শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বাংলাদেশ থেকে ভারত সিমান্ত দিয়ে একটি পাখিও ঢুকতে না দেবার অঙ্গিকার অমিত শাহ্

Home Page » বিবিধ » বাংলাদেশ থেকে ভারত সিমান্ত দিয়ে একটি পাখিও ঢুকতে না দেবার অঙ্গিকার অমিত শাহ্
শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১



ফাইল ছবি

ভারতে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই রাজ্যে রাজনৈতিক সফরে এসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যুর আড়ালে আবার সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে চলেছেন।

বৃহস্পতিবার কোচবিহার ও ঠাকুরনগরে দু’দুটি জনসভা থেকে মি শাহ দাবি করেছেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে সীমান্ত দিয়ে ‘কোনো মানুষ দূরে থাক - একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না।’

পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য দাবি করছে, তাদের শাসনামলে অনুপ্রবেশ মদত পেয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকার যা বলছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই মনে করছেন, কথিত অনুপ্রবেশ ইস্যুর আড়ালে বিজেপি আসলে সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকেই সামনে আনতে চাইছে।

বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন মাত্র মাসদুয়েক দূরে - আর ওই রাজ্যে শাসক দল তৃণমূলের প্রধান চ্যালেঞ্জার বিজেপির প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই।

ইদানিং খুব ঘন ঘন তিনি পশ্চিমবঙ্গ সফরেও আসছেন - এবং বৃহস্পতিবার সবশেষ সফরে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে তিনি দুটো বড় জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন।

কোচবিহার ও ঠাকুরনগরে এই দুটি জনসভা থেকেই তিনি পরিষ্কার করে দেন, বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যু ভোটে বিজেপির জন্য বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে যাচ্ছে।

শাহ জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘অনুপ্রবেশ নিয়ে আপনারা বিরক্ত কি না বলুন? আর মমতা ব্যানার্জি কি আদৌ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবেন?’

‘জেনে রাখুন, রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে তবেই কেবল অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। বিজেপি সরকার গড়লে সীমান্ত দিয়ে মানুষ তো দূরে থাক - একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না দেখে নেবেন!’

কোচবিহার বা ঠাকুরনগরে অমিত শাহ যখন এ কথা বলছেন - ঘটনাচক্রে ঠিক তার আগের দিনই তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পার্লামেন্টে লিখিত জবাবে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় পরের পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ক্রমশ বিপুল হারে কমেছে।

তৃণমূলের যে এমপি মানসরঞ্জন ভুঁইঞার প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই উত্তর দিয়েছে, তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন অমিত শাহ-র এই বক্তব্য তাই পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ভুঁইঞার কথায়, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া দেয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের, সেই বেড়া দেয়ার কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।’

‘তা ছাড়া বাইরের দেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ভারতে ঢুকবেন, তাদের বাধা দেয়া বা তাদের ওপর নজরদারি করার কথাও বিএসএফের - যারা কেন্দ্রীয় সরকারের বাহিনী।

‘ফলে কী করে তারা অনুপ্রবেশের জন্য মমতা ব্যানার্জির সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে পারেন?’ বলেন তিনি।

মানস রঞ্জন ভুঁইঞা বিবিসিকে আরো বলেন : ‘আমার প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় সরকারই তো বলেছে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ কমে গেছে, তারপরও এসব কথা বলার অর্থ নিছক রাজনীতির জন্য রাজনীতি করা, নেহাত বলার জন্য বলা।

‘এটা জেনে রাখুন, আমার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার সরকার সব ব্যাপারেই সজাগ - এবং তিনি কখনওই অনুপ্রবেশকে মদত দেন না, দেন না, দেন না!’, বলছিলেন মানস রঞ্জন ভুঁইঞা।

কলকাতায় প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাবেক সাংবাদিক শিখা মুখার্জি আবার মনে করছেন, এই অনুপ্রবেশের ইস্যু উসকে দেওয়ার পেছনে বিজেপির সাম্প্রদায়িক তাস খেলার চেষ্টাই আসলে কাজ করছে।

মুখার্জির কথায়, ‘অনুপ্রবেশের ভয় দেখিয়ে বিজেপি আসলে এটাই বলতে চায়, বাংলাদেশ থেকে দলে দলে মুসলিমরা এসে পশ্চিমবঙ্গে কোনো এক প্রক্রিয়ায় হিন্দুদের সংখ্যালঘু বানিয়ে দেবে।’

‘ফলে এটা একটা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বক্তব্য - আর এ কথাটা যাতে বলা যায় সে জন্যই অনুপ্রবেশের ইস্যুকে প্রক্সি বা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’, বলছিলেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান এনে ভারত সরকার পার্লামেন্টে যে নাগরিকত্ব আইন পাস করেছে, প্রায় সোয়া বছর পরও তার বাস্তবায়ন শুরু হয়নি।

আর এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দু, যারা অনেকেই সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশ থেকেও ভারতে এসেছেন - তাদের মধ্যে অসন্তোষও তীব্র হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার কিন্তু ঠাকুরনগরের জনসভাতেও মতুয়াদের সামনে অমিত শাহ নির্দিষ্ট করে কোনো তারিখ বলতে পারেননি যে তারা কবে থেকে এই আইন রূপায়নের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।

শিখা মুখার্জি বলছিলেন, “আসলে এর দুটি দিক আছে। প্রথমত, আসামে ও ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আর সেই আসামেও সামনেই ভোট আসছে।

‘এখন অমিত শাহ নাগরিকত্ব আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যা-ই বলুন, আসামের মানুষও তো সেটা জানতে পারবে। আসামেও তার প্রতিফলন ঘটবে।

‘আর দ্বিতীয়ত, এই আইনের ভিত্তিও কিন্তু ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার যারা, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া। ফলে আবার সেই ঘুরেফিরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকেই খুঁচিয়ে তোলা,’ বলছেন শিখা মুখার্জি।

আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে একই সঙ্গে ভোট অনুষ্ঠিত হবে - এবং দুরাজ্যে দুরকম রাজনৈতিক বাস্তবতায় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিজেপি কীভাবে এগোবে সেটা তাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলেই দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৭:০০   ৫২১ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #