রবিবার, ২৮ জুলাই ২০১৩

স্বপ্ন………।

Home Page » ফিচার » স্বপ্ন………।
রবিবার, ২৮ জুলাই ২০১৩



download8.jpgসনেট আকরামঃ কখনো কখনো মাথাটা ধবধবে সাদা কাগজের চেয়েও ফাঁকা হয়ে যায়। ফারাক্কার প্রভাবে কৃষকের শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেতের চেয়েও ভয়ানক খরার সৃষ্টি হয় মগজের ভেতর। কাগজের ওপর অনড় কলম বা কম্পিউটারের কিবোর্ডে নিষ্ক্রিয় হাত দু’টো জানান দেয় মস্তিষ্কের অলস নিদ্রার কাহিনী। আবার মাঝে মাঝে চিন্তা ভাবনা কল্পনার বৃষ্টি নামে- হাল্কা মধুর বৃষ্টি না, একেবারে ধুন্ধুমার বৃষ্টি- বন্যায় ভেসে যায় সব, কাদাপানিতে কিছুই জন্মাতে পারেনা। মাথাভর্তি গিজগিজে ভাবনার কিছুই শেষপর্যন্ত কাগজতক পৌঁছতে পারেনা। কবি হলে আক্ষেপ করতাম, জন কীটসের মত বলতাম, ‘হায়! যদি আমার সমস্ত ভাবনা, কল্পনা, মনের মাধুরি কাগজে ঢেলে সাজানোর আগে আমার মৃত্যু ঘটে!’ কিন্তু একজন সাধারন মানুষের মনের ভেতর কত কি যে আসে যায় তা জানার জন্য পৃথিবী মুখিয়ে নেই, তাই ভাবনাগুলো তার সাথে কবরে চলে গেলেও পৃথিবীর তাতে কোন লাভ ক্ষতি নেই। ফলত, আমার এই খরা বা বন্যার নিষ্ফলতায় আমার কোন আক্ষেপ নেই।আজ একটা বিষয় নিয়ে লিখবো বলে বসেছি। এই বিষয়টা নিয়ে নিজের অনুভূতির প্রগাঢ়তাটা সবার সাথে ভাগাভাগি করার ইচ্ছাটা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ছিলো। ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন সময় যাওয়ায় আর তা নিয়ে বসা হয়নি। যখন আমারই চারপাশের কাছের মানুষদের মাঝে প্রায় সবাইকেই দেখি জাগতিক আর্থিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক দিক থেকে উন্নতি করেই চলেছে ক্রমশ, অথচ আমি যেন ঠিক আগের জায়গাটাতেই আঁটকে আছি - উন্নতির নামগন্ধও নেই। এত চেষ্টা করি তবু যেন বারবার পা পিছলে পড়ি সবধরনের প্রচেষ্টাতেই! কিন্তু আজ ঘুম থেকে জাগ্রত হবার পর থেকেই নিজের ভীতরে এক ধরণের ব্যাপক উন্মাদনা দেখে লিখতে বসতে বাধ্য করলাম নিজেকে।জন্মের তিন চার মাস পর থেকেই আমরা স্বপ্ন দেখা শুরু করি। মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে স্বপ্ন দেখা তত কমতে থাকে। সুতরাং, প্রাকৃতিক প্রবণতা হচ্ছে মানুষ সর্বস্বপ্নহীন ভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। স্বপ্নের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল ইচ্ছাপূরণ । মানুষ অনেক কিছুই চায় কিন্তু পায় না। এমনও হয়, মানুষ আসলে কি চায় তাই সে জানে না। স্বপ্নে একদিকে চেয়ে না পাওয়া বস্তুগুলো পেয়ে তার ইচ্ছাপূরণ হয় অন্যদিকে স্বপ্ন দ্রষ্টা জানতে পারে আসলে সে কি চায়।স্বপ্ন দেখার জন্যই মানুষকে হয়ত একটু বেশী সময় ঘুমাতে হয়। তা না হলে মানুষের শারিরীক বিশ্রামের জন্য কয়েক ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট হতো। সাধারণ মানুষের জন্য স্বপ্ন দেখা ঘুমের মতোই প্রয়োজন। কিন্তু, সাধনার একটা স্তরে উপনীত হলে স্বপ্ন দেখার কোন প্রয়োজন থাকে না । ঘুম থেকে জেগে উঠার পর অধিকাংশ স্বপ্নই ঠিকঠাক মনে থাকে না। অনেক সময় ঘুম ভাঙ্গার পর পর স্বপ্ন মনে থাকে কিন্তু যতই সময় যেতে থাকে স্বপ্ন ততই বিষ্মৃতিতে চলে যায়। কিন্তু কিছু স্বপ্ন আছে যা বাস্তব ঘটনার চেয়েও বেশি স্পষ্ট এবং উজ্জ্বল। এসব স্বপ্ন জীবনে কখনোই ভুলা যায় না।