সোমবার, ৩ মে ২০২১

ফারহানা আকতার এর কলাম –“ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ –পর্ব- ৩২”

Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম –“ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ –পর্ব- ৩২”
সোমবার, ৩ মে ২০২১



নতুন প্রজন্মের চোখে মুক্তিযুদ্ধ
২৬. ব্রিটিশ ভারত : ১৮৫৮ খ্রী:–১৯৪৭খ্রী (বাকী অংশ) :
ভারতবর্ষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতীয়-উপমহাদেশের যুদ্ধঃ
ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারত-বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল দ্ব›দ্ব-সংঘাতময়। ব্রিটিশ শাসকগণ ঔপনিবেশিক স্বার্থে ভারতে বিভিন্ন ধরনরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর জন্ম দেয়। প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে ব্রিটিশরা এ উপমহাদশেে আধুনিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জন্ম দেয় ৷
ক.ইংরেজদের বিরুদ্ধে পলাশীর যুদ্ধ :
বিখ্যাত পর্তুগিজ ঐতিহাসিক ‘বাকসার’ পলাশীর যুদ্ধকে গুরুত্বের দিক থেকে পৃথিবীর সেরা যুদ্ধগুলোর অন্যতম মনে করেন।
১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশেষ সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে নওয়াব এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে বিরোধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। সিরাজউদ্দৌলা প্রথম বারের মত বাংলায় কোম্পানির অবৈধ কার্যক্রমের তীব্র প্রতিবাদ জানান। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর তিনটি প্রধান অভিযোগ ছিল: ১.অনুমতি ব্যতীত ফোর্ট উইলিয়মে প্রাচীর নির্মাণ ও সংস্কার, ২.ব্যক্তিগত অবৈধ ব্যবসা এবং ৩.কোম্পানির কর্মচারীদের দ্বারা দস্তকের নির্লজ্জ অপব্যবহার ও নওয়াবের অবাধ্য প্রজাদের বেআইনিভাবে আশ্রয় প্রদান। উল্লিখিত অভিযোগসমূহের মীমাংসার জন্য পদক্ষেপ নিতে নওয়াব ব্রিটিশদের আহবান জানান এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিরসনের জন্য কলকাতায় অনেক প্রতিনিধিদল পাঠান। নওয়াব কোম্পানির নিকট কৃষ্ণদাসকে তাঁর হাতে সমর্পণের দাবি করেন এবং নতুন প্রাচীর ভেঙে ফেলতে ও কলকাতার চারদিকের পরিখা ভরাট করতে নির্দেশ দেন। নওয়াবের যে বিশেষ দূত এ সকল দাবি সম্বলিত চিঠি নিয়ে কলকাতায় যান ইংরেজরা তাকে অপমানিত করে। কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ‘রজার ড্রেক’ যে চরম অপমানজনকভাবে নওয়াবের প্রতিনিধি ‘নারায়ণ সিংহ’কে বিতাড়িত করে তা সবিস্তার শুনে নওয়াব অত্যন্ত রাগান্বিত হন। নওয়াব তৎক্ষণাৎ কাসিমবাজার কুঠি অবরোধের আদেশ দেন। কুঠির প্রধান আত্মসমর্পণ করে কিন্তু কলকাতার ইংরেজ গভর্নর অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমি প্রদর্শন করেন। ফলে নওয়াব কলকাতা অভিযান করে তা দখল করে নেন। এ পরাজয়ের পর বাংলায় কোম্পানির পুনঃপ্রতিষ্ঠা দুই উপায়ে করা সম্ভবপর ছিল, হয় নবাবের নিকট আত্মসমর্পণ নচেৎ পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বল প্রয়োগ। বাংলায় যে সকল ব্রিটিশ ছিল তারা অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর জন্য মাদ্রাজের ফোর্ট সেন্ট জর্জে জরুরি খবর পাঠায়। সেখান হতে রবার্ট ক্লাইভ ও এডমিরাল ওয়াটসনের অধীনে একদল ব্রিটিশ সৈন্য বাংলায় পাঠানো হয়। তারা ১৭৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতা পুনরুদ্ধার করে এবং নওয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের সঙ্গে আলীনগরের সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।
কিন্তু ইংরেজরা সন্ধির শর্তাদি অগ্রাহ্য করতে থাকায় যুদ্ধের চাপা উত্তেজনা চলতে থাকে। তারা নওয়াবের প্রতি বিরূপ পারিষদদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
১৭৫৭ সালের ১২ জুন কলকাতার ইংরেজ সৈন্যরা চন্দননগরের সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। সেখানে দুর্গ রক্ষার জন্য অল্প কিছু সৈন্য রেখে তারা ১৩ জন অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে যুদ্ধযাত্রা শুরু করে। কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের পথে হুগলী, কাটোয়ার দুর্গ, অগ্রদ্বীপ ও পলাশীতে নবাবের সৈন্য থাকা সত্ত্বেও তারা কেউ ইংরেজদের পথ রোধ করে নি। ফলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বুঝতে পারেন, তার প্রধান সেনাপতি মীর জাফরসহ অন্যান্য সেনাপতিরাও এই ষড়যন্ত্রে শামিল।
