সোমবার, ১৫ মার্চ ২০২১
মতি মিয়ার প্রেস ফ্রিডম : পর্ব ১০৮।
Home Page » সাহিত্য » মতি মিয়ার প্রেস ফ্রিডম : পর্ব ১০৮।
রামাই পন্ডিত ও “বহর-আল-হায়াৎ” Connection !
শূন্যপুরাণ - ৩: একটু detour দিয়ে ফিরে আসি রামাই পন্ডিতের “পুরাণ” আলোচনায়। গত কালকে Gutenbergএর ছাপাখানা আবিস্কার কাহিনীর পুরোনো postটা repeat করেছি বিশেষ এক উদ্দেশ্যে। (মার্চ এপ্রিলে “বাংলা: ইতিহাস ভূগোলে share করা) এই সাত আটমাস আগের postএর তথ্যের মাঝে আমার নিজের একটা, আপাতত বেশ দূর্বল “Concept”র , সমর্থন পাওয়ার যোগ আছে। এই Conceptটা “বাংলা ও বাঙ্গালীর চরিত্র” আবিস্কারের।
Absolute Truth, Relative Truth ও Alternative Truthএর গোলকধাঁধায় পরে বাঙ্গালীর ইতিহাস চর্চা আপাতত এক নুতন পথে হাঁটতে শুরু করেছে। বাঙ্গালী আত্মার উঁচু মার্গীয় চেতনায় অবস্থান প্রয়াস এটা ! প্রায়ই শুনি, বাঙ্গালী শ্রেষ্ঠ জাত, ভাষাটা পৃথিবীর সেরা। প্রমান: চর্যাপদ। যেহেতু চর্যাপদের কবি লুইপা/কাহ্নুপারা খাস বাঙ্গাল; স্মরণীয় যে মারাঠি, উড়িয়া, মৈথিলী সহ ৮টি ভারতীয় ভাষাও একই ধরণের দাবী করছে)। আসুন আমরা ধারণ করি ভারতের এই ৮ ভাষাভাষীরই পূর্ব পুরুষ বৌদ্ধ। কারণ, চর্যার কবিরা সবাই বৌদ্ধ ছিল। তাই বলা যায় দ্বিপদি ও ত্রিপদি ছন্দের চর্যার কবিরা কাব্যচর্চ্চায় বৌদ্ধ তন্ত্রের সহজিয়া কায়া-সাধনকারীর উত্তরাধীকারও আমাদের। ভৈরবকুন্ডে “পরকীয়া চর্চা”, কর্তাভজন, কিশোরীভজনে ও “নেড়া-নেড়ি সঙ্গ”র উত্তরাধীকার আমাদেরই। যেহেতু চর্যাপদগুলো কায়া (দেহ) সাধনাচারের কাব্যিক প্রকাশ, ডোম/চাঁড়াল-যুবতীদের পটিয়ে ভৈরবকুন্ড-performanceএ partner বানানোর কৌশলবাণী, ভাষার উত্তরাধীকারের সঙ্গে সঙ্গে চর্যপদীয় এই “ভাব”-সমুহ উত্তরাধীকারসূত্রে আমাদেরই সম্পদ। আধুনীক বং কবিরা যেমন পীনোন্নত বক্ষ, গুরুনিতম্ব, রম্ভোরু (কদলীবৃক্ষের ন্যায় উরু যাহার), বা ঠোটের লিপস্টিক কে-ম-নে কামনা জাগায় নিয়ে কাব্য চর্চা করে। শুধুই ভাষা আমদানী হবে, ভাব নয়? জয়তু চর্যাপদের কবিগণ। এখানে বড় একটা প্রশ্ন জাগে মনে।
- ৮ম -১২শ শতকের এই কবিরা কেবল কাম-কলা বিষয়ক কবিতা লেখার জন্য একটা “বং ভাষা”র সূত্রপাত করলেন কেন?
- তৎকালীন সমাজের প্রাসঙ্গিক অন্য সব টানাপোড়েনগুলো নিয়ে পয়ার ছন্দে একটা দুইটা “পদ” রচনা করলেন না কেন তাঁরা? চর্যাপদের কবিরা?
অথবা
- ভাষাবিশেষজ্ঞ শাস্ত্রী মহাশয় নেপালের রাজ-পাঠাগারে এমন ধরণের (চর্যা) পদ খোঁজেননি কেনো?
নেপালের Royal Libraryর আলমারীর তাক থেকে “আবিস্কার” করা “তালপাতার পুথি”স্থ কবিতা/পদগুলো (স্মর্তব্য: Gutenberg সাহেব তখনো তাঁর “ছাপাখানা আবিস্কার” করেননি) আসলে কার কবিতা কার নামে চালিয়ে দেয়া হলো? পৌরাণীক দ্বৈপায়নের পুরাণগুলোর (মহাভারতসহ ১৯টি) ৭৫% ভাগ যে দ্বৈপায়নোত্তর অন্য কারো লেখা তা তো আমরা জানিই!! লক্ষ লক্ষ শ্লোক লিখতে (লিখতো কিসে?) কত সময় লাগে? গটেনবার্গ সাহেবতো পূর্বজন্মে কুরুক্ষেত্রের আশে পাশে ছিলেননা। শ্রী গনেশ যদি পেপিরাসপত্র, তালপত্র, ছাগচর্ম, বা বংদেশথেকে আমদানী করা রেশমী Scrollএ ১৮টি পূরাণ ও একটি ভোমাকৃতির গটিনবার্গীয় সংস্করণের মহাভারত লিখেই (লিপিকরণ) থাকেন, তাতে কত percent নিজের কবিতা ঢুকিয়েছেন কেউ জানে? পরের বিতরণকারীদের “প্রলেপ” দেয়ার কথা নাহয় বাদই দিলাম।
- চেঙ্গিস খান বা সলমন রুশদীর ভাষায় Chinggis Qan এর বংশধরদের মুদ্রাক্ষর ও কাগজ গোস্বামী-কবিদের কামরুপ কামাক্ষায় আমদানী হতো না তখনো, তালপাতায় লেখা চর্যাপদগুলোর পৃষ্ঠা সংখ্যা, পুথির পরিচ্ছেদ বিভাজন নেপালের লাইব্রেরিতে সংগ্রহের সময় কে করেছিল? কবিরাই কি স্বনামে লিখে লিখে পদগুলো সংরক্ষনের ব্যবস্থা করেছিলেন?
University of Nalandaর লাইব্রেরীর বই পুড়ানোর জন্য যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বখতিয়ার খিলজী সেই ২৫০০ মাইল দূরের সমরখন্দ থেকে ঘোড়া হাঁকিয়ে Yaho-o-o বলতে বলতে বিহারে হাজিরা দিয়ে নালান্দার লাইব্রেরীর বইএর তাকে আগুন দিলো, আর বইগুলো তিন তিন মাস ধরে জ্বল্লো, Absolute Truth-Saying-Historianরা সে উপাখ্যান লিখেছেন প্রচুর গো-এষনা করে করে!
বই পুড়তে তিন মাস লাগে কেন, জানেন আপনারা? . . .