স্বপ্ন ও লক্ষ্য এক নয়। লক্ষ্য, স্বপ্নের মতো কল্পনা আশ্রিত নয়। লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। স্বপ্ন স্পষ্ট হতে পারে কিন্তু সুনির্দিষ্ট নয়। লক্ষ্য সংক্ষিপ্ত। স্বপ্ন বিস্তারিত। চিন্তা স্বপ্নকে প্রভাবিত করে কিন্তু চিন্তার তুলনায় স্বপ্নের বিচরণ ক্ষেত্র অনেক বেশি প্রশস্ত। স্বপ্ন যুক্তির গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে না কিন্তু চিন্তা যুক্তির গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে। পরিবেশ, রীতি-নীতি, ভাল-মন্দ, বিবেক ইত্যাদি চিন্তার স্বাধীন গতিকে বাধাগ্রস্থ করে। স্বপ্নের জগতে এসব বাধা নেই। তাই জাগ্রত অবস্থায় কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার চাইতে স্বপ্নে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সিদ্ধান্তটি নির্ভুল হয় । ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের কল্পনা ও আকাঙ্খাকে দিবাস্বপ্ন বলা হয়। দিবাস্বপ্ন বস্তুগত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বস্তুজীবনে সঠিক ব্যবহারে দিবাস্বপ্ন অতীতের পরিসমাপ্তি ঘটায়, বর্তমানকে সুগঠিত করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের নতুন পথের সন্ধান দেয়। দিবাস্বপ্ন ভবিষ্যতের ছবি দেখিয়ে ব্যক্তিকে শক্তি ও সাহস যোগাতে পারে। সঠিক ব্যবহার জানলে দিবাস্বপ্ন শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত ও নব নব আবিষ্কারের দ্বার উন্মোচন করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই দিবাস্বপ্নকে সৃষ্টিশীলতায় ব্যবহার করে না অথচ প্রায় সারাক্ষণই তাৎপর্যহীন দিবাস্বপ্ন দেখে। দিবাস্বপ্নকে দিবাস্বপ্ন বলা হয় কারণ, সাধারণ মানুষের কাছে দিবাস্বপ্নের বিষয়বস্তুও বাস্তবের মতো বাস্তব নয়। দিবাস্বপ্ন সাধারণ মানুষকে বর্তমানে থাকতে দেয় না।যে যেমন মানুষ সে তেমন স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের তাৎপর্য নির্ভর করে স্বপ্নদ্রষ্টার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর। যে সব মানুষের জাগ্রত অবস্থায়ই কর্মকান্ডের কোন তাৎপর্য নেই তার স্বপ্নেরও কোন তাৎপর্য নেই। স্বপ্ন তাৎপর্যপূর্ণ হয় যখন জাগ্রত অবস্থায় মানুষ তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রাজষির্ নাটকের কাহিনী স্বপ্নে পেয়েছেন, ইংরেজ কবি কোলরিজ তাঁর বিখ্যাত কোবলা খান কবিতাটি স্বপ্ন দেখে লিখেছেন, বিজ্ঞানী নিলস বোর পরমাণুর গঠন স্বপ্নে দেখেছেন, বিজ্ঞানী কেকুলে বেনজিনের গঠন-তত্ত্বটি স্বপ্নে দেখেন অর্থাৎ এক চিন্তা তাৎপর্যপূর্ণ স্বপ্ন সৃষ্টি করে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সত্য স্বপ্ন নবুয়্যতের অংশ। রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেনঃ “সত্য স্বপ্ন নবুয়্যতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ” (আল-বুখারীঃ ৬৪৭২; মুসলিম ৪২০১) । ওহী নাযিলের পূর্বে রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) স্বপ্ন দেখতেন যা দিবালোকের মত স্পষ্ট ছিল (আল-বুখারী, ৩; মুসলিম,২৩১)।কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে খুব কম স্বপ্নই অসত্য হবে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “এটা এজন্যই হবে যে সে সময়টা নবুয়্যতের সময় ও প্রভাব থেকে অনেক দূরবর্তী হবে। ফলে বিশ্বাসীদেরকে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে কিছুটা পুষিয়ে দেয়া হবে, যা তাদের কাছে সুসংবাদ বয়ে আনবে অথবা তাদেরকে তাদের ঈমানের ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে ও দৃঢ় থাকতে সাহায্য করবে” (আল-বুখারী, ৬৪৯৯; মুসলিম ৪২০০)।সবচেয়ে সত্য স্বপ্ন হচ্ছে যা সেহরীর সময়ে দেখা যায়, কারন এ সময়ে আল্লাহ্‌ তা‘আলা নেমে আসেন এবং তাঁর রহমত ও ক্ষমা আমাদের নিকটবর্তী থাকে। আরো ব্যাপার হচ্ছে এ সময়ে শয়তানরাও চুপ থাকে; অন্যদিকে সূর্যাস্তের পরে অন্ধকার নেমে আসলে শয়তানরা ও শয়তানী লোকেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। [দ্রষ্টব্যঃ ইবন আল-কায়্যিম, “মাদারিজ আস-সালিকীন” ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০-৫২]অনেক হল । এবার ডিম ভেঙে কুসুম টা বের করা যাক । দূর্গম পাহাড়ের উপর দিয়ে হাটছিলাম। কিন্তু কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না কোথায় যাব। আমি একা না, সাথে আমার কিছু বন্ধুরাও ছিল। কিন্তু তারা যে কোথায় হঠাৎ উধাও হল বুঝতে পারছিনা। পশ্চিম আকাশ ধীরে ধীরে লাল হয়ে আসছে, তার মানে সূর্য ডুবে যাবে। মনের ভিতর ভয় আর শংকা জেগে উঠল। আমি খুব একটা ভীতু ছেলে না। আবার নাইট ফোবিয়াও কখনও ছিল না বিন্দু পরিমাণে। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি কয়েকটা পরিচিত ব্যর্থতা দাঁড়িয়ে আছে, যাদের দৃষ্টিভঙ্গি যেন কেমন! একটু শিহরণ লাগলো। চিন্তা করলাম, দেরি করে লাভ নেই, এখনি আমাকে দৌড়ে পালাতে হবে। কিন্তু একি? আমার পা যে মাটি থেকে সরছেনা! নাহ! খুব বেশি ভয় পেলে চলবেনা, আমাকে পালাতে হবে। যখন দৌড়াতে দৌড়াতে আমি অনেকদূর চলে এসেছি,ভাবলাম ওই পরিচিত ব্যর্থতা আমার আর নাগাল পাবেনা ঠিক তখনি সামনে তাকিয়ে দেখি যাদুর মত তারা যেন কোথা থেকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বুকের মধ্যে প্রচন্ড বড় একটা ধাক্কা খেলাম। পিছনেই তাকিয়ে দেখি পাহাড়ের একদম শেষ চূড়া। একটু সরে গেলেই ঠিক ১০০ তলা সমান উপর থেকে নিচে গিরিখাদে পড়ে যাব। কি করব? প্রচন্ড ঘামছি। কি করব ভেবে না পেয়ে যখন পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফ দিতে যাব ঠিক তখনি ঘুম ভেঙ্গে গেল……

বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৯:১১   ৫১৯ বার পঠিত