বিদ্রোহের আভাস পেয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর সেনাপতি মীর জাফরকে বন্দি করার চিন্তা পরিত্যাগ করেন। তিনি মীর জাফরকে ক্ষমা করে তাকে শপথ নিতে বলেন। মীর জাফর পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে অঙ্গীকার করেন যে, তিনি শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকতেও বাংলার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন হতে দেবেন না। গৃহবিবাদের মীমাংসা করে নবাব রায় দুর্লভ, ইয়ার লুৎফ খান, মীর জাফর, মীর মদন, মোহন লাল ও ফরাসি সেনাপতি সিনফ্রেঁকে সৈন্য চালানোর দায়িত্ব দিয়ে তাদের সঙ্গে যুদ্ধযাত্রা করেন।
২৩ জুন সকাল ৮টার দিকে যুদ্ধ শুরু হয়। ইংরেজদের বাহিনীর তুলনায় নবাবের বাহিনীর আকার অনেক বড় হলেও মীরজাফর, ইয়ার লতিফ এবং রায় দুর্লভের অধীনস্থ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সৈন্য নিষ্ক্রিয় দাঁড়িয়ে থাকে। মীর মর্দান, মোহনলাল, খাজা আব্দুল হাদী খান, নবে সিং হাজারীর নেতৃত্বাধীন সৈন্যরা এবং ফরাসী সৈনিকদের একটি দল যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ক্লাইভ যুদ্ধে ধারণার চেয়ে বেশি প্রতিরোধের সন্মুখীন হন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃষ্টিতে নবাব এবং ফরাসীদের কামানের গোলায় ব্যবহৃত গানপাউডার ভিজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু ইংরেজরা তাদের গান পাউডার সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়। জানা যায়, ক্লাইভ দিনে যুদ্ধ চালিয়ে রাতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের এক পর্যায়ে বেলা তিনটার দিকে কামানের গোলার আঘাতে মীরমদন নিহত হলে নবাব ভেঙে পড়েন এবং মীর জাফরের কাছে পরামর্শ চান। মীরজাফর নবাবকে যুদ্ধ বন্ধ করে পরবর্তী দিনে নতুন উদ্যমে যুদ্ধ করার পরামর্শ দেন এবং বাংলার পরবর্তী নবাব হবার লোভে নবাব সিরাজৌদ্দলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে গোপনে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলান ৷
এদিকে নবাব সিরাজৌদ্দলা যুদ্ধ বিরতির নির্দেশ দেন। নবাবের সৈন্যরা পিছু হটে আসে।এই সুযোগে মীরজাফরের গোপন বার্তা পেয়ে ইংরেজরা নবাবের অপ্রস্তুত বাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে। ফলে প্রায় ২০০ বছরের জন্য বাংলা স্বাধীনতা হারায়। প্রতি বছর সে জন্য ২৩ জুন পলাশী দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৭৫৭ সালের এইদিনে পলাশী প্রান্তরে রবার্ট ক্লাইভ, মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ চক্র এই কালো দিবসের জন্ম দেয়। ঘৃণিত কলঙ্কজনক এই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অধ্যায় সৃষ্টির পেছনে জড়িত ছিল বিশ্বাসঘাতক জগৎশেঠ, মাহতাব চাঁদ, উমিচাঁদ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, রায়দুর্লভ, মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, রাজা রাজবল্লভ, নন্দকুমার প্রমুখ কৌশলী চক্র। এই স্বার্থান্বেষী ষড়যন্ত্রীদের প্রথম শিকার ছিল স্বাধীন ভারতের শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা এবং তার বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদন ও প্রধান আমাত্য মোহনলাল কাশ্মিরী। ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা ও লর্ড ক্লাইভের মধ্যে এক যুদ্ধ নাটক মঞ্চায়িত হয়। এতে নবাব বাহিনীর পক্ষে সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ছিল মাত্র ৩ হাজার।

যুদ্ধের ময়দানে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ও তার অনুসারী প্রায় ৪৫ হাজার সৈন্য নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ফলে যুদ্ধে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির পরাজয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের সেবাদাসদের সাহায্যে এভাবেই বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এরপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দীর্ঘ ১৯০ বছর এদেশে শাসন শোষণ করে। কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করে তারা বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয় আর এককালের প্রাচ্যের স্বর্গ সোনার বাংলা তথা এই ভারতীয় উপমহাদেশ পরিণত হয় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশে। এ যুদ্ধের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল ধ্বংসাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের অধিকারে চলে আসে। ফলে এ অঞ্চলের দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি ,সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে।
খ.ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহী-বিদ্রোহ:
এরপর ভারতবর্ষে বিট্রিশ-শাসনামলের প্রায় ২০০ বছর এই ভারত ভুখন্ডের অধিবাসীরা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ করেছে ইংরেজ-শাসনামলের বিরুদ্ধে। আর তাই ১৮৫৭ সালে ভারতে প্রথম স্বাধীনতার আন্দোলন হয় । কিন্তু বর্বর ইংরেজদের ভাষায় ওটা ছিল “সিপাহী-বিদ্রোহ”। ইংরেজ সেনাবাহিনীর অন্তর্গত ভারতীয় সিপাহীরা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে মূল ভূমিকা পালন করে। ইংরেজ সরকার এই বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করলেও মূলতঃ তখন থেকেই এর মাধ্যমে ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়।
গ. চিরস্হায়ী বন্দোবস্ত ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষক-বিদ্রোহ :
বাংলার ভূমি ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব সংগ্রহ ও আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর মধ্যদিয়ে ব্রিটিশ ভারতে ইংরেজরা এমন এক সুবিধাবাদী শ্রেণীর সৃষ্টি করে যারা ভারতে ব্রিটিশদেরকে তাদের শাসনের শেষ দিন পর্যন্ত সমর্থন করে। মূলতঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শাসনের ভিত্তি রচিত হয়। এর প্রভাব কেবল কৃষক সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিলো না, উৎপাদন কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন বাংলার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার গতি প্রকৃতি আমূল বদলে দেয়।
পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পরপরই ইংরেজরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ইংরেজরা ভূমি ব্যবস্থাপনায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে। মূলতঃ ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাকে একটা নিশ্চিত ও দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ঘোষণা দেয়।
ইংরেজ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তাই এদেশ থেকে মুনাফা লুণ্ঠন এবং পুঁজি সংগ্রহ করা ছিল কোম্পানির মূল লক্ষ্য। ভারতের প্রধান আয়ের উৎস ছিল ভূমি এবং অর্থনীতি ছিল ভূমিকেন্দ্রিক। এমতাবস্থায় ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের প্রথম দিকে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এদেশের ভূমি রাজস্ব প্রশাসন সংগঠিত করা। এসময় এদেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রতিμিয়া দেখা দেয়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধান নীতি বা ধারাসমূহ :
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল কোম্পানি সরকার ও জমিদারদের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তি। এর মূল নীতিসমূহ -
১. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারকে জমির একমাত্র মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
২. জমিদারদের স্বাধীনভাবে জমি হস্তান্তর, দান বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টনের ক্ষমতা দেয়া হয়।
৩. রাজস্বের পরিমাণ চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়।
৪. কোন অজুহাতে রাজস্ব বাকী রাখা যাবে না। জমির রাজস্ব কিস্তি নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে পরিশোধ না করতে পারলে, জমি নিলাম করে রাজস্ব আদায় করা হবে। এই নিয়ম ‘সূর্যাস্ত আইন’ নামে পরিচিত।
৫. এই ব্যবস্থায় কৃষককে জমিদারের ইচ্ছাধীন প্রজায় পরিণত করা হয় এবং
