রবিবার, ২৮ জুলাই ২০১৩
ঢাকাতেই বেশি বৃষ্টির দাপট
Home Page » প্রথমপাতা » ঢাকাতেই বেশি বৃষ্টির দাপটApu Rahman,বঙ্গ-নিউজ ডটকম:অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে দেশজুড়ে। তবে মধ্যশ্রাবণে এসে আজ রোববার বৃষ্টির দাপট যেন রাজধানী ঢাকাতেই বেশি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এবারের বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে এটি ছিল সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। তবে ভোর ছয়টা পর্যন্ত গত ১২ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে টেকনাফে। সেখানে ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে এই বৃষ্টির মধ্যে অফিসগামী লোকজনকে কর্মস্থলে যেতে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এমনকি রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রধান সড়কেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান জানান, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় এবং লঘুচাপটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থান করায় বৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় গতকাল রাতের তুলনায় আজ সকালে বৃষ্টির মাত্রা আরও বেড়েছে। ভোর ছয়টা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত এই তিন ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ ভোর ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৫৩, সিলেটে ১৪, রংপুরে ১৩ ও খুলনায় সাত মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দেশের মধ্যাঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে আগামীকাল থেকে বৃষ্টির মাত্রা কমতে থাকবে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির মাত্রা বাড়বে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হবে।বৃষ্টিতে দেশের নদ-নদীগুলোর বেশির ভাগেরই পানি বিপত্সীমার নিচ দিয়ে বইছে—এমন তথ্য দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বাপাউবো)। ৭৩টি নদ-নদী পর্যবেক্ষণ করে বাপাউবোর গতকাল শনিবারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ৪৪টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ২৬টির, অপরিবর্তিত আছে ১টির। দুটি নদীর সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি বাপাউবো। বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বাড়লেও বন্যার আশঙ্কা নেই।
বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল হোসেন আজ প্রথম আলো ডটকমকে জানান, পূর্ণিমা মাত্র কয়েক দিন আগে চলে গেছে। তবে চাঁদের কিছুটা আকর্ষণে জোয়ারের পরিমাপ বেশি হচ্ছে। এ কারণেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি নদীতে পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে বইছে।
জনদুর্ভোগ
মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারে অফিসে আসেন মো. মিন্টু হোসেন। তিনি জানান, মিরপুর ১০ নম্বরের আল হেলাল হাসপাতাল থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত রাস্তার দুই দিকে পানি জমে গেছে। ফুটপাত থেকে ডিভাইডার পর্যন্ত ডুবে গেছে কোথাও কোথাও। তাই রাস্তায় যানবাহগুলো খুব ধীরগতিতে চলছিল। ফলে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত প্রচণ্ড যানজট দেখা গেছে। কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ায় অফিসমুখো অনেককেই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
অফিসগামী মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সাইফুল সামিন জানান, টানা বৃষ্টিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, বিজয় সরণিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সকালে বিজয় সরণি, আসাদ গেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খামারবাড়ি এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। সাইফুল সামিন জানান, অন্য দিন অফিসে যাওয়ার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ১৩০ টাকা দিতে হলেও আজ তাঁকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা গুনতে হয়েছে।
হুমায়ুন রেজা নামে মোহাম্মদপুরের আরেক বাসিন্দা জানান, কারওয়ান বাজারে অফিসে আসতে তাঁর দুই ঘণ্টা লেগেছে। বৃষ্টির কারণে আজ বেশির ভাগ রাস্তাতেই নেমেছে রিকশা। রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় গাড়িগুলো খুব ধীর গতিতে চলছে। তাই মিরপুর থেকে নিউমার্কেটের রাস্তায় প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
লালমাটিয়ার বাসিন্দা সুজন সুপান্থ কারওয়ান বাজারে অফিসে আসার পথে কোনো যানবাহন পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, আড়ং মোড়ের সামনের রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে যাওয়ায় ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা কোনো রিকশাও চলাচল করছে না। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে হেঁটে পানি পার হয়ে সাংসদদের ভবনের (ন্যাম ভুবন) সামনে আসতে হয়েছে। সেখান থেকে তিনি রিকশায় ৭০ টাকা দিয়ে বসুন্ধরার পেছনে আসেন। বসুন্ধরার পেছনের ফটকের কাছে কোমর সমান পানি। বৃষ্টির পানির সঙ্গে আশপাশের নালার (ড্রেন) পানি মিশে একাকার। এই পানি পার করে দেওয়ায় রিকশাওয়ালাকে দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ১০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৯:২০ ৪০৪ বার পঠিত