সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১

ফারহানা আকতার এর কলাম –“ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ –পর্ব- ৪২”

Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম –“ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ –পর্ব- ৪২”
সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১



নতুন প্রজন্মের চোখে মুক্তিযুদ্ধ

২. ১৯৪৭-ভারত ভাগ (উপমহাদশেরে বভিাজন ) :
ত.অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
থ.মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও বাংলার নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব৷
ত.অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ :
. দ্বতিীয় বশ্বিযুদ্ধরে পরে ও ভারতবর্ষের বিভক্তির প্রাক্কালে সোহরাওয়ার্দী, শরৎ বসু অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তবে কংগ্রেস নেতাদের বিরোধীতায় এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। খাজা নাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের একটি প্রভাবশালী অংশও এ উদ্যোগের বিরোধীতা করেছিলো। পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী বাংলা প্রদেশ বিভক্তি মেনে নেন।
১৯৪৬ সালের ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার পর প্রাদেশিক নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বাংলার মুসলিম লীগ বিজয়ী হয়। এ নির্বাচন পাকিস্তান দাবিকে বৈধতা দিলেও সোহরাওয়ার্দী ছিলেন স্বাধীন অখন্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার পক্ষে। মূলতঃ তিনিই ছিলেন অখন্ড বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির প্রাক্কালে বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী স্বাধীন, সার্বভৌম অখন্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎ বসুসহ কয়েক জন হিন্দু নেতা সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। আব্দুল হাশিমের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল তরুন অংশ এ উদ্যোগে সμিয়ভাবে অংশ নেন। তবে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের বিরোধিতায় অখন্ড স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রেক্ষাপট -
পাকিস্তান- রাষ্ট্ররে দাবিতে মুসলিম লীগ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগষ্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের দিন কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম ভয়াবহ বন্ধুকধারী দাঙ্গা শুরু হয়। μমে এ দাঙ্গা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। দাঙ্গায় হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এ সময় ভারতীয়দের স্বাধীনতার দাবীর তীব্র আকার ধারণ করে। এমতাবস্থায় ১৯৪৭ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড এ্যাটলী ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় ভারত বিভক্তি এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। এমতাবস্থায় কাল বিলম্ব না করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশকে হিন্দু-মুসলিম এলাকায় বিভক্ত করার প্রস্তাব করে। হিন্দু মহাসভা বাংলাকে বিভক্ত করে হিন্দু প্রধান অঞ্চল নিয়ে পশ্চিম বাংলা প্রদেশ গঠন এবং একে ভারতীয় ইউনিয়নের সাথে যুক্ত করার জন্য আন্দোলন শুরু করে। কলকাতার অমুসলিম বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহ এ আন্দোলনের সমর্থনে সμিয়ভাবে এগিয়ে আসে। হিন্দু মালিকানাধীন আনন্দবাজার অমৃতাবাজারসহ বিভিনড়ব সংবাদপত্র এ ব্যাপারে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
স্বাধীন অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার গতি প্রকৃতি -
ভারত বিভাগের প্রাক্কালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল দিল্লীতে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন। তিনি দীর্ঘ বক্তৃতায় বাংলা অবিভক্তির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি আবুল হাশিম, কংগ্রেস নেতা নেতাজীর ভাই শরৎ চন্দ্র বসু এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা কিরণ শংকর রায় এ উদ্যোগের প্রতি তাদের জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন। ১৯৪৭ সালে ২০ মে শরৎ চন্দ্র ও সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে এ ব্যাপারে বাংলার হিন্দু-মুসলিম নেতৃবৃন্দের
মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যা বসু-সোহরাওয়ার্দী প্রস্তাব নামে পরিচিত। বসু-সোহরাওয়ার্দী চুক্তির কয়েকটি উল্লেযোগ্য ধারা দেয়া হলো-
১। বাংলা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। ভারতের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে এর কি সম্পর্ক হবে তা রাাষ্ট্র নিজেই ঠিক করবে।
২। আইন সভার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে এ এলাকা ভারত- পাকিস্তানের অন্তর্ভৃক্ত হবে।
৩। হিন্দু ও মুসলমানদের সংখ্যা অনুপাতে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটধিকাররের ভিত্তিতে আইন সভায় যুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
৪। নতুন শাসনতন্ত্র অনুযায়ী আইনসভা ও মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত হিন্দু ও মুসলমান উভয় স¤প্রদায়ের সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীসহ সকল চাকুরীতে সমান অংশ থাকবে।
৫। বাংলার আইনসভা ৩০ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি নির্বাচিত করবে, যার ১৬ জন মুসলমান ও ১৪ জন হবেন হিন্দু।
ক্স অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের ব্যর্থতার কারণ -
স্বাধীন অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রতি বাংলার গভর্নর স্যার এফ. বারোজ এবং ভারত সচিব লিস্ট ওয়েলের পূর্ণ সমর্থন ছিল। ভারতের লর্ড মাউন্টব্যাটেন প্রথমে এর বিরোধিতা করলেও পরে বারোজের প্রচেষ্টায় তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। মুসলিম লীগ নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে সম্মতি জানিয়েছিলেন। এ উদ্যোগের প্রতি কংগ্রেসের হাইকমাণ্ড বিশেষ করে জওহরলাল নেহেরু ও প্যাটেলের প্রতিμিয়া আদৌ সহায়ক ছিলনা। প্যাটেল এ পরিকল্পনাকে একটি ফাঁদ হিসেবে আখ্যায়িত করে হিন্দু ও কংগ্রেস নেতাদের এ ফাঁদে পা না দেওয়ার ব্যাপারে সর্তক করে দেন। হিন্দু সহসভার মনোভাব ছিলো এরকম। একথা সত্য ও যুক্ত বাংলার পক্ষের নেতারা হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে, একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তি প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় কংগ্রেস নেতাগণ এ পরিকল্পনা মেনে নিতে রাজী ছিলো না। কেননা,, এতে তাদের কলকাতা বন্দর হাতছাড়া করতে হতো, যা ছিলো অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত। জত্তহরলাল নেহেরু অর্থনৈতিক বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে ঘোষণা করেন, যুক্ত অখণ্ড বাংলা একদিন পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হবে। তার মতে, বাংলার মুসলিম লীগের নেতারা এ সত্যকে গোপন রাখছেন। তিনি বলেন, যুক্ত বাংলায় মুসলমানদের আধিপত্য কায়েম হবে। শুধু কংগ্রেস নয় বাংলার মুসলিম লীগের একটি শক্তিশালী অংশ ও অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে। খাজা নাজিমুদ্দিন, নুরুল আমিন, মাওলানা আক্রাম খান প্রমুখ মুসলিম লীগ নেতা বাংলাকে বিভক্ত করে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে ছিলেন। মূলতঃ কংগ্রেস হাই কমান্ড ও মুসলিম লীগের গোঁড়া নেতাদের বিরোধিতায় অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।

