রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০
একই ব্যক্তিকে ষষ্ঠবারের জন্য ওয়াসার এমডি রাখার প্রস্তাব
Home Page » এক্সক্লুসিভ » একই ব্যক্তিকে ষষ্ঠবারের জন্য ওয়াসার এমডি রাখার প্রস্তাবস্বপন চক্রবর্তী. বঙ্গ-নিউজ: পঞ্চম দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পর ফের একই ব্যক্তিকে ওয়াসার এমডি নিয়োগের প্রস্তাব পাস হলো বোর্ড সভায়। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তাকসিম এ খানের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে বোর্ড সভায়। সাবেক সাংসদ ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে শনিবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া দুজন সদস্য জানিয়েছেন, বোর্ডের বেশিরভাগ সদস্য তাকসিম এ খানের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। আর বিপক্ষে মত দেন ৩ জন সদস্য।
২০০৯ সালে তাকসিম এ খানকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে তার মেয়াদ বাড়ানো হয় পাঁচ দফা। পঞ্চম দফায় পাওয়া নিয়োগের মেয়াদ আগামী ১৪ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা।
শনিবার ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের দশ সদস্যের উপস্থিতিতে এক বিশেষ ভার্চুয়াল সভায় এ প্রস্তাব করা হয়। আগামী রোববার তা লিখিত প্রস্তাব আকারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকও বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তাকসিম এ খানের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমডি নিয়োগ দেওয়া হোক। সেখানে সবাই আবেদন করবে ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী। পরীক্ষা হবে, পরীক্ষায় যে সবচেয়ে ভালো করবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তাকসিম এ খানের নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ঢাকা কেন্দ্রের প্রতিনিধি ওয়ালী উল্লাহ শিকদার। ঢাকা ওয়াসার সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। এসব বিষয় তদন্ত হওয়ার দরকার।
“এগুলো সত্য না মিথ্যা আমরা জানি না। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুমান করি, যে সাংবাদিক এসব নিউজ করেছে, তারা সবাই নিজেদের নামে এসব নিউজ করেছে। যদি সত্যতা না থাকত, তাহলে এমডি সাহেবের প্রতিবাদ করার কথা। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং ওয়াসার টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন আকারে ছেপেছেন।”
ওয়ালি উল্লাহ শিকদার বলেন, তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্ত না করে তাকে আবার নিয়োগ দেওয়া ‘ঠিক হবে না’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এজন্য আমি চাই স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ হোক। ওয়াসার প্রবিধান অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে এমডি নিয়োগ হোক।
কোনো কোনো বিষয় তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, সরকার প্রধান যেখানে বারংবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ কথা বলছেন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন, তখন এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু ঘটনা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা আর হতাশার কথা বলতে পারছি না। ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককেই পুনর্নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ ‘অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত’ বলে আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।
শনিবার এক বিবৃতিতে এ সংস্থা বলছে, “বরাবরের মত এবারও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকা ওয়াসার শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় একই ব্যক্তির অনৈতিক ও অবৈধ বহাল অব্যাহত রেখে দীর্ঘকালের লালিত এককেন্দ্রিক আধিপত্যবাদ অপরিবর্তিত রাখার সব ব্যবস্থা করে ফেলা হয়েছে।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গণমাধ্যম ও নির্ভরযোগ্য প্রত্যক্ষ তথ্য সূত্র অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের বিশেষ সভায় শুধুমাত্র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম উল্লেখ করে তাকে আবারও তিন বছর মেয়াদে পুনর্নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
“নিয়ম অনুযায়ী এই পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল কী না, কারা আবেদন করেছিলেন, কেন তারা যোগ্য বিবেচিত হলেন না, বা কেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকই একমাত্র উপযুক্ত প্রার্থী, কেন সংশ্লিষ্ট বিধি অবমাননা করে মেয়াদের পর মেয়াদ একই ব্যক্তিকে নবায়ন দান অপরিহার্য, এসব প্রক্রিয়াগত প্রশ্নের উত্তর যাচাই করা হয়েছে কী না, তার কোনো উল্লেখ নেই।”
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সময়ে জনদুর্ভোগের বিষয়টি ‘কারো অজানা নয়’। টিআইবির গবেষণা ও নির্ভরযোগ্য সংশ্লিষ্ট সব সূত্রে ওয়াসার অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সেবা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৩:৩১ ৬১১ বার পঠিত #আরও ৩ বৎসর #এমডি #ওয়াসা #তাকসিম #মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব