শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১

কুসুম-১: স্বপন কুমার চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » কুসুম-১: স্বপন কুমার চক্রবর্তী
শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১



 

স্বপন চক্রবর্তী

 

 

( একটি ছোট গল্প লেখার সামান্য প্রচেষ্টা)

এখন ঢাকায় থাকি। একেবারে খুপড়ি ঘর না হলেও ছোট্ট একটি বাসা। বেতন যা পাই তা দিয়ে মাসিক খরচ নির্বাহ করাই কষ্টকর হয়ে যায়। বাধ্য হয়েই দুজনেই চাকুরী করছি। আমার স্ত্রীর আয় হতে অন্তত বাসা ভাড়াটা সংকুলান হয়। তাতেই বা কম কিসের।

 

স্ত্রী কতদিন যে অনুযোগ করেছে একটি কাজের মেয়ে রেখে দিবার জন্য । দিচ্ছি দিব বলে কাল ক্ষেপণ করেছি। অবশেষে বিরক্ত হয়ে এখন আর কোন তাগিদ দেয় না। তখনই ছোট্ট একটি কাজের মেয়ে সংগ্রহ করা গেল। সেই মেয়ে কাজকর্ম করবে কি, তাকেই বরং আমাদের দেখাশোনা করতে হয়। আমার মেয়ে শৈলী তখন ছোট। তার তখনো স্কুলে যাবার বয়স হয়নি। অর্থাৎ স্কুলে দেইনি। সে প্রতিদিনেই আমার কাছে বায়না ধরে-হয় স্কুলে নিয়ে দিয়ে আসবে, নয়তো তোমার সাথে তোমার অফিসে নিয়ে যাবে। বুঝতে পারি , একজন নিষ্ঠুরের মতো বাহির দিয়ে তালাবদ্ধ ঘরে সারাদিন ছোট্ট দুটি শিশুকে আটকে রাখা কতটা বিপদজনক, অমানবিক, কতটা মানসিক নির্যাতন। অবুজ শিশু মন তো বাহির মুখো হতেই চাবে। স্কুলে যাবার আগ্রহ নেহায়েৎপড়াশোনার তাগিদে না হলেও একাকিত্ব ও বন্ধী জীবনের পরিসমাপ্তির চিন্তা থেকেই হয়তো হবে।  কি করবো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।

এমনি ভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন কাজের মেয়েটির বাবা এসে মেয়েটিকে নিয়ে গেলো। মেয়ের মায়ের নাকি আব্দার , এক নজর মেয়েকে দেখবে। পরে মেয়েকে আবার যথারীতি পৌঁছে দিয়ে যাবে। মেয়ের বাবা মেয়েকে নিয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু পরে আর নিয়ে আসলো না। বাধ্য হয়েই আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে হলো। এখন আমার কাজ হলো প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসা । পরে এক ফাঁকে তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসা। অথবা অফিসে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা। যেদিন আমার আগে ছুটি হয় সেদিন আমি মেয়েকে নিয়ে যাই। আর নয়তো মেয়ের মার উপর সে দায়িত্ব টুকু বর্তায়।

শৈলীকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিস যেতে হয়। কিন্তু কোন দিনই সঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে সমর্থ হইনি। কারন হলো ঢাকার প্রচন্ড যানজট। অফিসে এখন আর কোন অজুহাত শোনতে চায় না। তবুও উপযাচক হয়ে ব্যাখ্যা দিতে চাই। সামান্য শুনেই অসমাপ্ত বাকী কথাগুলো আমার বস অগ্রিম বলে দিতে থাকে। বলে, তারপর স্কুলে মেয়েকে দিয়ে এসে আবার কঠিন যানজটে পড়ে গেলেন, আপ্রাণ চেষ্ঠা করলেন, শেষে হেঁটেই রওয়ানা দিলেন , কিন্তু..

ঢাকার যানজট,এটাকে বলে বুঝানো যাবে না। রাজপথের লাল সিগন্যাল বাতি জ্বলে ,আবার হলুদ হয়, হয় সবুজ। তবুও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে রিক্সা। ট্রাফিক পুলিশ রাস্তা আটকে রেখেছে। কিছু যানবাহনকে ছেড়েছে, আবার বন্ধ করেছে। সিগন্যাল বাতি অন্ধের মতো তার ডিউটি করেই যাচ্ছে। কার জন্য তার এই দায়িত্ব বোধ তা সেও জানেনা।

যানবাহন থেমে থাকা অবস্থায় শুরু হয়ে যায় ভিক্ষুকদের আব্দার,,- একটা টেকা দেন স্যার। চলে উচ্চ শব্দের গাড়ীর হর্ণ, গাড়ীর কালো ধুয়া,প্রচন্ড গরম, হকারদের উৎপাত- এর মধ্যেই চলে   ঢাকাবাসীর জীবন-জীবীকা । রিক্সারও আবার সকল রাস্থায় প্রবেশাধিকার নেই। তবুও ঢাকায় থাকি আমরা-  কেহ বাধ্য হয়ে, আবার কেহ শখ করে।

এক সিগন্যালে এসে থেমে গেল রিক্সা। দীর্ঘক্ষণ ঠাঁয় থেমে আছি। প্রচন্ড গরম। শৈলীকে সাথে নিয়ে দ্রুত অফিসে ফেরার ইচ্ছা। কিন্তু কোন উপায় নেই। কোন সমাধান নেই। শুধু বাড়ছে টেনশন। একেবারেই অসহায়ের মতো বসে আছি। বিরক্তিতে বিষিয়ে গেছে মন। অপরদিকে আমার মেয়ের মনে অনেক আনন্দ। যেন খোলা আকাশটা এখন তার দখলে। তার ক্রমাগত অনেক প্রশ্নে বিরক্তির মাত্রা আরো বেড়ে যেতে লাগলো।

বাবা, এটা কি? -কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

ওটা কি? -তিন নেতার মাজার।

মাজার কি? -কবরস্থান। সমাধিস্থান।

ওটা কি? -দোয়েল পাখি, দোয়েল চত্বর।

ওহ্, আমাদের জাতীয় পাখি ?

ওইযে,লাল বিল্ডিং ওটা কি ? -ওটা কার্জন হল।

কার্জন হল ? হ্যাঁ মামণি, এবার একটু চুপ কর, ভালো লাগছে না।

( চলবে)

বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৬:২৮   ৫৪০ বার পঠিত   #  #  #  #