সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
ফারহানা আকতার এর কলাম – “ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – পর্ব-১৪”
Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম – “ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – পর্ব-১৪”‘উর্দু- ই হবে উভয় পাকিস্তান (পশ্চিম ও পূর্ব)এর একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ —পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘোষণার প্রতিবাদে এবং মাতৃভাষা ‘বাংলা’ কে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবীতে ছাত্ররা যখন রাজপথে বিক্ষোভে ফেটে পরে তখন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সকল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নির্বিশেষে সকল জনতা ছাত্রদের এই দাবীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ৷ এই লক্ষ্যে ছাত্র প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়৷পরে এটি ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ নামে পরিচিতি পায় ৷এ দাবী আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ছাত্র-ধর্মঘট শুরু হয়৷ এদিকে ‘পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ঢাকা-সফরে আসছেন’ –এই খবর পেয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ৷পূর্ব-পাকিস্তানের সার্বিক পরিস্হিতি নিয়ণ্ত্রনে আনার জন্য নাজিমুদ্দিন এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন ৷ সর্বদলীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে এই সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৫ই মার্চ ১৯৪৮ সালে৷ এই আলোচনা সভায় ছাত্র নেতারা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের মাধ্যমে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট নিম্নলিখিত দাবীগুলো তুলে ধরেন :
১.সংসদে ‘বাংলা’ কে দাফতরিক ভাষা করার ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মাধ্যম হবে ‘বাংলা ভাষা’৷
২.সংসদে প্রস্তাব গ্রহণ এবং অনুমোদন করতে হবে যে, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেবে ৷
৩.আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন দেয়ার জন্য পাকিস্তান সরকার কর্তৃক যেসব সংবাদপত্রকে পূর্ব পাকিস্তানে নিষিদ্ব ঘোষণা করা হয়েছিল, তা তুলে নিতে হবে৷
৪.পুলীশ ও তাদের কমান্ডিং অফিসার কর্তৃক ছাত্রদের উপর নির্যাতনের সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে৷
৫.’ভাষা-আন্দোলন’ হছ্ছে ‘দেশপ্রেম-অনুভূতি ও মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধের এক মহান পরিচয়বাহক’ – এটি ঘোষনা দিতে হবে ৷ এবং পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রীকে রেডিও-টিভি ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের এর মাধ্যমে এই ঘোষণা সকলকে জানিয়ে দিতে হবে৷৷
৬.’ভাষা-আন্দোলন’ এ যোগদানকারী সকল ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা তুলে নিতে হবে৷
৭.মূখ্যমন্ত্রীকে তার পূর্বের বিবৃতি তুলে নিতে হবে যেখানে তিনি প্রকাশ্যে ‘ভাষা-আন্দোলন’ কারীদের কমিউনিস্ট ও পাকিস্তানের শত্রুদের চর বলে উল্লেখ করেছিলেন ৷( চলবে)৷
তথ্যসূত্র: বুকস, ইন্টারনেট
লেখক: ফারহানা আকতার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, একাডেমিসিয়ান,গবেষক, কলামিস্ট এবং লেখক৷
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৪:২৭ ৭৮৮ বার পঠিত # #নতুন প্রজণ্ম #বাংলাদেশ #মুক্তিযুদ্ধ