বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১

সম্প্রসারণমূলক রাজস্বনীতি ও স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরী -জিপেক

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » সম্প্রসারণমূলক রাজস্বনীতি ও স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরী -জিপেক
বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১



জিপেক ভার্চুয়াল আলোচনা
বঙ্গনিউজঃ   বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গভর্নেন্স পলিসি এক্সপ্লোর সেন্টার (জিপেক) গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক প্রাক বাজেট ২০২১-২২ ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করে। আলোচনায় কোভিড-১৯ এর কারণে রাজস্ব ও অন্যান্য আয় কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ঘাটতি অর্থসংস্থানের তাগিদ, কর না বাড়িয়ে সরকারকে অভ্যন্তরীণ খাত হতে ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়া, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং দ্রুত টিকা কার্যক্রমকে গতিশীল করাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। ‘জিপেক প্রাক-বাজেট সংলাপ ২০২১-২২’ শীর্ষক ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিপেক এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো (অনারারি) ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোরশেদ হোসেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান জিপেক এর নির্বাহী পরিচালক ড. মিজানুর রহমান। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন বেসিক ব্যাংকের পরিচালক ও জিপেক চেয়ারপার্সন রাজীব পারভেজ।
উপস্থাপিত প্রবন্ধে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে শুরতেই বলা হয়েছে, এবারের বাজেটে কোভিড- ১৯ মোকাবেলা প্রধান লক্ষ্য হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার (জুলাই ২০২০- জুন ২০২৫) ও এলডিসি স্ট্যাটাস হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সাথে বর্তমানে গৃহিত উন্নয়ন কার্যক্রম সচল রাখা এ অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এজন্য সরকারকে অনেক অর্থব্যয় করতে হবে। তাই ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারকে সম্প্রসারণমূলক রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে। কোভিড-১৯ এর কারণে রাজস্ব ও অন্যান্য আয় কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ঘাটতি অর্থসংস্থান করতে হবে। এজন্য কর না বাড়িয়ে সরকারকে অভ্যন্তরীণ খাত হতে ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করতে হবে। এছাড়া ঘাটতি অর্থ সংস্থানের জন্য বৈদেশিক সাহায্য বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা উচিত। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতি, নতুন শিল্পনীতি ও বাণিজ্যনীতি করা যেতে পারে। বেসরকারি বিনিয়োগ যাতে বৃদ্ধি পায় এজন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বান্ধব নীতি গ্রহণ করা উচিত। পূর্বের বছরগুলোতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাসমূহ উচ্চাভিলাসী হলেও বর্তমানে বাস্তবতার নিরিখে আসন্ন ২০২১- ২২ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের ঘরে হওয়া প্রয়োজন। কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে স্বাস্থ্যখাতে কঠিন আঘাত হেনেছে, বেড়েছে দেশে নতুন দারিদ্র্য, কৃষি ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শিক্ষাখাত হয়েছে বিপর্যস্ত, কর্মহীন হয়েছে লাখ লাখ মানুষ - এর ফলে দেশে মোট ক্ষতির পরিমান কত তার কোন পরিসংখ্যান নেই। তাই এ সকল ক্ষতিগ্রস্ত খাতকে পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য স্বাস্থ্যখাত, দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত, কৃষি খাত, শিল্পখাত, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খাতকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাজেটে অধিক বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবেলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা এ অর্থবছরেও চালু রাখতে হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আয়ের জনগোষ্ঠীর ৮ লক্ষ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে আয়করের হার ২৫% হতে বৃদ্ধি করে ৩০%, তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে তামাকের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে তামাকজাত পণ্যের উপর বিদ্যান করহার বাড়ানো যেতে পারে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা, গ্রাম পর্যায়ে অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি রয়েছেন তাদেরও আয়করের আওতায় আনতে হবে। ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে নতুন অর্থবছর থেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন চালু করা প্রয়োজন, ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল উপজেলায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে উপজেলা/থানা রাজস্ব অফিস প্রতিষ্ঠা জরুরী। এছাড়া সম্পদ ও সম্পত্তি কর প্রবর্তন করতে হবে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পেনশন ভোগী নাগরিক যাদের

আয়ের একমাত্র উৎস পেনশন বা জমা সঞ্চয় থেকে প্রাপ্ত সুদ তাদের আয়কর রির্টান জমা দেয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া, সক্ষমতা আরও বাড়াতে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কর্পোরেট কর এবছরে পূর্বের হার হতে ২.৫% কমানো, শেয়ার ডিভিডেন্ডের উপর আয়কর কমিয়ে ১০% করা, আমদানি পর্যায়ে শিল্পের কাঁচামালের উপর অগ্রীম আয়কর ও আগাম ভ্যাট ১ বছরের জন্য প্রত্যাহার করা, রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশের প্রয়োজনে উৎস কর কমিয়ে ০.২৫ করা, শিক্ষাখাতের শিক্ষার্থীদের মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম খরচে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের জন্য ইন্টারনেট সেবায় ১৫% সম্পুরক কর ও সারচার্জ ১% প্রত্যাহার করা এবং আগামী বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ বাতিল করার সুপারিশ করা হয় এ প্রবন্ধে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উপ-উপাচার্য ও জিপেক এর উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল কাইয়ুম, নগদ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেল আহমেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুর রশিদ সরকার, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক্ অধ্যাপক ডাঃ মোহা. শেখ শহীদউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ অধ্যাপক ড. জেবউননেছা, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার দেব, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার আরাফাত হোসেন খান, সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্সের সেক্রেটারী এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ফৌজিয়া হক এফসিএ, টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ এর সম্পাদক নাজনীন নাহার, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী হাসান রবিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ ও লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হালিমা হক।
ওয়েবিনারে আলোচকবৃন্দ স্বাস্থ্যখাতে মোট বাজেটের ৮ হতে ১২ শতাংশ বরাদ্দ, স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ, ইনক্লুসিভ হেলথ পলিসি চালু করা, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বরাদ্দ, আইসিটি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও দেশীয় তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তৈরিতে উৎসাহ প্রদান, জেন্ডার সংবেদনশীলতা, সরকারি ঋণ প্রণোদনার ক্ষেত্রে ই-কমার্সকে যুক্ত করা ও ঋনপ্রাপ্তি সহজীকরণ করা, ফ্রি ল্যান্সিং করে যারা বৈদেশিক মুদ্রা আনয়ন করছে তাদের প্রণোদনা দেয়া, শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪% বরাদ্দ দেয়া, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান প্রকল্প চালু, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিদেশী ফান্ড আনয়ন, ডিজিটাল ট্রানজেকশন উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনা প্রদান, কৃষি পণ্যের সাপ্লাই চেইন অবকাঠামো তৈরির জন্য বাজেট বরাদ্দ, বাজেট পেশের ৬ মাস পরে এর বাস্তবায়ন ও ফিডব্যাক দেয়া, শিক্ষার্থীদের বিনা সুদে ল্যাপটপ ঋণ প্রদান, বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন, সরকারি প্রণোদনা ঋণের মেয়াদ এক বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছরের জন্য করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৬:২৯   ৭৩৬ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #