশ সময়: ০:৪২:৩৪   ৭১৫ বার পঠিত   #  #  #  #