বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০

“Gynandromorphism” একই প্রাণীতে নারী ও পুরুষ উভয় বৈশিষ্ট্য

Home Page » বিবিধ » “Gynandromorphism” একই প্রাণীতে নারী ও পুরুষ উভয় বৈশিষ্ট্য
বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০



ছবিটি তুলেছেন “আশিকুর রহমান”
কাজী মুহাম্মদ মোনায়েম, প্রতিবেদকঃ এক ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। যার বৈজ্ঞানিক নাম Gynandromorphism বা অর্ধেক নারী ও পুরুষ বৈশিষ্ট্যের প্রাণী।

পৃথিবীতে এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাণীর সংখ্যা ৮.৭ মিলিয়নেরেও বেশি। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আবিষ্কার হচ্ছে নতুন প্রাণীও। প্রাণীদের রয়েছে স্বাভাবিক কিছু বৈশিষ্ট্য। এক প্রজাতি যেমন তার বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অন্যের থেকে ভিন্ন। আবার, একই প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী প্রাণীতে থাকে আকৃতি, রং ও বৈশিষ্ট্যে ভিন্নতা।

Gynandromorphism হলো জীনগত এবং বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য গত Chimeric জীব। যার একই দেহে ভিন্ন পুরুষ এবং স্ত্রী Somatic বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। যে সকল প্রজাতির প্রাণির মধ্যে পুরুষ এবং স্ত্রী প্রাণির শরীরের রং, আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্য ভিন্ন সাধারণত সেই সকল প্রাণিদের মধ্যে এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাণীর দেহে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে, Crustacea, scorpions, spiders, ticks, stoneflies, hymenopterans, beetles, butterflies, mosquitoes এবং fruit flies অন্যতম। এছাড়া উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীতেও এ বৈশিষ্ট্যটি বিদ্যমান।

সাধারণত তিন ধরণের Gynandromorphism দেখা যায়। একটি হলো পুরো প্রাণীর দেহতল মধ্যবরাবর সমান দুই ভাগে ভাগ করে। ডানপাশে একরকম লিঙ্গের (পুরুষ বা স্ত্রী) বৈশিষ্ট্য আর বামপাশে অন্যরকম লিঙ্গের (পুরুষ বা স্ত্রী)। বৈজ্ঞানিক ভাষায় যকে বলে Bilateral। অন্য ধরণটি হলো সম্মুখ প্রান্ত এক রকম বৈশিষ্ট্য আর পশ্চাত প্রান্তে অন্য বৈশিষ্ট্য যাকে Anterior posterior ধরণও বলা হয়। শেষ ধরণটি হলো সারা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ভিন্ন লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করবে যাকে Mosaic বলে ধরা হয়। এই সকল প্রাণীরা প্রজনন করতে পারে কিনা তা সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য নেই।

প্রাণীতে কেন এই ধরনের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে সঠিক তথ্য নেই৷ কারণ এটি প্রকৃতির একেবারে দুর্লভ ঘটনাগুলোর একটি। বিভিন্ন ধারণার উপর ভিত্তি করে এটা ধারণা করা হয় ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতার জন্য এরকম ঘটে থাকে। প্রতিটি প্রাণী এক কোষী জাইগোট অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বিশালাকৃতির প্রাণীতে পরিণত হয়। এ সময় তাদের ক্রোমজোমের মধ্যে কোন পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয় এই অবস্থার।

বাংলাদেশে ফড়িংয়ের মধ্যে এই Gynandromorphism বৈশিষ্ট্যটি পাওয়া গেছে। পৃথিবীর সাড়ে ছয় হাজার ফড়িংয়ের মধ্যে থেকে মাত্র ত্রিশটির মত ফড়িংয়ে এই দুর্বল ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য আছে। Neurothemis tullia নামক ফড়িংটি বাংলাদেশের খুবই পরিচিত একটি ফড়িং। একে পুকুর ডোবার আশেপাশে, ফসলের ক্ষেতে বা ঝোপঝাড় এ সহজেই দেখা যায়। ২০১৭ সালের ২৯ আগষ্ট ফরিদপুরে নিয়মিত ফিল্ড ভিজিটের সময় প্রথমবারের মতো Neurothemis tullia নামক এ ফড়িংয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। যার মধ্যে Gynandromorphism নামক এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য আছে। এর মাথা এবং পাখনা Bilateral Gynandromorphism প্রকাশ করে। ফিল্ড ভিজিটটি তত্বাবধান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান এবং মাহাবুব আলম।

