সোমবার, ১৪ জুন ২০২১

ফারহানা আকতার এর কলাম –“ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ –পর্ব- ৩৮”

Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম –“ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ –পর্ব- ৩৮”
সোমবার, ১৪ জুন ২০২১



নতুন প্রজন্মের চোখে মুক্তিযুদ্ধ

২. ১৯৪৭-ভারত ভাগ (উপমহাদেশের বিভাজন ) :

ছ. বেঙ্গল প্যাক্ট, সাইমন কমিশন ও নেহেরু রিপোর্ট :
* বেঙ্গল প্যাক্ট :
অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলমান সম্পর্কে মারাত্মক অবনতি ঘটে। বিভিনড়ব বক্তৃতা বিবৃতিতে হিন্দু মুসলমানরা পরস্পরকে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করেন। এ বিষয়টি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে বিচলিত করে তোলে। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দু মুসলমান স¤প্রদায়ের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। আর এ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তিনি বাংলাপ্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ অথচ পশ্চাৎপদ বাঙ্গালি মুসলমানকে কিছু যৌক্তিক সুযোগ সুবিধা দানের পক্ষপাতি ছিলেন। তিনি ফরোয়ার্ড পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে বাংলায় মুসলমানদের তাদের ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। তিনি বাংলার মুসলমান নেতা ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। একই সঙ্গে তিনি মৌলভী আব্দুল করিম, মওলানা আকরাম খান, মৌলভী মজিবর রহমান প্রমুখ নেতাদের সঙ্গেও রাজনৈতিক সমস্যা ও দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন। কংগ্রেস থেকে বের হয়ে এসে ১৯১২ সালে গঠন করেন ‘স্বরাজ পার্টি’। অচিরেই চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে স্বরাজ পার্টি বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেসে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। স্বরাজ দলের সভাপতি হিসেবে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস মুসলমান নেতাদের সঙ্গে ১৯২৩ সালে একটি চুক্তি করেন। এ চুক্তির লক্ষ্য ছিলো বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের আর্থ সামাজিক উনড়বয়ন এবং হিন্দু মুসলমান স¤প্রীতি জোরদারকরণ। ইতিহাসে এই চুক্তিই ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামে পরিচিত।
বেঙ্গল প্যাক্টের উলেখযোগ্য বিধানগুলো বর্ণনা করা হলো-
বেঙ্গল প্যাক্টের প্রধান বৈশিষ্ট -
১. জনসংখ্যার ভিত্তিতে ও স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যব¯’ায় বাংলার আইন সভায় প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হবে।
২. ¯’ানীয় পরিষদসমূহে প্রতিনিধি নির্বাচনে সংশিষ্ট এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ স¤প্রদায় পাবে শতকরা ৬০টি আসন এবং সংখ্যালঘু স¤প্রদায় পাবে শতকরা ৪০ ভাগ আসন।
৩. সরকারী চাকুরির ক্ষেত্রে শতকরা ৫৫ ভাগ পদ পাবে মুসলমানগণ। যতদিন এ সংখ্যায় উনড়বীত না হওয়া যায়, ততদিন সরকারী চাকুরির শতকরা ৮০ ভাগ পাবে মুসলমানগণ এবং বাকী শতকরা ২০ ভাগ পাবে হিন্দুগণ।
৪. এমন কোন ধর্মীয় ব্যাপারে বিল আকারে আইন সভায় উপ¯’াপন করা যাবে না, যদি না এর প্রতি সংশিষ্ট ধর্মীয় স¤প্রদায়ের আইন সভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শতকরা ৭৫ ভাগ সম্মতি থাকে।
৫. মসজিদের সামনে বাদ্যযন্ত্র সহকারে শোভাযাত্রা করা যাবে না এবং ধর্মীয় প্রয়োজনে মুসলমানদের গর“ কোরবানীতে বাধা দেয়া যাবে না। ইত্যাদি।
ফলে স্বভাবতই মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ খুশী হয়। তাঁরা সর্বান্তকরণে চুক্তিটিকে স্বাগত জানায়। মুসলমান গণমাধ্যমগুলো তাদের ন্যায্য দাবীসমূহ পূরণ করার মত উদারতা প্রদর্শন করায় সি.আর.দাস ও তাঁর সহযোগী নেতাদের ধন্যবাদ জানায়। কিš‘ এ সাহসী পদক্ষেপ সি.আর.দাসের নিজ স¤প্রদায়ের অধিকাংশের নিকটই গ্রহণযোগ্য হয়নি। শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত ও জমিদার শ্রেণী এ চুক্তির মধ্যে তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব প্রতিপত্তি খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা দেখে। ফলে তারা এ চুক্তির বিরোধিতা করে। তাদের নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রগুলো বেঙ্গল প্যাক্টের বিরূপ সমালোচনা করেন। সি.আর.দাসকে সুবিধাবাদী ও মুসলিম স্বার্থ রক্ষাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। ১৯২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেসের কোকানন্দ অধিবেশনে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করা হয়। কংগ্রেস সা¤প্রদায়িকতার প্রশেড়ব কোন পৃথক প্রাদেশিক চুক্তি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে মুসলমানগণ অত্যন্ত হতাশ বোধ করেন। তাঁরা কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে অদূরদর্শী ও অতি স্বার্থপর বলে আখ্যায়িত করেন।
ক্স সাইমন কমিশন :