৬. ভূমি নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ হিসাব রাখার জন্য রাজস্ব ভূমির একটি ‘পাঁচসালা’ রেজিস্টার রাখার বিধান করা হয়।
৭. এ ব্যবস্থায় জমির খাজনা চিরস্থায়ীভাবে এবং একবারই নির্ধারিত হবে।
৮. এ ব্যবস্থা অনুযায়ী বিচার, পুলিশী ও শুল্ক আদায় সংμান্ত যাবতীয় ক্ষমতা জমিদারদের হাত থেকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে বর্তাবে।
৯. বিশৃঙ্খলা দমনে জমিদাররা একটি লাঠিয়াল বাহিনী সৃষ্টি করতে পারবে।
১০. জমিদাররা ভূমি কর ছাড়াও প্রজাদের ওপর বিভিনড়ব ধরনের করারোপ করতে পারবে।
১১. জমিদারদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইংরেজরা সামরিক সাহায্য করতে পারবে।

মুঘল আমলে কৃষক ছিল জমির প্রকৃত মালিক। জমি চাষাবাদ ও ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষকরা স্বাধীনতা ভোগ করতো। মুঘল শাসন ছিল রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। মুঘলদের মূল চাহিদা ছিল আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা প্রাপ্তী। তাই কৃষকগণ নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস ধারনের মাধ্যমে কৃষি ও ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনা করতো। ব্রিটিশ শাসন আমলে ধীরে ধীরে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। এর কারন হিসেবে বলা যায়, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণে দ্রুত চিরায়ত গ্রামীণ কৃষি সমাজ ভেঙ্গে পড়ছিল। কেননা, কোম্পানি শাসনের প্রথম দিকে ভূমি ও রাজস্ব ক্ষেত্রে লুন্ঠন চলে। এই শোষণের মাত্রা আরো বেড়ে যায় যখন ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত জমিদার ও প্রজা সাধারণের মাঝখানে এক শ্রেণীর মধ্যস্তত্বভোগীর জন্ম দেয়। বস্তুতঃ জমিদারি ব্যবস্থা কৃষক-প্রজা সাধারণ মানুষের উপর মধ্যস্বত্ব ভোগী, ইজারাদার, ভূমি-রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সংশি−ষ্ট আমলারা এদের স্থায়ী শোষন-লুন্ঠন কায়েম করে। শুধু তাই নয় কৃষকদের জন্য অলাভজনক হওয়া সত্তে¡ও ইংরেজ নীলকররা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে তাদের ধান চাষ বা অন্য ফসল ফলানোর পরিবর্তে নীল চাষে বাধ্য করে। ফলে দেখা দেয় ব্যাপক কৃষক অসন্তোষ ও বিদ্রোহ। এরমধ্যে,
সদ্বীপের কৃষক বিদ্রোহ (১৭৬৯), রংপুর কৃষক বিদ্রোহ (১৭৭২-১৭৭৭), ফকির-সনড়ব্যাসী বিদ্রোহ (১৭৭০-১৭৯০), ত্রিপুরা জেলার শমসের গাজীর বিদ্রোহ (১৭৬৭-৬৮), চাকমা বিদ্রোহ (১৭৭০-১৭৮৭), যশোর-খুলনার প্রজা বিদ্রোহ (১৭৮৪-১৭৯৬), ময়মনসিংহের পাগলপন্থী বিদ্রোহ (১৮২৩-১৮৩৩), নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-৬০), পাবনা কৃষক বিদ্রোহ (১৮৭২-১৮৭৩), সুন্দর বনের তুষখালী (বরিশাল) কৃষক বিদ্রোহ (১৮৭২-১৮৭৫), মুন্সীগঞ্জ বিদ্রোহ (১৮৮০-১৮৮১) বিশেষভাবে উলে−খযোগ্য। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নানা কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়, যেমন- সিলেটের নানকার বিদ্রোহ (১৯২২-১৯৪৯), ময়মনসিংহ টংক আন্দোলন (১৯৩৭-১৯৪৯), উত্তর বঙ্গের বি¯তৃত অঞ্চল জুড়ে তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৬-১৯৪৭) ইত্যাদি। উপরে উলে−খিত কৃষক বিদ্রোহ ছিল ইংরজেদরে বরিুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ সংগ্রাম। এসব বিদ্রোহ বহুলাংশে ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। পরবর্তীতে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে প্রথম সারা বাংলা ব্যাপী কৃষক-প্রজা আন্দোলন সংগঠিত করা হয়। এসব কৃষক বিদ্রোহ আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যা শুধু কৃষক আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি পরবর্তীতে তা জাতীয় আন্দোলনের প্রেরণা ও উৎস হিসেবে খোরাক জুগিয়েছে।
ব্রিটিশ বিরোধী কৃষক বিদ্রোহ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে হাজী শরীয়তুলণ্ঢাহ, দুদু মিঞা ও তিতুমীরের অবদান -
