শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০
মা কে ছাড়া প্রথম জন্মদিন-মেজর ডা.খোশরোজ সামাদ
Home Page » Wishing » মা কে ছাড়া প্রথম জন্মদিন-মেজর ডা.খোশরোজ সামাদবঙ্গনিউজের নিয়মিত লেখক মেজর ডা.খোশরোজ সামাদ সম্প্রতি করোনা রোগে মাতৃহারা হন।
মা কে ছাড়া জীবনে এই সেনা কর্মকর্তার উপলব্ধিজাত স্মরণকথা -
মা কে ছাড়া প্রথম জন্মদিন
১।গত ২১ শে আগষ্ট আমার দরজায় কড়া নেড়ে গেছে একরাশ লু হাওয়া। কানে কানে বলে গেল এই দিন তুমি পৃথিবীতে এসেছিলে। না, তুমি একাই আসো নি । যে জন্মাধারে তুমি দশ মাস দশ দিন ছিলে সেটির নাম জরায়ু। আর সেই জরায়ু নামের কষ্টবাহী ধারকের নাম মা।
২। ইন্টার্নি করবার সময় গাইনিতে প্লেসমেন্ট হল। খুব কাছ থেকে দেখলাম সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়াটি। কি ভয়ংকর! আমি মায়ের জেষ্ঠ্য সন্তান।প্রথম সন্তান হবার অনভিজ্ঞতার ভীতি ‘ প্রাইমি ‘ মাকে এক কুহেলিকার আবরণে আটকে রাখে। যখন সদ্যজাত আমাকে মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়েছিল শুনেছি, তখন সব কষ্টের সাগর পেরিয়ে মায়ের মুখে সবর্গীয় প্রশান্তি মাখা হাসি ফুটে উঠেছিল। এই অমল ধবল আনন্দধারা প্রকাশ করবার লেখনী দুনিয়ার কোন কবির কলম ধারণ করতে অক্ষম।
৪।বাবা ছিলেন সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা। মফস্বল শহরে হাতে গোনা কটি গাড়ির একটি ছিল আমাদের,অন্যতম সুরম্য বাসভবনও ছিল আমাদের । দূরদর্শী মা জানতেন সত্যিকার পাঠ শুধু পাঠ্যবই পঠনেই হয় না। তাই পৃথিবীর পাঠশালায় হাতে কলমে শিক্ষার জন্য মা এক জনপদ থেকে আরেক জনপদে নিয়ে যেতেন। আমার বন্ধু তালিকায় মায়ের নির্দেশনায় নিছক ধনাঢ্য ব্যক্তির সন্তানই থাকে নি, বাবার অফিসের ঝাড়ুদারের সন্তানও ছিল।
৫। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়বার সময় ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হল। তখন কার্ড ছাপিয়ে,বেকারীর কেকে নাম লিখে মোমবাতি জ্বালিয়ে জন্মদিন পালন করবার সৌভাগ্য অল্প কজনারই হত। আমি সেই কজনের একজনা। বড় হয়ে বুঝেছি জন্মদিন পালন উপলক্ষ্য মাত্র। সন্তানের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় জাগানো, লিডারশীপ গুণাবলি তৈরী করবার অংশ হিসেবে এটি ছিল মায়ের মাস্টার প্ল্যান।শিশু সন্তানকে এই উপলব্ধি দেওয়া যে, আজ দিনটি শুধুই তোমার। এই যে তোমাকে ঘিরে আছে যারা তারা সবাই তোমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে ‘ হ্যাপী বার্থডে টু ‘ ইউ’।সেই ‘ইউ’ হল আমি। এটলিস্ট আই এম দ্য কিং অব টু ডে।
৬।পেশাগত জীবনে যখন ‘ বুড়ো ধাড়ি হয়ে উঠেছি তখনও মায়ের ‘ স্ট্যান্ডিং অর্ডারে’ জন্মদিন পালন করা হত। পরিসর খুব ছোট হলেও কাছের মানুষেরা এক হয়ে বলতো হ্যাপি বার্থ ডে টু ‘ ইউ ‘।সেই আমি
জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষী হিসেবে মৃত্যু বিভীষিকাময় আফ্রিকাতে কাজ করেছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিব্যবস্থা না থাকলেও টেলিপ্যাথিতে দিব্যি বুঝতে পারতাম,হাজার কিলোমিটার দূরে এক মা জায়নামাজে অবিরল অশ্রু ধারায় সন্তানের অমংগলের আশংকায় শিউরে শিউরে উঠছেন।
৭।অনেক সতর্কতায় ভার্চুয়াল জগতের হাজারো বন্ধু শুভ কামনায় ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তারা অনুমান করেছেন অতি উচ্ছাস আমার উল্টো মর্মপীড়ার কারণ হতে পারে। আমি তাঁদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
৮।অনলাইন খাবারের মেকী আনন্দ উপেক্ষা করবার জন্য অসুস্থতা নিয়েই আমার স্ত্রী নিজহাতে ভালমন্দ রেঁধেছিলো। খুব নিকটজনেরা আমাকে ঘিরে রেখেছিল। কেক কাটা হল। সমস্বরে সবাই গাইছে ‘ হ্যাপী বার্থ ডে টু ইউ ‘।যে কন্ঠ সবচেয়ে উচ্চকিত ছিল মায়ের সেই কন্ঠটিই কোথাও শোনা গেল না। দূরে কোথাও দুখ জাগানিয়া গান বাজছে। বাজুক না! সেই গানের সুরের মাঝে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সংগীতের সুর খুঁজে নেব।
‘ ‘Our sweetest songs are those that tell of saddest thaught! ‘
লেখকঃ মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
ক্লাসিফাইড স্পেশালিষ্ট ফার্মাকোলজি
আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ
বাংলাদেশ সময়: ৫:১৬:২১ ৬৩৬ বার পঠিত #জন্মদিন #জীবন #মা #মেজর