বুধবার, ৫ আগস্ট ২০২০

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ রাখার আর কোন মানেই হয়না

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ রাখার আর কোন মানেই হয়না
বুধবার, ৫ আগস্ট ২০২০



---

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে প্রতিষ্ঠাণ গুলো খুলে দেয়ার বিকল্প নেই।প্রতিষ্ঠাণগুলো বন্ধ রাখার আর কোন মানেই হয় না বলে মনে করছেন অনেকে ।এর কয়েকটি কারণ নিচে উল্যেখ করা হলো—

প্রথমত,

শিক্ষকদের দক্ষতার স্তর নিচে নেমে যাওয়ার পথে।কারণ যে যেকর্মই করুক না কেন সে যদি নিয়মিত কাজ না করে,নিশ্চিত ভাবেই তার কর্ম দক্ষতা কমতে বাধ্য।উদাহরণ স্বরুপ একজন ডাক্তর যদি তার প্র্যাক্টিস ছেড়ে একটা নির্দিষ্ট সময় বিরত থাকে তবে তার পেশায় তাঁকে ফিরতে হলে আবারো একটি নির্দিষ্ট সময় লেগে যেতে পারে।তদ্রুপ শিক্ষকরাও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে যেমন নিজে চর্চা করেন তেমনি নিজেকে নতুনের সম্ভারে পরিপূর্ণ করেন প্রতিদিন।আর গত ৫ মাস ধরে কর্মহীন থাকার কারণে শিক্ষকদের দক্ষতার স্তর নিচে নেমে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবেনা।

দ্বিতীয়ত,

শিক্ষার্থীদের অবস্থা বলে শেষ করা যাবেনা।এককথায় বলতে গেলে একটা প্রজন্ম চোখ থাকতেও অন্ধত্বের দিকে যাচ্ছে।কারণ সারা বছর পড়িয়ে যে বাচ্ছাটা কোর্সগুলো শেষ করত পারেনা সেক্ষত্রে গত ৫ মাস ধরে বই বিহীন কি যে পরিস্থিতি হয়েছে তা গার্ডিয়ানদের মুখেই শোনা যাচ্ছে।এক্ষেত্রে ৩ টা সমস্যা হচ্ছে।প্রথমত নতুন কিছু শিখতে পারছেনা, দ্বিতীয়ত শিখা পড়াগুলো ভুলে যাচ্ছে।তৃতীয়ত,আচরনগত পরিবর্তন হচ্ছে।যেমন মোবাইল, ফেইসবুক,টিকটকমুখী হচ্ছে সন্তানরা,মা বাবার সাথে খারাপ আচরন করছে যা তার ভবিষ্যত গড়ে ওঠার পেছনে অন্তরায়।সে থেকে বলাই যায় একটা প্রজন্মের ভোগান্তি আমাদেরকে সারা জনম ধাওয়া করে বেড়াবে।

তৃতীয়ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ ও শিক্ষক সংকটের মুখোমুখি হওয়া।বলার অপেক্ষা রাখেনা দীর্ঘ মেয়াদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের বেতন ও নেয়া যাচ্ছেনা। যার দরুন খবরের কাগজে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।পাশাপাশি খবরের কাগজে সংবাদ হিসেবে অনেক শিক্ষককে পেশা বদলাতেও দেখা যায়।উপরোক্ত দুটো বিষয় শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য মেজর নিয়ামক।

চতুর্থত,শিক্ষকদের জীবন মানে ধ্বস।বেসরকারি তথা প্রাইভেট বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে শিক্ষকদের যেমনই হোক একটা মাসিক বেতন দিয়ে থাকেন।বলার অপেক্ষা রাখেনা বিদ্যালয় বন্ধ থাকায়,শিক্ষার্থীদের বেতন না থাকায় এসব শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রয়েছে প্রায় দেশের সকল বেসরকারি/প্রাইভেট বিদ্যালয়েই।ফলে শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।শিক্ষকরা যদি তাঁদের স্ত্রী পুত্রদের পালনই করতে না পারে তবে তারা অপরের সন্তানের জন্য জীবন লুটাবে কোন দুঃখে?

