শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০

বাংলাদেশের খেলনা শিল্প, একটি সম্ভাবনা।

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » বাংলাদেশের খেলনা শিল্প, একটি সম্ভাবনা।
শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০



খেলনাসামগ্রী

সাইয়েদুল বাসার,বঙ্গনিউজঃ খেলনা শিশুদের প্রিয় একটি বিষয়। সব শিশুরাই খেলনা পাগল। অনেক শিশু আছে, যারা খেলনা ছাড়া ঘুমায় না, খায় না, এমনকি পড়তেও বসে না। শিশুর মানসিক বিকাশ, ধ্যান-ধারণা সব কিছুরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার খেলাধুলা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে। খুব কম বাবা মা আছেন যারা শিশুর জন্য খেলনা কিনেনা। কমবেশী সবাই শিশুর জন্য খেলনা কিনেন। তাই খেলনার চাহিদা তাই দিন দিন বেড়েই চলেছে।

আমাদের দেশে কয়েক বছর আগেও স্বল্পমূল্যের প্লাাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে এসব খেলনার একটা বড় অংশই তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। ক্ষুদ্র আকারে এই শিল্প গড়ে উঠেছে পুরনো ঢাকা এবং আশপাশের কিছু এলাকাকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম খেলনার বাজার পুরনো ঢাকার চকবাজার। কয়েক বছর আগেও প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই আসত চীন থেকে। কিন্তু এখন সেই বাজারে ভালো একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশে তৈরি খেলনা।

বাচ্চাদের খেলার জন্য প্লাস্টিক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলনাসামগ্রী তৈরি করা হয়। তার মধ্যে- বল, পুতুল, গাড়ি, প্লেন, পিস্তল, সুপারম্যান, এক্স-বক্স, রঙিন বর্ণমালা, কাপড়ের তৈরি ছোট ছোট খেলনা কিংবা বিভিন্ন পশুপাখি, কিচেন সেট, বার্বি সেট, ডলস হাউস এবং মেকিং টয়সহ আরো নানা খেলনা। এসব খেলনা এক সময় চায়না থেকে আমদানি হতো। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশেও খেলনাগুলো তৈরি হচ্ছে। শুধু ছোটরা নয়, অনেক বড় মানুষের পছন্দের তালিকায় আছে অসংখ্য খেলনা। খেলনা এখন শুধু নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না, বিদ্যুৎ ও ব্যাটারিচালিত খেলনা এখন ছোটাছুটি করে সবাইকে আনন্দ দিয়ে চলছে। হাতি, ঘোড়া, বাঘ-ভাল্লুক, বাস ও ট্রেন সব রকমের ‘জ্যান্ত’ খেলনাই বিজ্ঞানের কল্যাণে হাতের নাগালে। পুতুল, ইয়ো-ইয়ো, লাটিম, বল, বাঁশি, ঘুড়িসহ আরো কত রকমের খেলনা বিশ্বজুড়ে শিশুরা নাড়াচাড়া করে আসছে। এটা শুধু আনন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে নেই, সেই সঙ্গে পৃথিবী ও পরিবেশ সম্পর্কে শিশুদের জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে চলছে। খেলনা তাদের কল্পনাশক্তিকে উসকে দেয়, পেশি আর শরীর গঠনে দারুণ সহায়তা করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি সংক্রান্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, দেশে খেলনার চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে এ শিল্পে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ।

আগে অনেক নিম্নমানের দেশি পণ্যই শুধু বাংলাদেশে তৈরি হতো। এছাড়া বেশিরভাগ খেলনা চায়না থেকে আনা হতো। বর্তমানে অনেক চায়না পণ্য আমাদের দেশেই তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। বাজারে খেলনার অনেক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখনো বেশিরভাগ পূরণ হয় চীন থেকে আসা খেলনা দিয়ে। চীনের প্রতি নির্ভরতার অন্যতম কারন হচ্ছে কোয়ালিটি। দেশীয় কারখানাগুলো কোয়ালিটি সম্পন্ন খেলনা তেমন একটা তৈরি করতে পারছেনা। মানসম্মত খেলনা তৈরি না করতে পারার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব ও দক্ষ কারিগরের অভাব। খেলনা শিল্প মালিকদের অভিযোগ, দেশে উন্নত প্রযুক্তি নেই। দেশীয় লেদ কারখানা থেকে হাতে মোল্ড তৈরি করতে হয়। এ মোল্ড তৈরির কম্পিউটারাইজড মেশিন বিদেশে আছে। অনেকে চীন ও তাইওয়ান থেকে মোল্ড বা ডাইস করে নিয়ে আসেন। ডাইস তৈরির কম্পিউটার মেশিন দেশে থাকলে আরো ভালো করা যেত, খরচও অনেক কম পড়ত। তারা আরো জানান, সুলভে ডাইস তৈরি করা গেলে চায়না মার্কেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যেত। এ ছাড়া ডাইস ডিজাইনারও প্রয়োজন। দক্ষ ডিজাইনারের অভাব রয়েছে বাজারে। শুধু ডাইস দিয়ে খেলনা তৈরি করলেই হয় না, এর সঙ্গে আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন। এই প্রয়োজন পূরণে সরকারের সহযোগীতা প্রয়োজন। দেশের শিল্প মালিকদের অনেক প্রতিকুলতা রয়েছে। প্রতিকুলতা থাকা সত্বেও দিন দিন এ শিল্প ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না পেলেও তারা বছরের পর বছর কাজ করে একটি শিল্পকে গড়ে তুলছেন। বর্তমানে খেলনা শিল্পের সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক জড়িত রয়েছে। তাই এ শিল্প উন্নত হলে দিন দিন এ ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হবে অনেকে। পাশাপাশি নারীর কর্মসংস্থান এবং দেশে বেকারত্ব দূর করতেও অনেক সহায়তা দেবে।

খেলনা শিল্পে এখন দরকার সরকারের সহযোগীতা। শিল্প মালিকরা সরকার থেকে সহজ পদ্ধতিতে লোন সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেলে খেলনা শিল্পটি অন্য এক উচ্চতায় পৌছবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও এই পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৮:৩০   ১০৮১ বার পঠিত   #  #  #