শূন্য পুরাণ ৪: ধর্ম বিস্তারের “খিচুড়ী তত্ব”
“উপনিষদের আত্মতত্ব যেমন বাঙ্গালী চিত্তে আসন পেয়েছে, তেমনি পেয়েছে সমান সমাদর আউল-বাউল-সুফী-ফকিরের সহজ সাধনা” - ভক্তিমাধব চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক, রামাই পন্ডিতর “শূন্য পুরাণ” পৃ: ৬১।
—–
ইতিহাসিক পন্ডিতগণ বাংলায় অত অত মুসলমান কৈথ্যেকে আসলো, প্রশ্নটা নিয়ে বড় বিব্রত-ব্যস্ত। একদল বলে “মেজর জেনারেল ই. ব. খিলজী তরওয়ালাঘাত করে করে সব হিঁন্দুকে মুছলমান বানিয়ে ফেলেছে (জেনারেল সাহেব অত অত তরওয়াল পাইলো কৈ?)। আরেক দল বলে, পীরদের “শান্তির বাণী” শুনিয়া আনন্দে সব নমশুদ্রগন মুছলমান হইয়া গেল ! (পাঠক, আপনি ভাবিয়া পুলকিত হওন যে সেইযুগে পীরদের দূর্বোদ্ধ আরবী জবানে-বাণী নমশুদ্ররা চট চট বুঝিয়া শুনিয়া মুগ্ধ হইতো)।
এরিজোনা ইনভার্সিটির ইন্ডিয়া-বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ঈটন সাহেব তিন ডিগ্রি তেড়চা করে প্রশ্ন তুল্লেন, ‘তুর্কিরা মন্দিরের ইঁট দিয়ে মসজিদ বাঁনিঁয়েঁছে ধরা যায়, হয়ত, মনে হয়, সম্ভাবনা কম, তবু কথাটা ঠিকই বোঁধ হয়, কারণ তাবরিজীর বানানো মসজিদের দরজার পাশে হিন্দু-দেবী মুর্তি আঁকা একটি ৪ বাই ৪ ইনচি ইঁট পাওয়া গিয়াছে !! (পাঠক লক্ষ করবেন, বংদেশে সেই যুগে ইঁটের কত অভাব ছিল এং ইতিহাস রচনায় “স্বীদ্ধান্ত”এর অভাব নয়, “শব্দ”এর কত অভাব) এবং, ঈটন সাহেব এরসাথেই লিখছেন, “কিন্তু এতে এটা প্রমান হয়না তুর্কিরা/পীরেরা তরোয়াল চালাইয়া ইসলাম প্রচার করিয়াছিল! (স্থানান্তরে, “শেখশুভোদয়” পুথিতে দেখা যায় জঙ্গল সাফ করার কাজে “হুজুর” ২২ হাজার তুর্কি “শ্রমিক”(?) নিয়োগ করিলেন !!!)
আজ পর্যন্ত, সেই ১৬শতকের ইরানের “তাবাকাত-ই-নাসিরী” থেকে শুরু করে ২১শতকের ঢাকার আজিজ মার্কেটের “বাঙ্গালী মুসলমানের মন” পর্যন্ত ২৬৯টা ইতিহাসের (দূর্বুদ্ধ) বই পুস্তক কিতাব, Report, Book, Chronicle ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি লেখা হয়ে গেলো, মতি মিয়া আজতক “জল”এর গঙ্গা (গেনজেসও বলতে পারেন) ও “পানি”র মেঘনা চিনলো না!
অতএব আমি নিজেরই একটা থিউরি-তত্ব বলছি, শুনুন
Theory #1: ১৩শতকের প্রথম দিকে অনেক, প্রচুর, বহুত নমশুদ্ররা ইরানী খিচুরীর স্বাদ পাইয়া দলে দলে মুসলমান হইয়া গেল । !!!
রুনা লায়লার (এবং আরও কয়েকজনের) গাওয়া সেই বিখ্যাত গানটা মনে আছেতো আপনাদের, “দমাদ্দম মাস্ত কলন্দর . . .”? অবশ্যই মনে আছে। আর তাই বেহুঁশ কলন্দর শাহ তথা “মাস্ত কলন্দরকে জানেন, চেনেনতো সবাই। সুফী কলন্দর শাহর “মাস্ত” মাস্তি বিনোদন মিডিয়ায় বেশ জমাট, তাও আমরা সবাই জানিইতো। আমরা বংবাসীরা এও জানি যে ইরানী পীর ফকির সুফীরা ৮১৬ বছর আগে আমাদের বং দেশে এসে বাঙ্গালীদের প্রথম খিচুরী খাওয়া শিখিয়েছিলো। প্রকাশ্য লঙ্গরখানায় বটি কাবাব, ভূনা খিচুরী, পাইন্না খিচুরী, আর দরবারে গুহ্য সাধনা, ভক্তিমাধব বাবুর ভাষায় “সহজ” সাধনা, শিখিয়েছিলেন সুফী সাদক ‘তাবরিজী’ প্রথম। পীর তাবরিজী ও কলন্দর শাহ এবং আরও অনেক সুফীর এই “সহজ সাধনা” তত্বটা নাথগুরু মৎস্যেন্দ্র নাথ, গোর্ক্ষনাথ, এবং রামাই পন্ডিতের মত স্বীদ্ধাচার্যদের থেকে নিয়েছিলেন।
শাহ কলন্দরজী বেঁচে থাকলে রুনার গালে কষে এক থাপ্পর দিয়ে, “তু সমঝা নেহি মুঝকো, বেকুফ আউরাৎ” বলতেন নির্ঘাৎ!
