মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৩

“আজ জাতীয় অধ্যাপক মোতাহার হোসেনের জন্মবার্ষিকী “

Home Page » সারাদেশ » “আজ জাতীয় অধ্যাপক মোতাহার হোসেনের জন্মবার্ষিকী “
মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৩



mother-hossion-sm20130729201104.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকম:
 আজ ৩০ জুলাই- জাতীয় অধ্যাপক, দাবাগুরু কাজী মোতাহার হোসেনের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। জ্ঞানতাপস জাতীয় অধ্যাপক ড. কাজী মোতাহার হোসেন বিচিত্র ও বহুমুখী প্রতিভার এক অনন্য মানুষ ছিলেন।

বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সঙ্গীত, দাবা, বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্নক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনে তিনি ছিলেন পুরোধা।

তিনি ১৮৯৭ সালের ৩০ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার পাংশা থানার বাগমারা গ্রামে।

কাজী মোতাহার হোসেন বাগমারায় প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯০৭ সালে মাসিক দুই টাকা বৃত্তিসহ প্রাইমারি পাস করেন। ১৯০৯ সালে তিনি কুষ্টিয়ার উকিল রাইচরণ দাস প্রতিষ্ঠিত সেনগ্রাম মাইনর স্কুল থেকে বৃত্তি লাভ করেন। ১৯১১ সালে তিনি ওই স্কুল থেকে বৃত্তি লাভ করেন।

১৯১১ সালে তিনি কুষ্টিয়া এইচই স্কুলে ফোর্থ ক্লাসে (বর্তমান সপ্তম শ্রেণি) ভর্তি হন। ১৯১৫ সালে আসাম-বেঙ্গল বোর্ড অধীন স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মাসিক পনের টাকা হারে প্রাদেশিক বৃত্তি লাভ করেন।

১৯১৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে আইএসসি ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু বিশেষ কারণে তাঁকে কিছুকাল পর রাজশাহী কলেজে চলে আসতে হয়। ১৯১৭ সালে তিনি চতুর্দশ স্থান অধিকার করে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন এবং মাসিক কুড়ি টাকা হারে বৃত্তি লাভ করেন।

১৯১৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএ পরীক্ষায় বাংলা ও আসাম জোনে প্রথম স্থান দখল করে মাসিক ত্রিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান দখল করে এমএ পাস করেন। উল্লেখ্য ওই বছর কেউ প্রথম শ্রেণি পাননি।

পুত্র-কন্যাদের প্রায় সকলেই জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তাঁদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সনজীদা খাতুন, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন রবীন্দ্রসংগীতের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী।

কাজী আনোয়ার হোসেন জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র রচয়িতা। প্রয়াত কনিষ্ঠ পুত্র কাজী মাহবুব হোসেনও অনুবাদ সাহিত্যে সুপ্রতিষ্ঠিত।

এমএ ক্লাসের ছাত্র থাকাকালেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ডেমোনেস্ট্রেটর পদে চাকরিতে নিযুক্ত হন। এমএ পাস করার পর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার পদ লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন ১৯৩৮ সালে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান প্রখ্যাত বিজ্ঞান সাধক প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আগ্রহ ও পরামর্শে কলকাতায় ড. প্রশান্তচন্দ্র মহলনবীশের অধীনে স্ট্যাস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে সংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ে লেখাপড়া করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্ব পড়ানোর ভার নেন এবং সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগ ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।

দেশে সংখ্যাতত্ত্ব পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে তিনিই ১৯৫০ সালে ‘ডিজাইন অফ এক্সপেরিমেন্টস’ বিষয়ে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। কাজী মোতাহার হোসেন উদ্ভাবিত পদ্ধতি ‘হোসেইনস্ চেইন রুল’ নামে অভিহিত হয়েছে।

১৯৫৪ সালে তিনি ‘প্রফেসর’ পদ লাভ করেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ‘ডিন’ ছিলেন। ১৯৬৪ সালে কাজী মোতাহার হোসেন সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

পরে তাকে ‘সুপারনিউমেরারি প্রফেসর অব স্ট্যাটিস্টিক’ পদে নিযুক্ত করা হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইএসআরটি) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ছিলেন।

১৯৬৯ সালে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রফেসর এমিরিটাস’ পদে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন উৎসবে তাঁকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ (ডিএসসি) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১৯৭৫ সালে তাঁকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় অধ্যাপক’Ñএর মর্যাদা দেয়া হয়।

কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দাবাড়-। দাবাগুরু মোতাহার হোসেন ১৯২৯ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত একনাগাড়ে প্রায় ৩০ বছর অবিভক্ত বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তানে একক চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।

এছাড়াও বিভিন্ন দেশে দাবায় তাঁর সাফল্য প্রশংসনীয়। প্রসঙ্গত অমর কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর দাবা খেলার সাথী ছিলেন।

১৯৩৭ সালে প্রকাশিত তাঁর একমাত্র প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘সঞ্চরণ’ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ সাহিত্যিক ভূয়সী প্রশংসা করেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত দাবা প্রতিযোগিতার ব্যাপারে দু’জনের সম্পর্ক নিবিড় হয়।

সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব আরও ঘনিষ্ঠ হয় ১৯২৭ সালে। বছরের গোড়ার দিকে নজরুল ঢাকায় আসেন ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর বার্ষিক সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদানের জন্য। ড. কাজী মোতাহার হোসেন নজরুল সম্পর্কে অনেকগুলো প্রবন্ধ ও একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

১৯৮১ সালের ৯ অক্টোবর তিনি ৮৪ বছর বয়সে ঢাকায় বিদ্যালোকিত বর্ণিল জীবনের ইতি টেনে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৫:১১   ৪১৯ বার পঠিত