অপরদিকে Abdomen অংশটি পুরুষের মত দেখতে হলেও Abdomen এর শেষের অংশ স্ত্রী প্রাণির মত। সম্প্রতি জার্মানি থেকে প্রকাশিত “Notulae odonatologicae” (A semi-annual companion publication to Odonatologica, published for the International Odonatological Foundation, Societas Internationalis Odonatologica (S.I.O.)) নামক জার্নালে “An unusual case of gynandromorphism in Neurothemis tullia (Odonata: Libellulidae)” শীর্ষক গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে এর আগে কোন প্রজাতির প্রাণীতে এই বৈশিষ্ট্যটি পাওয়া যায়নি। আর ভারতীয় উপমহাদেশে তথা দক্ষিণ এশিয়াতে ফড়িংয়ে এটি প্রথম।

এর আগে ২০০৯ সালে ভারতের কেরেলা থেকে একই প্রজাতির ফড়িংয়ে Gynandromorphism দাবি করা হলেও, পরে প্রমাণীত হয় সেটি আসলে Andromorphic Female। তাই বাংলাদেশ থেকে আবিস্কৃত ফড়িংটি মূলত প্রথম Gynandromorphism বৈশিষ্ট্যের। ফড়িংয়ের Gynandromorphism এর সঠিক কারণ এখনো অজানা। তাই এই বিষয়টি নিয়ে দরকার বিস্তৃত গবেষণার। তাহলে হয়তো উত্তর মিলবে Genetics এর অনেক অজানা প্রশ্নের। আর এর মধ্যেই সমাধান থাকতে পারে অজানা রহস্যের।

প্রাণীতে কেন এই ধরনের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে সঠিক তথ্য নেই৷ কারণ এটি প্রকৃতির একেবারে দুর্লভ ঘটনাগুলোর একটি। বিভিন্ন ধারণার উপর ভিত্তি করে এটা ধারণা করা হয় ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতার জন্য এরকম ঘটে থাকে। প্রতিটি প্রাণী এক কোষী জাইগোট অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বিশালাকৃতির প্রাণীতে পরিণত হয়। এ সময় তাদের ক্রোমজোমের মধ্যে কোন পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয় এই অবস্থার।

বাংলাদেশে ফড়িংয়ের মধ্যে এই Gynandromorphism বৈশিষ্ট্যটি পাওয়া গেছে। পৃথিবীর সাড়ে ছয় হাজার ফড়িংয়ের মধ্যে থেকে মাত্র ত্রিশটির মত ফড়িংয়ে এই দুর্বল ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য আছে। Neurothemis tullia নামক ফড়িংটি বাংলাদেশের খুবই পরিচিত একটি ফড়িং। একে পুকুর ডোবার আশেপাশে, ফসলের ক্ষেতে বা ঝোপঝাড় এ সহজেই দেখা যায়। ২০১৭ সালের ২৯ আগষ্ট ফরিদপুরে নিয়মিত ফিল্ড ভিজিটের সময় প্রথমবারের মতো Neurothemis tullia নামক এ ফড়িংয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। যার মধ্যে Gynandromorphism নামক এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য আছে। এর মাথা এবং পাখনা Bilateral Gynandromorphism প্রকাশ করে।

ফিল্ড ভিজিটটি তত্বাবধান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান , মাহাবুব আলম এবং আশিকুর রহমান বন্যপ্রানী নিয়ে গবেষণায় যুক্ত। পড়ালেখার পাশাপাশি বন্যপ্রাণী ল্যাবে রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসাবে আছেন আশিকুর রহমান ।তিনি বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যপ্রাণীর উপর গবেষণার জন্য ছুটে চ্লেছেন। আর ভবিষ্যতে এই কাজটিই তিনি করতে চান। বিভাগের শিক্ষকরা এই কাজে তাকে আন্তরিক ভাবে সহায়তা করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি জার্মানি থেকে প্রকাশিত “Notulae odonatologicae” (A semi-annual companion publication to Odonatologica, published for the International Odonatological Foundation, Societas Internationalis Odonatologica (S.I.O.)) নামক জার্নালে “An unusual case of gynandromorphism in Neurothemis tullia (Odonata: Libellulidae)” শীর্ষক গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে এর আগে কোন প্রজাতির প্রাণীতে এই বৈশিষ্ট্যটি পাওয়া যায়নি। আর ভারতীয় উপমহাদেশে তথা দক্ষিণ এশিয়াতে ফড়িংয়ে এটি প্রথম।

এর আগে ২০০৯ সালে ভারতের কেরেলা থেকে একই প্রজাতির ফড়িংয়ে Gynandromorphism দাবি করা হলেও, পরে প্রমাণিত হয় সেটি আসলে Andromorphic Female। তাই বাংলাদেশ থেকে আবিস্কৃত ফড়িংটি মূলত প্রথম Gynandromorphism বৈশিষ্ট্যের। ফড়িংয়ের Gynandromorphism এর সঠিক কারণ এখনো অজানা। তাই এই বিষয়টি নিয়ে দরকার বিস্তৃত গবেষণার।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৫:১৪   ৭৪১ বার পঠিত