জাবি নৃবির ছাত্রী ‘নাসিয়া’ ক’দিন আগে বল্ল, “মতিভাই, আপনার রুচি-বিকৃতী হৈছে। মন্দিরের দেয়ালে প্রাকৃতিক-কর্মেরত মানুষের artটা আপনার মনে হয় Pure যৈন-কর্ম প্রচার? অবাক কান্ড মতি ভাই! নাসি নৃবিজ্ঞানের তুখোড় ছাত্রী। “ভয়ঙ্কর” কিছু বিষয় নিয়ে গবেষনারত। আমি ওকে বলেছিলাম “বাঙ্গালীর Group Sex ইউরোপে Export কীভাবে হলো” একটু গবেষণা করনা কেন? গারো পাহাড়ের উত্তর পাদদেশে আর কুমিল্লার লালমাইর পশ্চিম ঢালে স্বীদ্ধাচার্যের তত্বাবধানে চর্চিত দেহসাধনার পদ্বতিকে Pure যৈন কর্ম বলা রুচিবিকৃতীর লক্ষন, ঠিক আছে। কিন্ত Group Sex যে সেই সুবাদে এই বঙ্গভূমিরই Product, চর্যাপদী কবিদের “যা আছে ব্রহ্মান্ডে তা আছে দেহভান্ডে”-সাধনার ফসল, সে ইতিহাসটা জানতে চাওয়াও কি বিকৃতরুচির পরিচায়ক, নাসিয়া? “বাঙ্গালী হিন্দুর মন”, “বাঙ্গালী মুসলমানের মন” অথবা “শুদ্র/চাঁড়ালের মন” কোথায় খুঁজবো আমরা? “সামন্ত বীরভদ্র ১২০০ নেড়ার জন্য ১৩০০ (হ্যা, তের শ’) নেড়ী সংগ্রহ করিয়া দিলেন”; . . এই আদিবাসী যুবতীরা কি ‘গনিমতের মাল’ সরবরাহ(?) নাকি অজন্তা কোনারক ইলোরার জন্য শিল্প উপকরণ ! .চর্যাপদের কবিরা, হারিপা কাহ্নুপা শবর কন্যা ও ডোম্বিনী-যৌবনতুষক কবিতায় বং ভাষার আদিরূপ রূপায়ন করিয়াছেনতো ! . . . ই’রোপ আম্রিকার লোকেরাতো Group Sex করে, ই-য়া-ক থ্যু ! . . . ক্রমশ।
ক্রমশ. . .
তথ্য সূত্র:
(১) “শূন্য পুরাণ”: ভক্তি মাধব চট্যোপাধ্যায়, (১৯৭৭) সমপাদিত, ফারমাকেএলএম প্রাইভেট লিমিটে, কলিকাতা।
(২) “অমৃতকুন্ড” - শ্রী ভুজবর্মন ( ১২১০ খৃ:; অনুবাদক রুকন উদ্দিন সমরখন্দী, “বহর-আল-হায়াৎ”।
(৩) “যোগ কলন্দর”। পীর শরফুদ্দিনন আলি কলন্দর -
(৪) সলমন রুশদী (2009): “The Enchantress of Florence”, Random House, N Y.
(৫) Richard Eaton (1993), “The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204 - 1760″, University of California Press, Berkeley.
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৪:০৪ ৯৪১ বার পঠিত # #ইসলাম #এশিয়া ধর্ম প্রচার #পল্লিসাহিত্য #মতি মিয়া #রামাই পন্ডিত #শুন্য