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে ১০ বছর পর ভারতের শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য একটি বিধিবদ্ধ কমিশন গঠনের কথা ছিল। উপরš‘ ভারত শাসন আইনে ভারতীয় জনগণের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূরণ হয়নি। ফলে এই আইন ভারতীয়দের রাজনৈতিক আশা আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়। ভারতবাসী এই আইনের বিরোধিতা করে স্বায়ত্তশাসনকে স্বীকৃতি দেয়া নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানায়। ভারতীয়দের দাবি দাওয়ার প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার ১৯২৭ সালের নভেম্বর মাসে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করে। ব্রিটিশ উদারনৈতিক (খরনবৎধষ ঢ়ধৎঃু) দলের সদস্য স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে এ কমিশন গঠিত হয়। তার নামানুসারেই এর নামকরণ করা হয় সাইমন কমিশন। ১৯১৯ সালের আইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে অনুসন্ধান এবং ব্রিটিশ ভারতে আরো শাসনতান্ত্রিক সুবিধা দেয়া না দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করার ভার কমিশনের উপর অর্পিত হয়।
সাইমন কমিশনে ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতীয় প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ এর বির“দ্ধে তীব্র প্রতিμিয়া ব্যক্ত করেন। একে পুরোপুরি ‘শ্বেতাঙ্গদের কমিশন’ বলে আখ্যা দেয়া হয়। ভারতীয় কংগ্রেস, জিনড়বাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগের একাংশ এবং ন্যাশনাল লিবারেল ফেডারেশন দল এ কমিশন প্রত্যাখান করে একে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯২৮ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে কমিশন ভারতের এলে কালো পতাকা প্রদর্শন এবং ‘সাইমন ফিরে যাও’ শোগান দিয়ে কমিশনের বির“দ্দে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
ভারতীয়দের বিরোধিতা এবং প্রচন্ড অ¯ি’র ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরি¯ি’তির মধ্যেই সাইমন কমিশন কাজ শেষ করে এবং ১৯৩০ সালে দুই খণ্ডে রিপোর্ট প্রকাশ করে। এ রিপোর্ট ছিল ভারতের রাজনৈতিক সমস্যার এক আকর্ষণীয় এবং ব্যাপক পর্যালোচনার দলিল। নিমেড়ব সাইমন কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলো আলোচনা করা হলো-
১. ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন : সাইমন কমিশন সাংবিধানিক বিকাশের লক্ষ্যে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাষন ্র গঠনের সুপারিশ করে। ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশসমূহ এবং দেশীয় রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে এ ফেডারেশন গঠিত হবে বলে মত প্রকাশ করা হয়।
২. দ্বৈত শাসনের অবসান : কমিশন ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোতে দ্বৈত শাসন ব্যব¯’ার অবসান ঘটানোর সুপারিশ করে। সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত বিষয়াদির তালিকা বাদ দিয়ে প্রতিটি প্রদেশে একক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কমিশন সুপারিশ রাখেন।
৩. প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন : সাইমন কমিশন প্রদেশসমূহে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের সুপারিশ করেন। প্রতিটি প্রদেশে পূর্ণ দায়িত্বশীল সরকার গঠিত হবে বলে কমিশন মত প্রকাশ করেন। এ স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশগুলোই পরবর্তীকালে প্রস্তাবিত ফেডারেল কাঠামোর ভিত্তি বলে পরিগণতি হয়।
৪. প্রাদেশিক আইন পরিষদের আয়তন বৃদ্ধি : কমিশন প্রাদেশিক আইন পরিষদের আয়তন বৃদ্ধি করে। অপেক্ষাকৃত গুর“ত্বপূর্ণ প্রদেশের আইনসভার সদস্য সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০ উনড়বীত করার জন্য কমিশন সুপারিশ করে।
৫. বার্মাকে ভারত থেকে পৃথক করা : কমিশন মনে করেন যে, সিন্ধু ও উড়িষ্যা স্বতন্ত্র প্রদেশ হবে কিনা সে প্রশড়বটি বিশেষজ্ঞেদের দ্বারা পুনরায় যাচাই করা দরকার। তবে কমিশন বার্মার প্রশাসন ব্যব¯’াকে ভারতের প্রশাসন ব্যব¯’া থেকে পৃথক করার জন্য সুপারিশ করেন।
৬. যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি : কমিশন মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ও পৃথক নির্বাচন ব্যব¯’া বাতিল করে যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করে।
৭. ভারতীয় পরিষদ গঠন : সাইমন কমিশন ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যসমূহের প্রতিনিধিবর্গের সমন্বয়ে একটি সর্বভারতীয় পরিষদ (কাউন্সিল) গঠনের সুপারিশ করে।
ক্স নেহেরু রিপোর্ট :
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে নেহেরু রিপোর্ট এক গুর“ত্বপূর্ণ দলিল। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে ভারতে হিন্দু মুসলমান সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বিভিনড়ব প্রদেশ থেকে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হাঙ্গামার খবর আসতে থাকে। এই পটভূমিতে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বজায় রাখার জন্য এবং ভারতে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ কয়েক দফা চেষ্টা চালায়। ১৯২৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মাদ্রাজে কাংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে হিন্দু মুসলমান সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে এক দীর্ঘ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। অপর এক প্রস্তাবে সকল দলের সহযোগিতায় একটি ‘স্বরাজ সংবিধান’ রচনার আহŸান জানানো হয়্ ১৯২৮ সালের মে মাসে বোম্বাইতে সর্বদলীয় সম্মেলন হয়। উক্ত সম্মেলনে সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কমিটিতে হিন্দু মুসলমান উভয় স¤প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ছিলেন। কমিটি প্রধান করা হয় পন্ডিত মতিলাল নেহের“। এই কমিটি ১৯২৮ সালে যে রিপোর্ট পেশ করে তাই ‘নেহের“ রিপোর্ট’ নামে পরিচিত। নেহেরু রিপোর্টে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে কতগুলো দাবি চূড়ান্ত করা হয়।

নেহেরু রিপোর্টের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ :
নেহেরু রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে এর বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিমেড়ব সেসব বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
১. ভবিষ্যত সংবিধান : নেহেরু রিপোর্ট ভারতের সংবিধানের মূলনীতি ¯ি’র করে। এক্ষেত্রে নেহেরু কমিটির সম্মুখে দু’টো বিকল্প ছিল - একটি ছিল স্বাধীনতা বা পূর্ণ স্বরাজ এবং অপরটি ছিল ডোমিনিয়ন মর্যাদা ৷ কমিটি অবশ্য ডোমিনিয়ন মর্যাদার পক্ষে রায় দেয়। কিš‘ কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ কায়েমের জন্য প্রতিশ্র“তিবদ্ধ ছিল।
২. যুক্ত নির্বাচন : নেহেরু রিপোর্ট নির্বাচন প্রশড়ব নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করে। কমিটির সম্মুখে যে প্রশড়বটি দেখা দেয় তা হলো নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কিত। নির্বাচন ব্যব¯’া পৃথক নির্বাচন ব্যব¯’া হবে, না যুক্ত নির্বাচন ব্যব¯’া হবে এ প্রশড়বটি নিয়ে কমিটি বিস্তারিত আলোচনা করেন। কমিটি মনে করেন যে, জাতীয় চেতনা বিকাশের জন্য পৃথক নির্বাচন ক্ষতিকর। সুতরাং কমিটি যুক্ত নির্বাচনের পক্ষে রায় দেন।
৩. সংরক্ষিত আসন : নেহেরু কমিটি বিভিনড়ব স¤প্রদায়ের জন্য আসন সংরক্ষনের ব্যাপারে বিভিনড়ব সুপারিশ বিবেচনা করেন। এসব সুপারিশগুলো বিবেচনার পর কমিটি অভিমত প্রকাশ করে যে, স¤প্রদায়ভিত্তিক আসন সংরক্ষণের ধারণাটি সা¤প্রদায়িকতার প্রতি স্বীকৃতি প্রদানেরই নামান্তর। তাই আসন সংরক্ষণের বিধান বাতিল করা হয়। তবে কমিটি মুসলমানরা যেসব প্রদেশে সংখ্যালঘু কেবলমাত্র সেসব প্রদেশেই তাদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখে। অনুরূপভাবে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে হিন্দুদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখা হয়।
৪. ল²ৌ চুক্তি বাতিল : ল²ৌ চুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বের যে সুযোগ দেয়া হয় নেহের“ রিপোর্টে তা নাকচ করে। কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলমানদের এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের দাবী স্বীকৃত হয়েছিল ১৯১ সালের ল²ৌ চুক্তির মাধ্যমে। নেহের“ কমিটি অভিমত প্রকাশ করে যে, ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বিধায় কেন্দ্রীয় আইনসভায় তাদের এক চতুর্থাংশের অধিক আসন প্রদান করা উচিত হবে না।
৫. সিন্ধুকে বোম্বাই থেকে পৃথক : নেহের“ রিপোর্ট সিন্ধুকে বোম্বাই থেকে পৃথক রার মুসলমানদের দাবীটি সবিস্তারে আলোচনা করে এবং এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, আর্থিক সঙ্গতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তদন্ত অনুষ্ঠানের পর সিন্ধুকে বোম্বাই থেকে পৃথক করা উচিত। অর্থাৎ শর্ত সাপেক্ষে সিন্ধুর পৃথকীকরণকে অনুমতি দেয়।

নেহেরু রিপোর্টের প্রতি মুসলমানদের প্রতিক্রয়িা-

নেহেরু রিপোর্টের বির“দ্ধে মুসলমানদের প্রতিμিয়া ছিল অনিবার্য। মুসলমানরা একে তাদের স্বার্থের পরিপš’ী বলে মনে করে। মুসলমানগণ স্বাভাবিকভাবেই মনে করে যে, কোনরূপ পূর্বশর্ত ছাড়াই সিন্ধু প্রদেশের ব্যাপারে মুসলিম লীগের দিল্লী প্রস্তাব গৃহীত হওয়া উচিত। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের ব্যাপারে সংস্কারও ছিল মুসলিম লীগের অন্যতম দাবী।
নেহেরু রিপোর্ট প্রস্তাবিত সংবিধানে মৌলিক অধিকার সনিড়ববেশিত করার সুপারিশ করে। তবে তাতে মুসলমানদের জন্য রক্ষাকবচ না থাকায় মুসলমানরা এ বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়।
মুসলিম নেতৃবৃন্দ দলমত নির্বিশেষে এ রিপোর্টের বির“দ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ আলী জিনড়বাহ নেহের“ রিপোর্ট সংশোধনের জন্য কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিš‘ হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের কট্টরপš’ীদের চাপে কংগ্রেস জিনড়বাহর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। এর প্রতিμিয়া হিসাবে মুসলিম লীগ ঘোষণা করে তারা নেহের“ রিপোর্টকে প্রত্যাখান করতে বাধ্য হ”েছ। পরবর্তীতে নেহের“ রিপোর্টের প্রতিμিয়া হিসাবে জিনড়বাহ তার বিখ্যাত চৌদ্দ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেন। (চলবে) ৷
ফারহানা আকতার

তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
লেখক: ফারহানা আকতার, ডিরেক্টর এন্ড এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক এবং সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ৷

লেখকের অন্যান্য বই

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৮:৫১   ১০০৬ বার পঠিত