সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল — এস ডি সুব্রত

Home Page » সাহিত্য » অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল — এস ডি সুব্রত
সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০



 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

---বর্তমান সভ্য পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অভাব যে চেতনার সেটা হলো মানবতা। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সমস্যা দেশে দেশে বিরাজমান ধর্মীয় কূপমন্ডুকতা, সংকীর্ণতা।নিজ ধর্ম রক্ষার নামে অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো এক বড় প্রবনতা হয়ে দেখা দিয়েছে দেশে দেশে ।এ থেকে থেকে উত্তরণের যে উপায় সেটা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। বাংলা সাহিত্যে যিনি সর্ব প্রথম সর্বমানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মানসের প্রয়াস ও প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি  হলেন নজরুল।

     ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে বেড়ে উঠা দুখু মিয়া অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।যার শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায় এবং জীবিকার তাগিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেছিলেন অল্প বয়সে সেই নজরুল আমাদের কাছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হয়ে দেখা দিয়েছিল কাজে কর্মে ও সাহিত্য সাধনায়।রুদ্ধ পরিবেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে প্রগতিশীল চিন্তাধারার কবি নজরুল মানস গড়ে উঠেছিল নানা মুখী সৃজনশীলতায় বহুমুখী কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে। যেখানে ছিল মানবপ্রেম , দেশপ্রেম আর অসাম্প্রদায়িক চেতনা।তার দ্রোহের অগ্নিশিখায় জ্বলে উঠে ছিল বঞ্চিত মানুষ বজ্রশপথে। নিজেকে সর্বদা রেখেছেন জাতি ধর্ম বর্ণ ও সম্প্রদায়ের উর্ধ্বে।

    কাজী নজরুল ইসলামের আগে ও পরে কোন সাহিত্যিক সুষ্পষ্ট ভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা উচ্চারণ করেন নি।তার কন্ঠে ধ্বনিত হয় ___

এক রক্ত বুকের তলে

এক সে নাড়ীর টান

এক সে দেশের খাই গো হাওয়া

এক সে দেশের জল

এক সে মায়ের বক্ষে ফলাই

একই ফুল ও ফল।( সুর সাকী)

    প্রবলভাবে মানবতা বাদ আর অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী নজরুল কে প্রতিভাষণ এ উচ্চারণ করতে শুনি—

 সুন্দরের ধ্যান,তার স্তব গানই আমার উপাসনা, আমার ধর্ম।যে ধর্মে যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি সে আমার দৈব। আর আমি তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই আমি কবি।

     কবি্য বেড়ে উঠার সময়টাতে বেশ উত্থান পতন চলছিল।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির আত্ম প্রকাশ, সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কবকে কখনো করেছে বিদ্রোহী, কখন সঙ্গীত প্রেমিক কখনো মানবপ্রেমিক। কবি বড় হওয়ার সময়টাতে দেখেছেন সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল,রুপ নিয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়।

 মিথ্যা শূনিনি ভাই

এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন

মন্দির কাবা নাই ( মানুষ)

নজরুল বিদ্রোহ করেছেন ধর্ম ব্যবসায়ী দের বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে কখনো নয়। তিনি বার বার মানব ধর্মের উপর জোর দিয়েছেন। হিন্দু মুসলমান  কবিতায় তাকে বলতে শুনি—

 ” মোরা একই বৃও দুটি কুসূম হিন্দু মুসলমান

মুসলিম তার নয়নমণি হিন্দু তাহার প্রাণ।”

 নজরুলের সত্তা জুড়ে ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা,তার সংগ্রাম ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে,ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে। তিনি বিশ্বাস করতেন সকল ধর্মমত কে বিশ্বাস করা ধর্মহীনতা নয়।তার কন্ঠে তাই আমরা শুনতে পাই–

   মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই

   নহে কিছু মহীয়ান।

  দুই ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে নজরুলের বেড়ে উঠা। ছোটবেলায় মোয়াজ্জিনের কাজ করে , মক্তবে পড়াশুনা করে যেমন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জেনেছেন তেমনি লেটো গানের দলে যোগ দিয়ে জেনেছেন রামায়ন মহাভারত ভাগবত পূরাণ সম্পর্কে। প্রমিলা দেবী কে বিয়ে করার পর তিনি হিন্দু ( সনাতন) অনেক খুঁটিনাটি জেনেছেন। এজন্যই তিনি একহাতে লিখেছেন গজল আর ইসলামী সংগীত,অন্য হাতে লিখেছেন ভজন আর শ্যামা সঙ্গীত।

ইসলামী গান বা গজল—-

  ” তোরা দেখে যা মা আমিনার কোলে

  মধু পূর্ণিমার চাঁদ সেরা দুলে

   যেন উষার কোলে রাঙা রবি দোলে।”

    ঈদের সময় যে গানটি না শুনলে এক অপূর্ণতা যেন থেকে যায়।

    ” রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ….”

   ” ফিরে এল আজ মুহররম মাহিনা

    ত্যাগ চাই , মার্সিয়া ক্রন্দন চাই না।”

ভজন বা শ্যামা সঙ্গীত লিখেছেন অত্যন্ত সুনিপুণ হাতে—

  ” কালো মায়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন

তার রুপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যার হাতে মরণ বাচন।”

বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৩:২৫   ৭৩৯ বার পঠিত