থ.মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও বাংলার নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব:
বাংলার মুসলিম লীগ নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব - সা¤প্রদায়িকভাবে মুসলিম লীগ গঠিত হলেও এর দুটি অংশ ছিলো প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল অংশ। বাংলায় প্রগতিশীল অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম গ্র“প। অন্যদিকে প্রতিক্রিয়াশীল বা গোঁড়া অংশের নেতৃত্বে ছিলেন নাজিমুদ্দিন আক্রাম খান গ্রুপ। লাহোর
প্রস্তাবের সংশোধন ও অখন্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই দুই গ্র“পের দ্ব›দ্ব চরম আকার ধারণ করেছিলো।১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বাংলা তথা উত্থান ভারতবর্ষে মুসলিম লীগের কার্যকর উস্থান ঘটে। এ সময় মুসলিম লীগের নেতৃত্ব জমিদার সামন্ত প্রভুদের বদলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে আসে। তবে জমিদার ও নবাবদের কার্যকর নিয়ন্ত্রন তখনো ছিলো মুসলিম লীগের ওপর। মুসলিম লীগে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থানে ফলে দলটির গণভিত্তি বাড়তে থাকে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ , হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, এম,কে ফজলুল হক, লিয়াকত আলী খান প্রমুখ নেতাদের জনপ্রিয়তা রাড়তে থাকে। দলের ভেতর তাদের মর্যাদা কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের অভাবনীয় বিজয়ে এসব নেতাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। বিশেষতঃ বাংলায় সোহরাওয়ার্দী তখন গণনেতায় পরিণত হন। বাংলায় মুসলিম লীগের বিজয়েও তার ছিলো মুখ্য ভূমিকা। বাংলার রাজনৈতিক এসময় একদিকে ছিলেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির নেতা ও তাদের অনুসারী অন্যদিকে ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন ও মাওলানা আক্রাম খানের মতো চরম সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল নেতা। এর বাইরে অকেটা স্বতন্ত্র অবস্থান ছিলো মাওলানা ভাসানীর। এ.কে.ফজলুল হক বাংলার রাজনীতিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়া সত্তে¡ও দোদুল্যমান অবস্থার কারণে লাহোর প্রস্তাবের উপস্থাপক ভারত বিভক্তির সময় ছিলেন অনেকটা নীরব দর্শক। এসব গ্রুপ ও ব্যক্তি সম্পর্কে নম্নিে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
(ক) খাজা নাজিমুদ্দিন ও মাওলানা আক্রাম খান গ্রুপ -

১৯০৬ সালে ঢাকার নবাব সলিমুলাহর নেতৃত্ব মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য তার পরিবার মুসলিম লীগের নেতৃত্বে বরাবরই গুরুত্ব পেয়েছে। ঢাকার আহসান মঞ্জিলকে ঘিরে দীর্ঘদিন এদেশের রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে। এ পরিবারের সন্তান খাজা নাজিমুদ্দিন মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। মুলত মুসলিম লীগের প্রতিμিয়াশীল অংশ তার নেতৃত্বেই একট্টা হয়, এক্ষেত্রে তার যোগ্য সহযোগী ছিলেন মাওলানা আμাম খান। মুসলিম লীগে এ দু’নেতা চরম সা¤প্রদায়িক ও সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম গ্র“পের বিরোধী ছিলেন। এ.কে. ফজলুল হকের সঙ্গেও এ দু’নেতার তেমন বণিবানা ছিলো না। ১৯৪৩ থেকে সাল পর্যন্ত খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে অবিভক্ত বাংলায় মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভা ক্ষমতায় ছিলো। ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের পর সোহরাওয়ার্দী অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগ দলীয় সংসদ সদস্য কর্তৃক সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন। তাকে সহযোগিতা ও সমর্থন করেন তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলিম লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম ও মুসলিম লীগের মধ্যবিত্ত অংশ। তবে বাংলার মুসলিম লীগের রাজনীতিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও ইস্পাহানী পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন ও মাওলানা আক্রাম খান গ্রুপ। বাংলায় সোহরাওয়ার্দীর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতার নিকট নাজিমুদ্দিন গ্র“প পরাজিত হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ও অখন্ড বাংলা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সোহরাওয়ার্দী আবুল হাশিম উদ্যোগ গ্রহণ করলে খাজা নাজিমুদ্দিন মাওলানা আক্রাম খান গ্রুপ তার বিরোধীতা করে।

১৯৪৬ সালে দিলী সম্মেলনে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে একটি মাত্র রাষ্ট্র অর্থাৎ শুধুমাত্র পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। এই কারণে মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সংঙ্গে বাংলার নেতৃত্বেরও দ্বন্ব দেখা দেয়। এই প্রসঙ্গে আবুল হাসিম মন্তব্য করেন,

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের সংশোধন করার এখতিয়ার দিলী কনভেনশনের প্রতিনিধিদের নেই। তার মতে, লাহোর প্রস্তাব সংশোধন কেবল বাংলার নেতৃত্বে হাতে ন্যস্ত। ১৯৪৬ এর প্রাদেশিক নির্বাচনের পর পাকিস্তান আন্দোলন দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করে। বাংলার আপমর মুসলমান জনগণ এ আন্দোলনে অংশ নেয়। এই সময়ে মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও বাংলার নেতৃত্বের মধ্যে দ্ব›দ্ব দেখা দেয়। মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন জানান।
(খ) সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম গ্রুপ -
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম ছিলেন মূলতঃ মুসলিম লীগের প্রগতিশীল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নেতা। তাঁদের উদ্যোগেই অবিভক্ত বাংলার প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের দুর্গ বলে পরিচিত আহসান মঞ্জিল থেকে নেতৃত্ব চলে আসে উদীয়মান মুসলিম লীগ নেতাদের হাতে। খাজা নাজিমুদ্দিন অপেক্ষা সোহরাওয়াদী ছিলেন অনেক বেশি দূরদর্শী। অপরদিকে মওলানা আক্রাম খানের মত আবুল হাশিমর ছিলেন ধর্মপ্রাণ। কিন্তু মওলানা আক্রাম খানের মত আবুল হাশিম গোঁড়া ছিলেন না। তরুণদের দলে সংগঠিত করেছিলেন আবুল হাশিম। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত করেছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। খাজা পরিবারের চক্রান্তেই আবুল হাশিম ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের পর বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হতে পারেননি। পরবর্তীতে রাজনীতি থেকে অনেকটা স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যায় বাংলার প্রগতিশীল এ নেতা।
(গ) ফজলুল হকের অবস্থান -
বাংলার কৃতি সন্তান শেরে বাংলা এ,কে,ফজলুল হক মুসলিম লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও নেতা ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করেন ১৯৯২ সালে। জিন্নাহ কে তিনিই মুসলিম লীগে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। অথচ ১৯৪১ সালে জিন্নাহ তাকে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কার করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি জিনড়বাহর আদেশ অমান্য করে ব্রিটিশ সরকারেরর ন্যাশনাল ডিফেন্স কাউন্সিলে যোগদান করেছেন। পরবর্তীতে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ফজলুল হককে মুসলিম লীগে পুনরায় ফিরে আসার আহবান জানান। কিন্ত জিন্নাহ তাতে অসম্মাতি জ্ঞাপন করেন। ফজলুল হক তাকে বিচলিত হননি। তিনি তার কৃষক প্রজা পার্টিকে সম্বল করে পাকিস্তানর পক্ষে আন্দোলন মাওলানা ভাষানীর অবস্থান। মাওলানা ভাষানী অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। অনেকটা কূলহীন ভাসানী প্রকৃতির কোলেই মানুষ হয়েছেন। রাজনীতিতে তার আগমন হঠাৎ করে; স্থানীয় জমিদার জোতদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে। চলিশের দশকে আসামের রাজনীতিতে অতিদ্রুত অসামান্য জনপ্রিয় পান ভাসানী।
পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত তিনি আসামে ছিলেন। সেখানে মুসলিম লীগের সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পরে আসামে তিনি পূর্ব বাংলায় আসেন। কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ নেতৃত্ব কখনও তাকে সুনজরে নজরে দেখেননি। মাওলানা ভাসানী নিজস্ব অবস্থান থেকে বাংলার নিপীড়িত জনসাধারণের ভাগ্যের উন্নয়নরে জন্য তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। (চলবে) ৷
ফারহানা আকতার

তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷

লেখক: ফারহানা আকতার, ডিরেক্টর এন্ড এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক এবং সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ৷

লেখকের অন্যান্য বই

বাংলাদেশ সময়: ১৩:১২:৩১   ৯৭৬ বার পঠিত