শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
মার্জিয়া চৌধুরি সুপর্নার গল্প ‘অসমাপ্ত’
Home Page » সাহিত্য » মার্জিয়া চৌধুরি সুপর্নার গল্প ‘অসমাপ্ত’
আজ ১০ বছর পর মধুশ্রী রায়ের সাথে নীরবের দেখা হবে।ভাবতেই আনন্দে চোখে জল চলে এলো নীরবের।
মধুশ্রী রায়ের সাথে নীরব হকের প্রথম দেখা বাড়ির ছাদে।মধুর বাচ্চাসুলভ আচরণ আর মিষ্টি কথার প্রেমে পরে যায় নীরব।ভালোবাসাকে ধর্মের ঊর্ধ্বে রেখে শুরু হয় তাদের পথচলা।
কলেজ শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে দুজন। তখন দুই পরিবারের কেও তাদের সম্পর্কে জানত না।এরই মাঝে মধুর পরিবার তাদের নতুন বাসায় চলে যায়।ফলে বেড়ে যায় পথের দূরত্ব।তবে মনের দূরত্ব কিন্তু বাড়েনি।সময়ের সাথে সাথে তাদের ভালোবাসা গাঢ় হয়েছে,ভালোবাসাকে ঘিরে দেখেছে কত স্বপ্ন।
মধুঃ মা জেনে গিয়েছে।তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে না করেছে মা।
নীরবঃ কেন?উনি তো আমাকে অনেক স্নেহ করতেন।ভালো ছেলে হিসেবে কতবার বলেছে আমার মতো একটা ছেলে চান।তাহলে?
মধুঃ আমরা হিন্দু আর তুমি মুসলিম। এটা আমার পরিবার মেনে নেবে না। চলো নীরব আমরা পালিয়ে যাই।এছাড়া আর কোনো পথ নেই।
নীরবঃ পালিয়ে কেন যাবো?আমরা কি অন্যায় করেছি যে পালিয়ে যাবো? ভালোবাসা তো কোনো অপরাধ না।
মধুঃ আমাদের সমাজে কেও বিধর্মী সম্পর্ক মেনে নেয় না নীরব।
সেদিন অনেক কষ্টে রাজি করতে পেরেছিল নীরবকে।
পালিয়ে যাবার দিন মধু ধরা পরে যায়।মেয়ে পালিয়ে যাবে জানতে পেরে মধুর মা হার্ট এ্যাটাক করে হাসপাতালে ভর্তি। জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের মাঝেই মেয়েকে দিয়ে পণ করিয়ে নিলেন যেন মেয়ে তাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে নেয়।
নীরবঃ আসলে না কেন সেদিন?
মধুঃ মা জেনে গিয়ছিলো।স্ট্রোক করায় হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। আমার ফোনটাও রেখে দিয়েছে।
নীরবঃ বিয়েও নিশ্চয় ঠিক করেছে?
মধুর চোখের জল আর নীরবতায় উত্তর খুঁজে পেলো নিয়াজ।৬ বছরের ভালোবাসা আজ হারিয়ে যাচ্ছে জেনেও এক ফোঁটা চোখের জল বেরোয়নি।
মধুর বিয়ে হয়েছে আজ চার বছর হলো। দেখতে ঠিক মায়ের মতো হয়েছে মধুর মেয়ে।
চার বছর প্রতিদিন নীরব মধুকে মেসেজ করেছে।তবে বারণ করেছিল মধু যেনো উত্তর না দেয়।
হয়ত সমাজের রূঢ় নিয়মের কাছে তারা হেরে যায়। সারাজীবন একসাথে থাকার স্বপ্ন পূরণ হলো না, তবে তাদের ভালোবাসা হেরে যায়নি।কেননা তারা ভিন্ন ধর্মের ছিল না,তাদের ধর্ম ছিল ভালোবাসা।
আমরা ভালোবাসার পূর্ণতা খুঁজে বেড়াই সারাজীবন একসাথে থাকার মাঝে।আসলেই কি একসাথে থাকাতেই ভালোবাসার স্বার্থকতা?
নীরব আর মধুর মতো অনেকেই হারিয়ে ফেলে ভালোবাসার মানুষটিকে।তবুও তাদের ভালোবাসা হারিয়ে যায় না।