১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর থেকে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান পর্যন্ত সমগ্র সময় জুড়ে বাংলা ও ভারতে নানা কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হলেও, এর সবগুলো বিদ্রোহ সরাসরি ব্রিটিশ শাসন বিরোধী ছিল না। যেসব কৃষক বিদ্রোহ সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে তার মধ্যে হাজী শরীয়তুলণ্ঢাহ ও দুদু মিঞার নেতৃত্বাধীন ফরায়েজী আন্দোলন এবং তিতুমীরের নেতৃত্বাধীন কৃষকদের প্রতিরোধ সংগ্রাম ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এই ভাষা পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের চেতনা হিসেবে কাজ করে।
ঘ.প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতর্বষ হতে ইংরজেদরে হঠাও নীতি ও বঙ্গভঙ্গ :
১৯০৩ সালে লর্ড কার্জন বাংলাকে বিভক্ত করে পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করার প্রস্তাব করেন। ঢাকাকে নতুন প্রদেশের রাজধানী করে ১৯০৫ সালে ‘বঙ্গ ভঙ্গ’ প্রস্তাব কার্যকর করা হয়। বঙ্গভঙ্গ ভারত বভিক্তরি ফলশ্রুততিে সম্পন্ন হয়। এর ফলে বঙ্গ প্রদশে দুই অংশে বভিক্ত হয়ে পরে যার র্পূবাঞ্চল পাকস্তিানে এবং পশ্চমিাঞ্চল ভারতরে সাথে যুক্ত হয়। র্পূববঙ্গরে নাম পরর্বিতন করে র্পূব পাকস্তিান রাখা হয় এবং যা পরর্বতীতে যুদ্ধরে মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদশে গঠন কর।বাংলা বিভক্তিকে তারা ‘মাতৃভ‚মির অঙ্গচ্ছেদ’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রগতিশীল বাঙ্গালী ও হিন্দু সম্প্রদায় এর বিরোধীতা করে বাংলার শহরে ও গ্রামে আন্দোলন করে। ‘বঙ্গ ভঙ্গ’ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ উপমহাদশেে এক নতুন রাজনৈতিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
বঙ্গভঙ্গ ও নবাব স্যার সলিমুলণ্ঢাহর রাজনৈতিক অবদান - নবাব স্যার সলিমুল−াহর অন্যতম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে মুসলিম জনগণকে নেতৃত্ব প্রদান। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বাংলাকে দ্বি-খন্ডিত করে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্ণরের শাসনাধীন নতুন প্রদেশ পূর্ব বাংলা ও আসাম সৃষ্টি করা হলে নবাব সলিমুল−াহ এর সমর্থন করেন।
নবাব স্যার সলিমুলাণ্ঢাহর অন্যতম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে মুসলিম জনগণকে নেতৃত্ব প্রদান। তার মতে, বাংলা প্রদেশে মুসলমান জনগণ সংখ্যাগরিষ্ট হওয়া সত্তে¡ও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে তারা ছিল প্রভাব প্রতিপত্তিহীন। তাই যখন তিনি দেখলেন, নতুন প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ঢাকা হচ্ছে এর রাজধানী তখনেই তিনি বঙ্গভঙ্গর সমর্থনে জনমত তৈরি করলেন। স্যার সলিমুল−াহর বিশেষ রাজনৈতিক ভ‚মিকা হচ্ছে সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করা। ১৯০৬ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ঢাকার শাহবাগে নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন সম্পর্কে আলোচনা হয় এবং ১৯০৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এটি ছিল ভারতের মুসলমানদের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন। এ সংগঠন প্রতিষ্ঠায় নবাব সলিমুল−াহ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন।
এবং পরবর্তীতে এই সংগঠন ইংরেজ-শাসনামলের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে ব্যাপক কাজ করে যা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরানি্বত করেছিল ৷ মূলতঃ ইংরেজদের এই ‘বঙ্গভঙ্গ-নীতি’ শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষে নয়, বিপক্ষেই কাজ করেছিল কেননা শেষ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের জাতি-ধর্ম-বর্ন-হিন্দু-মুসলমান তথা এ অঞ্চলের সকল জণগণ একত্রিত হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে এ অঞ্চল থেকে ইংরেজদের চিরতরে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছিলেন৷
এদিকে প্রথম-বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব-ফলাফল ও তখন এ উপমহাদেশে ছিল তীব্র ৷১৯০৫ সালে রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি ক্ষুদ্র এশীয় শক্তি জাপানের কাছে রুশ-জাপান যুদ্ধে পরাজিত হয়। একই সময়ে রাশিয়ায় স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। ধনতান্ত্রিক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ায় এশিয়া এবং আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলো দখল করে নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরই ফল ছিল ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে জার্মানি ইংল্যান্ড তথা মিত্রবাহিনীর হাতে পরাস্ত হয়। এ যুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীও অংশ নিয়েছিলো। ইংরেজ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যুদ্ধে অংশ নিলে পরাধীন দেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে। এই কথায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত ‘মহাত্মা গান্ধী’ সহ অনেকেই একথা বিশ্বাস করে যুদ্ধে যোগ দেন এবং যুদ্ধে ভারতবাসীকে উত্‍সাহিত করেন।
১৯১৯ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। কিন্তু ইংরেজ সরকারের নীতিতে কোন রকম পরিবর্তন দেখা যায়নি। যেসব সৈন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এসময় তাদেরকে বেকার করে নিজ নিজ গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফলে এ উপমহাদেশের সর্বত্র অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি’ তে এক কোটিরও বেশি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ভারতবাসীর মনে সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে। এই সন্দেহ থেকেই ক্ষোভ এবং ইংরেজ বিরোধী মনোভাবের সূচনা ঘটে। এসময় ইংরেজ সরকার একদিকে যেমন মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইন করে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করে একই সাথে আবার রাওলাট আইন করে ইংরেজ সরকার বিরোধী সকল বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমনের জন্য নির্যাতনমূলক আইন জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়। এই আইনের অধীনে বিনা কারণে গ্রেপ্তার, অন্তরীন ও সংক্ষিপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণহীন বিচার ও বন্দীত্বের মতো বেপরোয়া পদক্ষেপ গৃহীত হয়।ভারতবর্ষের স্বাধীনতা-সংগ্রামের অন্যতম প্রধান নেতা ‘মহাত্মা গান্ধী’ তখন অহিংস এবং সত্যাগ্রহ তথা রক্তপাতহীন আন্দোলনের (যা ছিল গান্ধীজীরর ‘অহিংসা নীতি’ নামে পরিচিত ) মাধ্যমে এর প্রতিবাদের আয়োজন করেন। এবছরই এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানের পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে আহমেদাবাদের শিল্প শ্রমিক এবং পাঞ্জাবের সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ফলে সরকার গান্ধীজীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এর পরও বিক্ষোভ কমেনি। ধর্মঘটে এবং বিক্ষোভের লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় সরকারী দপ্তর এবং যানবাহন। সাদা চামড়ার ইউরোপীয় কর্মকর্তা এবং অধিবাসীদের উপরও ভারতীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাদের উপরও আক্রমণ করা হয়। এপ্রিলের ১৩ তারিখ দুজন রাজনৈতিক নেতাকে অমৃতসর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পটভূমিতেই বলতে হয় হত্যাকাণ্ডের আবহ তৈরি হয়েছিল।হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ১৪ এপ্রিল, ১৯১৯ তারিখের ডায়ারের নিজের ডেসপ্যাচ অনুসারে ১৩ এপ্রিল ১০০ জন গুর্খা সৈন্য আর ২টি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে ডায়ারের নির্দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগে ২০০০-এর মত “বিদ্রোহীকে” হতাহত করা হয়েছিল। আর এতে খরচ হয়েছিল ১৬৫০ রাউণ্ড গুলি। সেসময় বাগের মাঝখানে কুয়োতে পাথর ফেলে কিছু মানুষকে জীবন্ত প্রোথিত করা হয় এবং উপমহাদেশের নানান অঞ্চল থেকে নানাভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতেই থাকে ৷ (চলবে)৷

ফারহানা আকতার
তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
লেখক: ফারহানা আকতার, ডিরেক্টর এন্ড এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক এবং সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ৷

লেখকের অন্যান্য বই

বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৮:৩৯   ৮৮৯ বার পঠিত   #