এক্ষেত্রে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা কেন? আসলে আপনি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বলতে ঐসব প্রতিষ্ঠানের মালিক বা বড়জোড় শিক্ষকদেরকে বোঝাচ্ছেন সেজন্যই এটা বলতে পারেন।কিন্তু একটু গভীরে চিন্তা করলে দেখবেন ঐখানে কিন্তু মালিক, শিক্ষক বাদ দিলেও দেশের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পড়ালেখা করে সেটার কথা হয়তো আপনি ভুলেই গেছেন কারন আপনার চোখে কেবল অন্যের লাভটাই দেখেন উপকারটা দেখেননা।একবার ভাবুন তো যদি অর্থাভাবে ঐসব প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি সকল বাচ্ছাদের সরকারি স্কুলে জায়গা দিতে পারবেন? তাছাড়া হঠাৎ প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে কি শিক্ষার্থী অভিভাবকের মানসিক চিন্তা চেতনায় প্রভাব পড়বেনা? তাই ওদের কথা কি একটুও ভাবার দরকার নেই? ওরা কি দেশের শিক্ষায় একবারেই অবদান রাখছেনা? তাই প্লিজ আপ ভালো তো জগৎ ভালো ভাবনাটা ছেড়ে দিন,অপরকেও নিজের ভেতর একটু ধারণ করতে অভ্যস্থ হোন।

আমার কিছু পাঠক প্রশ্ন তুলবে স্কুল খোললে সর্বনাশ হয়ে যাবে তাদের জ্ঞাতার্থে কিছু কথা-

১। দোকান পাট সব খোলে দিলো তখন আপনার সর্বনাশের দোকানটা কোথায় ছিলো?

২। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীর খোলে দিলো তখন আপনি কোথায় ছিলেন?

৩। বাস,পরিবহন সব খোলে দিলো করোনা কি এরেস্ট হয়ে গেছে নাকি?

৪।শপিংমলগুলোতে যদি বিশেষ ব্যবস্থায় হাত ধূয়ার ব্যবস্থা করে খোলে দেয়া যায় তাহলে স্কুলগুলোতে কি এমন ব্যবস্থা করে খোলা যায়না? আপনি কি মনে করেন স্কুলের চাইতে ওখানে কম লোক যাতায়াত করে?স্কুলে যদি লেজার থামোমিটার দিয়ে গেটে চেক করা যায়, আর গেটে সোপি ওয়াটার রাখা হয়, শিক্ষরা যদি মাস্কের ব্যাপারটা গুরুত্ব দেন তাহলে সীমিত আকারে হলেও তো অন্তত পরিক্ষার্থী ব্যাচ গুলো ক্লাস করতে পারবে।বলবেন অনলাইন ক্লাসের কথা।আপনারা কি জানেন কয়টা বাচ্ছায় অনলাইন ক্লাস করছে? তাছাড়া কয়টা বাচ্ছারই বা মোবাইল কেনার সামর্থ আছে,কয়টা বাচ্ছারই বা এমবি কেনার টাকা আছে? আর কয়েকদিন আগেও তো নিউজে দেখলেন জুম ক্লাস করতে যেয়ে দীর্ঘ সময় হেডফোন কানে রাখতে হয় ফলে শিক্ষার্থীদের শ্রবণ তথা মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে বলে আসংখা করছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ। তাহলে বুঝতেই পারছেন অনলাইন ক্লাসে কেমন সুফল হচ্ছে।আর অনলাইনেই যদি শিক্ষা অর্জন হয়ে যাবে তবে কেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যাপীঠ বানাতে হবে সরকারকে? শিক্ষকদের বেতন বাবদই বা কেনো হবে বরাদ্ধ?

৫। অবাক হওয়ার মতো বিষয়, সারাদিন আপনি মার্কেটে ঘুরেন, সন্ধ্যায় বাসায় যান তখন আপনার সন্তানের কিছুই হয় না অথচ আপনার সন্তান সম্পূর্ণ নিরাপদ একটা বেষ্টনীতে থেকেও অনিরাপদ ভাবছেন কিসের ভিত্তিতে? তবে হে যেকোন সময় অকারেন্স ঘটতে পারে, এমন অকারেন্স তো নিয়তই ঘটছে তখন তো শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী বলে কেউ ফালান না?আরো মজার বিষয় একটু চোখ খোলেই দেখতে পাবেন ঐসব বাচ্ছারা একটাও(ব্যাতিক্রম থাকতে পারে) ঘরে থাকেনা।সারাদিন মাঠে,ঘাটে, হাটে,বাজারে,শপিংমলে, বার্থ পার্টিতে যোগ দিচ্ছে,পিকনিক স্পটে যাচ্ছে তখন তো স্বাস্থবিধির কথা নিয়ে দুকথা কেউ লিখেন না বা বলেননা? কেবল স্কুলে আসলেই হুমকি হয়ে যায়।একটু চিন্তা করে দেখেন তো দোকান পাট খোলার পর কি এমন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দেশে? অথচ দোকান পাট যদি এতদিন বন্ধ থাকতো তবে কেমন হতো?করোনা পজেটিভ,নেগেটিভের খেলা না ই বল্লাম।

তাই আসুন আর গড়িমসি না করে দেশের সার্থে,শিক্ষার্থীদের সার্থে স্কুলগুলো খোলে দেয়ার পক্ষে আওয়াজ তুলি,শিক্ষা বাঁচাই,দেশ বাঁচাই,সর্বোপরি নিজেরা বাঁচি।অনেকে প্রশ্ন রাখতে পারেন ১ বছর চলে গেলে ব্যাপার না, তার চেয়ে জীবন বড়।আমি আপনার সাথে একমত।বেঁচে থাকলেই শিক্ষা।কিন্তু আমার এখানে প্রশ্ন যদি সব বন্ধ থাকে তখন স্কুল বন্ধ থাকলে আমার মাথা ব্যাথা নেই।কারন দ্রুত আমরা করোনা মুক্ত হবো এই আশায়।কিন্তু সীমিত আকারে দোকান -পাঠ,শপিংমল,সমাবেশ,পরিবহন,মিটিংআনন্দ ভ্রমণ সবই যখন চলছে, এতে তো করোনা মুকাবেলা করতে আরো তিন বছর ও লেগে যেতে পারে? যেটা আমরা গত দুদিন আগে ডাব্লিউএইচও(WHO)এর বরাত দিয়ে শোনলাম করোনা আরো সময় লেগে যেতে পারে তাহলে তিন বছর কি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা সম্ভব? আর স্কুুু খোলেও শিক্ষার্থী তোর যার ইচ্ছছা সে আসবে। অতএব এমনিতেই তো এত ছর ব হওয়ার সম্ভাবনা নেই।কিন্তু এতে করে ন্তে শিক্ষা সেক্টরটা একটু হলেও ধ্ববংসের হাত থেকে বাঁচবে।আর ১ বছর বন্ধের কাহিনীটা একটু শুনুন।আপনার বাচ্ছাটা যখন বিসিএস সহ চাকরির পরীক্ষায় যাবে তখন বাংলাদেশের মতো দেশে বেকারত্বের হার বেশি থাকায় যেকোন পরীক্ষায় প্রায় ৪ বছর আগে পরের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।সেক্ষেত্রে ঐ পরীক্ষায় কি করোনার বছর নামে কোন কোটা রাখা হবে? সেক্ষেত্রে আপনার দুর্বল বাচ্ছাটা প্রতিযোগিতায় কিভাবে সে পেরে উঠবে? আর ঐ ব্যর্থ প্রজন্মটা সারা জনমই বাবা-মায়ের গাঢ় তথা রাষ্ট্রের উপর বর্তাবে।তাই সময় থাকতেই ওগুলো ভাবতে হবে।আমার লেখাটা একটা পর্যালোচনা মাত্র।সরকার চাইলে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় স্কুলগুলো বন্ধ বাড়াতে তাতে আমার সমস্যা নেই।তবে লেখাটিতে যদি শিক্ষার্থী অভিভাবকের একটু উপকারে আসে তাহলেই আমার লেখাটা সার্থক বলে মনে করবো।পরিশেষে দেশ করোনা মুক্ত হোক,পৃথিবী ফিরে পাক আগের সতেজ প্রাণ সেই প্রত্যাশা পরম করুণাময়ের কাছে রেখে সকলের সর্বাঙ্গীন মঙ্লকামনা করে লেখাটি শেষ করছি।ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন সবাই।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার

কবি ও প্রবন্ধিক,

সভাপতি,হাসুস বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০:১৯:৪৬   ১৭৭২ বার পঠিত