বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০১৩
এরচেয়ে তুমি দূরেই থাকো -যাকিয়া মুসান্না মুন্নী
Home Page » এক্সক্লুসিভ » এরচেয়ে তুমি দূরেই থাকো -যাকিয়া মুসান্না মুন্নীভালবাসা বোধ করি আমার চাইতে তোমার বেশ বিস্তর করেই জানা। এর মানে আমি জানি না। কখনো খুঁজতেও যাইনি। কৈশোরে একবার কেবল মনে হয়েছিলো ভালোবাসা মানেই হলো রাতের আকাশের জেগে থাকা একখন্ড চাঁদ অথবা উজ্জ্বল জ্বলজ্বলে কোন একটা তারা! যেখানে তাকালে কেবল সেই মানুষটার চেহারাই ভেসে উঠবে মনে। ভীষণ একাকীত্বের মাঝেও তার অস্তিত্ব ছায়া হয়ে থাকবে। কৈশোরের এই অনুভবটা এখনও সতেজ। গভীর রাতে যখন নির্ঘুম চোখ মেলে খোলা জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাই নিজেকে একা মনে হয়না কখনো। এটা সেটা কত কিছু নিয়েই না তোমার সাথে গল্পে মেতে উঠি আমি। আমার একলা লাগে না কখনো। আমি একলা থাকি না কখনো। এই যেমন ভরদুপুরে স্নান সেরে এসে ভেজা চুল থেকে টাওয়াল খুলে বারান্দায় রাখতে গিয়েই দৃষ্টি আঁটকে যায় একটা দোয়েল পাখির দিকে। আমি খুব করেই জানি এই দোয়েল পাখিটা তুমি! ভেজাচুলে আমায় কেমন লাগছে দেখতে চলে এসেছো! এই সময়টায় আমি তোমাকে “তুই” বলে সম্বোধন করি। তোমাকে আমার বেশ আপন লাগে তখন!-”কি রে? কেমন আছিস? ভালো তো? এমন শুকিয়ে গেছিস কেন রে? দুপুরে এখনও খাওয়া হয়নি বুঝি? তুই এমন ক্যান বলতো? আমাকে আর কত জ্বালাবি? কি ভেবেছিস? দোয়েল পাখি হয়ে এসেছিস বলে আমি তোকে চিনতে পারবো না? তোর গন্ধ আমি চিনতে পারবো না, না?”এমন শত সহস্র ছেলেমানুষী কথায় আমার এক একটি প্রহর শেষ হয়। আমি তোমাকে ফোন করি না। আমি জানতেও চাইনা তুমি খেয়েছো কি না? শুধু বিড়বিড়িয়ে দোয়েল পাখিটাকে বলি “খেয়ে নিস, অনিয়ম করিস না। অসুখ বাঁধালে কে দেখবে তোকে?” দোয়েল পাখিটা উড়ে চলে যায়। পেয়ারা গাছের ডালে এসে বসে শালিক, একটা শালিক! আমি ভেবে নেই এটাও তুমি! নয়ত কি? একলা শালিক কেন বসবে পেয়ারা গাছের ডালে? রূপ পরিবর্তন করে এসেছো বলে আমি তোমাকে চিনবো না সেটা কি করে ভাবলে? সেই শালিকের সাথেও হয়ে যায় আমার বেশ গল্প।-”আজকে কি হয়েছে জানিস? পাশের বাসার বাবুটা না আমাকে ভুল করে আন্টি ডেকেছে! আচ্ছা বলতো আমাকে কি আন্টির মত লাগে? তুই এমন বাঁদরের মত খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসবি না। শোন, আমি আজকে তোর জন্য ভোরে ফুল কুড়িয়েছি। ভেবেছিলাম মালা গাঁথবো। কিন্তু সুঁই সুতো পেলামই না খুঁজে! মেজাজ এইজন্য ভীষণ খারাপ। তুই ফুলগুলো দেখবি? দাঁড়া আমি নিয়ে আসছি”ফিরে এসে আমি আর শালিক পাখিটাকে খুঁজে পাই না। এই নিয়ে আমার মন খারাপও হয় না। কেন জানো? আমি তখন তোমার উপস্থিতি টের পাই ফুলের মাঝে! ফুলগুলো থেকে তখনও ভুরভুর করে গন্ধ বের হচ্ছে। এখনও কি করে এমন সতেজ আছে ফুলগুলো জানো তুমি? সেই ভোরবেলায় কুড়িয়ে আনা ফুলগুলো এই শেষ দুপুরেও কিভাবে সতেজ থাকে? আমি জানি! কারণ এতে তো তোমার প্রাণ আছে! তোমার ঘ্রাণ আছে! এরপরে কথার ফুলঝুরি ঝরতে থাকে আমার ফুলের সাথে!অতঃপর পৃথিবী অন্ধকার করে বৃষ্টি নামে। আমি বৃষ্টিতে মুখ বাড়িয়ে দেই। বৃষ্টির ফোটা একটু একটু করে আমাকে ভিজিয়ে দিতে থাকে। আমি তোমার স্পর্শ পাই; ঠিক অনেক কাল আগে তোমার ছুঁয়ে যাওয়া কোমল স্পর্শের শিহরণ আমাকে কাঁপিয়ে তোলে!তবু আমি তোমাকে আর বলি না “ভালোবাসি”! প্রচন্ড কাঁপন এলেও আমি তোমাকে পাশে পেতে চাই না। তোমাকে জানতেও দেই না আমি মরে যাচ্ছি তোমাকে ছাড়া! নাইবা জানলে তুমি! ভালোবাসার মানে তো তুমি আমার চাইতে ঢের বেশি জানো!
আমি বেশ আছি তোমাকে নিয়ে!!! পৃথিবীর বুকে আমার চাইতে ভালো বোধ করি আর কেউ নেই। তুমি যেমন করে আমার সাথে আছো, পাশে থাকলেও এমন করে থাকা হতো না তোমার! এরচেয়ে তুমি দূরেই থাকো, অনেক দূরে! যেখানে আমার স্পর্শ পৌঁছায় না, আমার দৃষ্টি পৌঁছায় না, আমার অশ্রু পৌঁছায় না! শুধু ভালো থেকো!
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৮:৩৬ ১০৭১ বার পঠিত